সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনা মহামারির পরে খাদ্য সংকটের আশংকা :

করোনা মহামারির পরে খাদ্য সংকটের আশংকা :

করোনা ভাইরাসের কারনে চলছে লাগাতার লকডাউন । যে কারণে স্থবিরতা বিরাজ করছে সর্বত্র । কৃ্ষি, ডেইরী এবং মৎস্য সেক্টরে যে সকল সমস্যা মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে জানা যায় এবং তার সমাধান কি ?


মাছের পোনা প্রাপ্তিতে সমস্যা - ভবিষ্যৎ মাছের চাহিদা পূরনের জন্য প্রথম প্রয়োজন পোনা সরবরাহ যেটি এখন বন্ধ। হ্যাচারি থেকে পোনা আসছে না।




প্রস্তাবিত সমাধান - মন্ত্রাণালয় থেকে অনুমতি দিলেও রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা এবং লকডাউনের কারনে চাষীর পুকুরে মাছের পোনা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ।

হ্যচারী বন্ধ হওয়া - হ্যচারীগুলোর পোনা বাজারে বিক্রি না হওয়ায় হ্যচারীগুলো অার্থিক সংকটে পড়েছে । অনেক হ্যাচারী উৎপাদন বন্ধ রেখে কর্মি ছাটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে। একারণে সার্বিকভাবে হ্যচারির প্রোডাকশন কমে যাচ্ছে । পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও হয়তো পোনা সরবরাহ করা কঠিন হবে অথবা সম্ভব হবেনা ।


প্রস্তাবিত সমাধান - অবশ্যই হ্যাচারীগুলোকে সচল রাখা এবং স্বাভাবিক উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার জণ্য এখনই জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ ।

মৎস্য খামারিরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন : একদিকে মাছ বিক্রি করতে পারছেনা। পাইকারী বেশীরভাগ আড়ৎ বন্ধ । আবার বাজারে মাছের খাবারের দোকান বন্ধ। এ অবস্থায় মাছের চলতি উৎপাদন ঝুঁকির মুখোমুখি । বড় সমস্যা হবে তখন, যখন মাছের চাহিদা বাড়বে কিন্তু মাছ পাওয়া যাবে না। টাকা থাকলেও মানুষ মাছ পাবে না।

প্রস্তাবিত সমাধান - মৎস্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা । এবং সুদহীন অথবা ২% সরল সুদে দ্রুত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা । জাতে মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে অর্থনৈতিক সংকটে না পরে । এবং খামারের মাছ মজুদ করে রাখতে পারে ।

ডেইরী ও পোল্ট্রি খামারিরা লোকসানের মুখে: খামারি ভাইয়েরা তাদের উৎপাদিত দুধ ডিম উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম মূল্যে অর্থাৎ লোকসানে বিক্রয় করছে । কোন কোন ক্ষেত্রে বিক্রয় করতেই পারছেনা । প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লিটার দুধ নষ্ট হচ্ছে । গো-খাদ্য ক্রয় করে গরুর জীবন বাঁচিয়ে রাখা অনেক খামারির জণ্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে । তাই অর্থাভাবে অনেক প্রান্তিক খামারি তাদের গরু বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনেকেই খামার বন্ধ করে দেয়ার কথা চিন্তা করছে । পোল্ট্রি খামারের একই দশা । যার ফলে দুধ ও ডিম উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ।


প্রস্তাবিত সমধান --- মাননীয় প্রধামমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ সুদবিহীন অথবা ২% সরল সুদে দ্রুত প্রকৃত প্রান্তিক খামারিদের জণ্য ঋণের ব্যবস্থা করা । পোল্ট্রি ও গো-খাদ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ।


কৃষক উদ্বিগ্ন : বোরো মৌসুম চলছে । কৃষক এখন ধান কাটা নিয়ে বেশী উদ্বিগ্ন । পাশাপাশি ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা । গতো বোরো মৌসুমে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা মন দরে ধান বিক্রয়ের কারণে উৎপাদন খরচই তুলতে পারেনি কৃষক । যেকারণে চলতি বোরো মৌসুমে অনাবাদী জমির সংখ্যা ( বরিশাল জেলায় ) বেড়েছে ।


সবজি চাষীরা উৎপাদিত সবজি চালান করতে না পারায় স্থানীয় বাজারেই পানির দরে বিক্রয় করছে । গ্রামের বাজারে বেশীরভাগ সবজির প্রতি কেজি খুচরা মূল্যে ২০ টা
কার নিচে। এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সবজি চাষীরা । পাশাপাশি মুদি বাজারের ক্রমাগত উর্ধগতি কৃষকের জীবনে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে । টানা লোকসানে পরে কৃষকেরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে । যার ফলে এক দীর্ঘ্য মেয়াদী কুফল অর্থাৎ কৃ্ষি পণ্য উৎপাদনে ঘাটতি তৈরী হতে পারে । দেখা দিতে পারে খাদ্য ঘাটতি । যেটা মোটেই সুখের বিষয় নয় বরং শঙ্কার ।


প্রস্তাবিত সমধান : প্রতি ইউনিয়ন পর্যায়ে সরাসরি সেনাবাহিনী এবং কৃ্ষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গতো মৌসুমের চেয়ে কিছুটা মূল্য এবং দ্বিগুণ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে নগদ অর্থে ধান ক্রয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি । পরবর্তী মৌসুমের জণ্য বীজ, সার, কীটনাশক বিনামূল্যে সরবরাহ করা । প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কৃষকের খাদ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুব্যস্থা করা । সুদবিহীন সরল সুদের ব্যবস্থা করা ।

আমি একজন অতি নগণ্য খামারী । তবে অনেক দিন ধরেই কৃষির সঙ্গে আছি । হাজারো কৃষককে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে বিধায় তাদের চোখের লোনা জলের ভাষা গুলো সহজেই শুনতে পাই । আর সেই অভিজ্ঞতা এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি অনুধাবন করে বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরে কয়েকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করলাম । জানিনা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের মেধাহীন চিন্তা-চেতনা কৃষক বা রাষ্ট্রের কোন উপকারে আসবে কিনা ? আমার এই চিৎকার রাষ্ট্রের কানে পৌঁছুবে কিনা ? যদি পৌছে, তবে নিজেকে অতীব ভাগ্যবান মনে করবো ।

আমার প্রাণপ্রিয়, মাথার তাজ কৃষক ভাইয়েরা, বিভিন্ন কারণে লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্ত আজ আমরা মহা সংকটে । জাতী বিপদগ্রস্থ । তাই চুপ করে থাকতে পারলাম না ।

আমার শ্রদ্ধেয় কৃষক সমাজ, আমার আত্মার স্পন্দন, আপনারা নিজেদের সকল কষ্ট ভুলে ফসলের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ুন । হাজারো অপমান অবহেলা সহ্য করে আজীবন তো সেটাই করেছেন । আজ আরো একবার মাঠে মাঠে নিজেদের সর্বোচ্চ টুকু ঢেলে দেন । শরীরের ঘামে মাটিতে সোনার ফসল ফলিয়ে খাঁটি, নির্লোভ দেশপ্রেমিক হিসেবে আরো একবার অবদান রাখুন। লিখতে গিয়ে কোন ভুল হলে আমায় ক্ষমা করবেন । আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন ---চাষা আলামিন জুয়েল ॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...