সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি:

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি:


মরিচ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় মসলা জাতীয় ফসল। তরকারিকে সুস্বাদু করতে মরিচ ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া ঝাল হিসেবে নানান খাবারে এর ব্যবহার হয়। এর বাজারমূল্যও ভাল। তাই কীভাবে মরিচ উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে হয় তা আলোচনা করা হল-

মাটি ও জলবায়ু:
পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত আলো বাতাসময় উর্বর দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভাল হয়। অতিরিক্ত অম্ল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মরিচ জন্মে। মরিচ গাছে ফুল ধরার সময় ৩৫ থেকে ৪৫ সে. তাপমাত্রা সর্বাপ্রেক্ষা উপযোগী। অধিক বৃষ্টিপাত ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফুল ঝরে পড়ে।


Green Chilly

https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_21.html

জাত:
মরিচকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ঝাল ও মিষ্টি। বাংলাদেশে ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী ইত্যাদি আঞ্চলিক মৌসুমী জাত আছে। এছাড়া আকালী, কামরাংগা, কালো ইত্যাদি মরিচও খুব ঝাল। আঞ্চলিকভাবে আরো বিভিন্ন নামের যেমন- ছোট মরিচ, বড় মরিচ, ধানী মরিচ, সাহেব মরিচ, বোম্বাই মরিচ, গোল মরিচ, মেজর মরিচ, সনিক মরিচ, যমুনা মরিচ, বালিঝুরা মরিচ, পাটনাই মরিচ, রাঁচি মরিচ, সূর্যমুখী ও বারি মরিচ চাষ হয়ে থাকে।

চারা উত্পাদন পদ্ধতি:
ভাল চারার জন্য প্রথম বীজতলায় চারা গজিয়ে দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। প্রতিটি বীজতলা জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা, ১ মিটার বা সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ এবং ৪০ সেমি. বা ১৬ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে। বীজতলার উপরের মাটিতে বালি ও কম্পোস্ট বা শুকনো পচা গোবর সার পরিমাণমত মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। একবিঘা জমির চারার জন্য ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজতলা জীবাণুমুক্ত করণ:
সূর্যের আলোতে শুকিয়ে বীজতলা শোধন করা। এ পদ্ধতিতে বীজতলা ভালভাবে কোপানোর পর সমতল করে সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন সিটের উপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভেতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টি হবে তাতে ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো মারা যাবে। এছাড়া তাপবৃদ্ধির ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজবপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোঁদাল কোপালে ধীরে ধীরে সরে যাবে। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা-মাকড় মারা যাবে অন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবাণুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।

বীজ শোধন ও পানিতে ভেজানো:
ভালভাবে বীজ গজানোর জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নীরোগ চারা উত্পাদনের জন্য বপনের ৬ ঘণ্টা আগে প্রোভেক্স বা ক্যাপটান (১ গ্রাম/৫০০ গ্রাম বীজের) দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।

বীজ বপণ ও চারা রোপণ:
বর্ষা মৌসুমের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। ঝাল মরিচ বছরের প্রায় যেকোনো সময়ই জন্মে এবং মিষ্টি মরিচ রবি মৌসুমেই ভাল হয়। যখন চারা প্রায় ১০ সে.মি. বা ৪ ইঞ্চি উঁচু হয় তখন জমিতে ৬০ থেকে ৭০ সে.মি. বা ২৫ থেকে ৩০ ইঞ্চি দূরত্বে সারিতে চারা রোপণ করতে হয় এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সে.মি. বা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি।

বীজ ফসলের জন্য নিরাপদ দূরত্ব:
মরিচ স্বপরাগায়িত জাত। তবে কিছু কিছু জাতে প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত পরাগায়ণ হতে পারে। এ কারণে মানসম্পন্ন বীজ উত্পাদন করতে হলে বীজ ফসলের জমির চার পাশে অন্তত ৪০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের মরিচ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে অল্প পরিমাণ বীজের জন্য ক্ষেতের সুস্থ সবল নির্বাচিত গাছের ফুল স্বপরাগায়িত করে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। স্বপরাগায়ণের জন্য সাদা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ফুল ফোটার আগেই ঢেকে দিতে হবে।

জমি চাষ ও সার প্রয়োগ:
মাটি ও জমির প্রকারভেদে জমিতে ৪ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিতে হয়। প্রথম চাষ গভীরভাবে হওয়া দরকার। জমি তৈরির সময় বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ১২০০ থেকে ১৩০০ কেজি জৈব সার, ৪০ কেজি টিএসপি, ৬ কেজি এমওপি এবং ১৫ কেজি জিপসাম সার মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ২৫, ৫০ ও ৭০ দিন পর প্রতি কিস্তিতে ইউরিয়া ৯ কেজি এবং এমওপি ৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্চা:
সময়মত আগাছ দমন করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় সম্ভব হলে ক্ষেতে পানি সেচ দিতে হবে।

পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন:
মরিচের ক্ষেতে সাধারণত মাইট ও থ্রিপসের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। ওমাইট/ম্যালাথিয়ন/ পারফেকথিয়ন/মেটাসিসটক্স ১ চা চামচ ৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে সেপ্র করে এসব পোকা দমন করা যায়। রোগ-বালাইয়ের মধ্যে উইল্টিং, এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক ও ভাইরাস রোগ প্রধান। উইল্টিং রোগের জন্য রিডোমিল এমজেড ৭২, ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ তলায় ৭ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার সেপ্র করে দমন রাখা যায়। এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে টিল্ট নামক ছত্রাকনাশক ১ চা চামচ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ থেকে ৩ বার সেপ্র করতে হবে। ভাইরাস রোগ বিস্তারের বাহক সাদা মাছি ডায়াজিনন ২ চা চামচ ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে দমন করা যায়।

মরিচ সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ:
গাছে মরিচ যখন পুরোপুরি পাকে সেই অবস্থায় উঠানো উচিত। পরিপক্ক, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পাকা মরিচ কেটে ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে না এমন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

তথ্য : কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম।

আধুনিক কৃষিতে বদলে যাক আমাদের দেশের অর্থনীতি-- চাষা আলামিন জুয়েল।

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Strange "water hack" burns 2 lbs in your sleep

More than 160 thousand men and women are trying a simple and secret "liquid hack" to drop 1-2 lbs each night as they sleep.

It is easy and it works every time.

You can do it yourself by following these easy steps:

1) Grab a glass and fill it half glass

2) And then learn this strange HACK

so you'll become 1-2 lbs thinner the next day!

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...