কৃষিকে ঘিরেই সভ্যতার জাগরণ শুরু-----
কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি। কৃষিকে ঘিরেই মানুষের সভ্যতার জাগরণ শুরু। ‘কৃষি’ পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি ক্ষেত্রে কৃষির বিকল্প নেই। কৃষি পৃথিবীর মূূল চালিকা শক্তি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের অধিকাংশ উপাদান আসে কৃষি থেকে। বিশেষ করে খাদ্য ছাড়া জীবন বাঁচানো যায় না। খাদ্যের একমাত্র উৎস কৃষি।
কৃষিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কৃষক ও কৃষি গবেষকগণ। দেশে সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন হয়েছে কৃষিতে। গত ৪৫ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। জমি কমেছে অথচ খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। প্রতি ১ শতাংশ হারে বছরে ৫০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমছে। জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হারে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণের জন্য কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। রোদ-বৃষ্টি, শীত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অভাব-অনটন, ক্ষুধাসহ হাজারো সমস্যা উপেক্ষা করে খাদ্য উৎপাদন করছেন দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য। অথচ তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। কৃষক"ই সমাজের সবথেকে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। গত ৪৫ বছরে কৃষিতে অনেক উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি কৃষকের।
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকই দরিদ্র। যার অর্ধেক চরম দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। যার প্রায় ১৯ শতাংশ দিনে তিনবেলা খাবার খেতে পারে না। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ পরিবার বছরে মাসাধিককাল ধরে শুধু এক বা দুবেলা খেতে পারে।
কৃষির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। কারণ সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির সব পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ যেমন শাকসবজি, ফুল-ফল, মসলা, মৌ, মাশরুম ও রেশম চাষ, বীজ উৎপাদন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, গাভী পালন, মহিষ পালন, ব্রয়লার- লেয়ার পালন, কোয়েল, কবুতর, হাঁস ও রাজহাঁস পালন, বাচ্চা উৎপাদন, মাছ চাষ, চিংড়ি চাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ, পোনা উৎপাদন, নার্সারি, সামাজিক বনায়ন, জৈব সার ও বায়োগ্যাস তৈরিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে দ্রুত ও সহজে দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক সুরক্ষা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। নিচে এগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো—
ফুল চাষ: যেকোনো ফসলের চেয়ে ফুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি। উৎপাদন সময় কম লাগে, ঝামেলাও কম। এক বিঘা জমিতে একবার গাদা ফুল চাষে আনুমানিক লাভ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা,গ্লাডিওলাস চাষে লাভ হয় ৭০ হাজার টাকা,রজনীগন্ধা চাষে লাভ হয় ৬০ হাজার টাকা। যেকোনো ফুল চাষে খরচ বাদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ হতে পারে। ফুল চাষ করলে একটি জমিতে এক বছরে চারটি ফসল চাষ করা যায়।
ফল চাষ: ফলগাছ একবার রোপণ করলে ১৫-২০ বছর ফল ধরে। এক বিঘা জমিতে বারিকুল বা বাউকুল চাষ করলে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। প্রতি বিঘায় ১০০টি পেয়ারা গাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। পেঁপে, লেবু, লিচু, কলা, আমসহ বিভিন্ন ফল চাষ করে আয় করা যায়।
শাকসবজি চাষ: মৌসুমের শুরুতে টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বেগুন, শিম, করলা, বরবটি, লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, পাটশাক ইত্যাদি চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
মসলাজাতীয় ফসল: মসলা চাষে উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। প্রতি একরে আদা চাষে প্রায় ৩ লাখ, হলুদ চাষে প্রায় ৬ লাখ টাকাসহ পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও ধনে চাষেও প্রচুর লাভ হয়।
গরু মোটাতাজাকরণ: গরু মোটাতাজাকরণে অল্প সময়ে লাভ বেশি হয়। বিশেষ করে ঈদুল আজহার সময়ে। ৩৫-৪০ হাজার টাকা দিয়ে উন্নত জাতের ষাঁড় বাছুর ক্রয় করে ৬ মাস খাওয়ালে ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়।
গাভী পালন: দুধের দাম বেশি হওয়ায় গাভী পালন করে দুগ্ধ খামার করলে লাভবান হওয়া যায়। এক বছর বয়সের উন্নত জাতের একটি বকনা কিনে এক থেকে দুই বছর পালন করে প্রজনন করালে ১০ মাস পরে বাচ্চা দেয়। দৈনিক ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধের দাম ৫০ টাকা হলে ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
ছাগল পালন: ছয় মাস বয়সী ছাগলের বাচ্চা ক্রয় করে ছয় মাস পালন করে প্রজনন করালে দু-চারটা বাচ্চা দেয়। এ বাচ্চাগুলো এক বছর পালন করলে প্রতিটা ৫-৬ হাজার টাকা বিক্রির উপযোগী হয়। এর মধ্যে মা ছাগী ৮ মাস পর পর বাচ্চা দেয়। প্রতি ৮-৯ মাস পর পর দু-চারটা করে বাচ্চা দেয় বলে লাভ বেশি।
পোলট্রি খামার: ব্রয়লার ও লেয়ার খামার করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খামারে দুই মাস পর পর ব্রয়লার উৎপাদন করা যায়। পাঁচ মাস পর থেকে লেয়ার ডিম উৎপাদন শুরু হলেও তা লাভজনক।
কবুতর ও কোয়েল পালন: একজোড়া কবুতর ১২ মাসে সাত-আট জোড়া বাচ্চা দেয়। একজোড়া বাচ্চার দাম ২০০-২৫০ টাকা। কবুতর ও কোয়েল পালনে খরচ কম লাভ বেশি।
হাঁস ও রাজহাঁস পালন: উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পাতিহাঁস ও রাজহাঁস পালনে খাওয়ার খরচ কম বলে লাভ বেশি। ১০০ পাতিহাঁস পালন করলে দৈনিক ৬০-৭০টি ডিম পাওয়া যায়। বয়স্ক হাঁস বিক্রি করা যায়। রাজহাঁস আকারে বড় ও বেশিদিন বাঁচে বলে পালন করা লাভজনক।
হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন: একটি ইনকিউবেটর দিয়ে শত শত মুরগি ও হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। গ্রামে হাঁস-মুরগির খামারের জন্য বাচ্চা দূর-দূরান্তের জেলা শহর থেকে কিনে নিতে হয়। গ্রামেই ইনকিউবেটরে বাচ্চা উৎপাদন করে আয় উপার্জন করা সম্ভব।
মাছ চাষ: মজুদ পুকুর, মজা পুকুর, ধানক্ষেতে, ঘেরে, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ চাষ করে আয় করা যায়। বাজারে মাছের চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়া যায়। পুকুর লিজ বা ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ করা যায়। মাছের পোনা উৎপাদনও খুব লাভজনক।
সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি: পতিত জমিতে, রাস্তার পাশে, খালি জায়গায় ফল, কাষ্ঠল ও ভেষজ গাছ রোপণ করেও আয় করা যায়। সামাজিক বনায়নে সরকার বা এনজিও উপকারভোগীদের গাছ বিক্রির ৬০ শতাংশ দেয়। নার্সারিতে ফল, ফুল, কাষ্ঠল ও ভেষজ গাছের চারা উৎপাদন করেও আয় উপার্জন করা যায়।
অন্যান্য ক্ষেত্রে: মৌ চাষ করে মধু উৎপাদন লাভজনক। ১০টি বাক্স থেকে মৌসুমের সাত মাস ৫০-৬০ হাজার টাকার মধু উৎপাদন করা যায়। ঘরের ভেতরে মাশরুম চাষ করে দু-তিন মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। ১০-১৫ দিন পর পর মাশরুম উৎপাদন হয়। পুঁজি কম লাভ বেশি। রেশম চাষ করে প্রতি বিঘায় প্রতিটি ব্যাচে বছরে ৩০-৩২ হাজার টাকা আয় করা যায়। জৈব সার, কম্পোস্ট, কেঁচো কম্পোস্ট প্রভৃতি উৎপাদন করেও উপার্জন করা যায়। এগুলো থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার তৈরি হয়। এছাড়া কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ করেও আয়-উপার্জনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন: মানুষ যখন কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আয় উপার্জন করবে তখন কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মানুষ কৃষিকাজ নিয়ে আয় উপার্জনে ব্যস্ত থাকলে অসামাজিক কাজ যেমন— চুরি, ডাকাতি, মাস্তানি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, রাহাজানি ইত্যাদি খারাপ কাজ করার সময় পাবে না। ফলে সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন হবে।
মূলধনের উৎস ও কারিগরি জ্ঞান:
#বাণিজ্যিক, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সব ব্যাংক অল্প সুদে সহজ শর্তে কৃষিঋণ দেয়। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন । কৃষকের পক্ষে সহজ শর্তে ঋন পাওয়া অমাবস্যার চাঁদের মতো ।
#অবশ্য বিভিন্ন এনজিও, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে কিন্ত চড়া সুদে ঋণ দেয়।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষির নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় কৃষির প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কৃষিতথ্য সার্ভিসের ২৪৫টি কৃষিতথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র, কৃষি কলসেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র, কৃষি-বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট, টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা থেকেও কৃষি বিষয়ক কারিগরি জ্ঞান নেয়া যায়।
তবে মূল কথা হলো , কৃষক যে কোন ধরনের পণ্যই উৎপাদন করুক না কেন, তার যথাযথ বাজার ব্যবস্থা না থাকলে কোনই লাভ হবেনা। আর এজন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের তড়িৎ, কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
কৃতজ্ঞতা : কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ।
#সকলের জন্য শুভকামনায় -- চাষা আলামিন জুয়েল॥
কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি। কৃষিকে ঘিরেই মানুষের সভ্যতার জাগরণ শুরু। ‘কৃষি’ পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি ক্ষেত্রে কৃষির বিকল্প নেই। কৃষি পৃথিবীর মূূল চালিকা শক্তি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের অধিকাংশ উপাদান আসে কৃষি থেকে। বিশেষ করে খাদ্য ছাড়া জীবন বাঁচানো যায় না। খাদ্যের একমাত্র উৎস কৃষি।
কৃষিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কৃষক ও কৃষি গবেষকগণ। দেশে সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন হয়েছে কৃষিতে। গত ৪৫ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। জমি কমেছে অথচ খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। প্রতি ১ শতাংশ হারে বছরে ৫০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমছে। জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হারে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণের জন্য কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। রোদ-বৃষ্টি, শীত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অভাব-অনটন, ক্ষুধাসহ হাজারো সমস্যা উপেক্ষা করে খাদ্য উৎপাদন করছেন দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য। অথচ তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। কৃষক"ই সমাজের সবথেকে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। গত ৪৫ বছরে কৃষিতে অনেক উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি কৃষকের।
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষকই দরিদ্র। যার অর্ধেক চরম দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। যার প্রায় ১৯ শতাংশ দিনে তিনবেলা খাবার খেতে পারে না। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ পরিবার বছরে মাসাধিককাল ধরে শুধু এক বা দুবেলা খেতে পারে।
কৃষির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। কারণ সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির সব পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ যেমন শাকসবজি, ফুল-ফল, মসলা, মৌ, মাশরুম ও রেশম চাষ, বীজ উৎপাদন, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, গাভী পালন, মহিষ পালন, ব্রয়লার- লেয়ার পালন, কোয়েল, কবুতর, হাঁস ও রাজহাঁস পালন, বাচ্চা উৎপাদন, মাছ চাষ, চিংড়ি চাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ, পোনা উৎপাদন, নার্সারি, সামাজিক বনায়ন, জৈব সার ও বায়োগ্যাস তৈরিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে দ্রুত ও সহজে দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক সুরক্ষা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। নিচে এগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো—
ফুল চাষ: যেকোনো ফসলের চেয়ে ফুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি। উৎপাদন সময় কম লাগে, ঝামেলাও কম। এক বিঘা জমিতে একবার গাদা ফুল চাষে আনুমানিক লাভ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা,গ্লাডিওলাস চাষে লাভ হয় ৭০ হাজার টাকা,রজনীগন্ধা চাষে লাভ হয় ৬০ হাজার টাকা। যেকোনো ফুল চাষে খরচ বাদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ হতে পারে। ফুল চাষ করলে একটি জমিতে এক বছরে চারটি ফসল চাষ করা যায়।
ফল চাষ: ফলগাছ একবার রোপণ করলে ১৫-২০ বছর ফল ধরে। এক বিঘা জমিতে বারিকুল বা বাউকুল চাষ করলে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। প্রতি বিঘায় ১০০টি পেয়ারা গাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। পেঁপে, লেবু, লিচু, কলা, আমসহ বিভিন্ন ফল চাষ করে আয় করা যায়।
শাকসবজি চাষ: মৌসুমের শুরুতে টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বেগুন, শিম, করলা, বরবটি, লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, পাটশাক ইত্যাদি চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
মসলাজাতীয় ফসল: মসলা চাষে উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। প্রতি একরে আদা চাষে প্রায় ৩ লাখ, হলুদ চাষে প্রায় ৬ লাখ টাকাসহ পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও ধনে চাষেও প্রচুর লাভ হয়।
গরু মোটাতাজাকরণ: গরু মোটাতাজাকরণে অল্প সময়ে লাভ বেশি হয়। বিশেষ করে ঈদুল আজহার সময়ে। ৩৫-৪০ হাজার টাকা দিয়ে উন্নত জাতের ষাঁড় বাছুর ক্রয় করে ৬ মাস খাওয়ালে ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়।
গাভী পালন: দুধের দাম বেশি হওয়ায় গাভী পালন করে দুগ্ধ খামার করলে লাভবান হওয়া যায়। এক বছর বয়সের উন্নত জাতের একটি বকনা কিনে এক থেকে দুই বছর পালন করে প্রজনন করালে ১০ মাস পরে বাচ্চা দেয়। দৈনিক ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধের দাম ৫০ টাকা হলে ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
ছাগল পালন: ছয় মাস বয়সী ছাগলের বাচ্চা ক্রয় করে ছয় মাস পালন করে প্রজনন করালে দু-চারটা বাচ্চা দেয়। এ বাচ্চাগুলো এক বছর পালন করলে প্রতিটা ৫-৬ হাজার টাকা বিক্রির উপযোগী হয়। এর মধ্যে মা ছাগী ৮ মাস পর পর বাচ্চা দেয়। প্রতি ৮-৯ মাস পর পর দু-চারটা করে বাচ্চা দেয় বলে লাভ বেশি।
পোলট্রি খামার: ব্রয়লার ও লেয়ার খামার করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খামারে দুই মাস পর পর ব্রয়লার উৎপাদন করা যায়। পাঁচ মাস পর থেকে লেয়ার ডিম উৎপাদন শুরু হলেও তা লাভজনক।
কবুতর ও কোয়েল পালন: একজোড়া কবুতর ১২ মাসে সাত-আট জোড়া বাচ্চা দেয়। একজোড়া বাচ্চার দাম ২০০-২৫০ টাকা। কবুতর ও কোয়েল পালনে খরচ কম লাভ বেশি।
হাঁস ও রাজহাঁস পালন: উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পাতিহাঁস ও রাজহাঁস পালনে খাওয়ার খরচ কম বলে লাভ বেশি। ১০০ পাতিহাঁস পালন করলে দৈনিক ৬০-৭০টি ডিম পাওয়া যায়। বয়স্ক হাঁস বিক্রি করা যায়। রাজহাঁস আকারে বড় ও বেশিদিন বাঁচে বলে পালন করা লাভজনক।
হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন: একটি ইনকিউবেটর দিয়ে শত শত মুরগি ও হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। গ্রামে হাঁস-মুরগির খামারের জন্য বাচ্চা দূর-দূরান্তের জেলা শহর থেকে কিনে নিতে হয়। গ্রামেই ইনকিউবেটরে বাচ্চা উৎপাদন করে আয় উপার্জন করা সম্ভব।
মাছ চাষ: মজুদ পুকুর, মজা পুকুর, ধানক্ষেতে, ঘেরে, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ চাষ করে আয় করা যায়। বাজারে মাছের চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়া যায়। পুকুর লিজ বা ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ করা যায়। মাছের পোনা উৎপাদনও খুব লাভজনক।
সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি: পতিত জমিতে, রাস্তার পাশে, খালি জায়গায় ফল, কাষ্ঠল ও ভেষজ গাছ রোপণ করেও আয় করা যায়। সামাজিক বনায়নে সরকার বা এনজিও উপকারভোগীদের গাছ বিক্রির ৬০ শতাংশ দেয়। নার্সারিতে ফল, ফুল, কাষ্ঠল ও ভেষজ গাছের চারা উৎপাদন করেও আয় উপার্জন করা যায়।
অন্যান্য ক্ষেত্রে: মৌ চাষ করে মধু উৎপাদন লাভজনক। ১০টি বাক্স থেকে মৌসুমের সাত মাস ৫০-৬০ হাজার টাকার মধু উৎপাদন করা যায়। ঘরের ভেতরে মাশরুম চাষ করে দু-তিন মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। ১০-১৫ দিন পর পর মাশরুম উৎপাদন হয়। পুঁজি কম লাভ বেশি। রেশম চাষ করে প্রতি বিঘায় প্রতিটি ব্যাচে বছরে ৩০-৩২ হাজার টাকা আয় করা যায়। জৈব সার, কম্পোস্ট, কেঁচো কম্পোস্ট প্রভৃতি উৎপাদন করেও উপার্জন করা যায়। এগুলো থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার তৈরি হয়। এছাড়া কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ করেও আয়-উপার্জনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন: মানুষ যখন কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আয় উপার্জন করবে তখন কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মানুষ কৃষিকাজ নিয়ে আয় উপার্জনে ব্যস্ত থাকলে অসামাজিক কাজ যেমন— চুরি, ডাকাতি, মাস্তানি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, রাহাজানি ইত্যাদি খারাপ কাজ করার সময় পাবে না। ফলে সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন হবে।
মূলধনের উৎস ও কারিগরি জ্ঞান:
#বাণিজ্যিক, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সব ব্যাংক অল্প সুদে সহজ শর্তে কৃষিঋণ দেয়। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন । কৃষকের পক্ষে সহজ শর্তে ঋন পাওয়া অমাবস্যার চাঁদের মতো ।
#অবশ্য বিভিন্ন এনজিও, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে কিন্ত চড়া সুদে ঋণ দেয়।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষির নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় কৃষির প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কৃষিতথ্য সার্ভিসের ২৪৫টি কৃষিতথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র, কৃষি কলসেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র, কৃষি-বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট, টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা থেকেও কৃষি বিষয়ক কারিগরি জ্ঞান নেয়া যায়।
তবে মূল কথা হলো , কৃষক যে কোন ধরনের পণ্যই উৎপাদন করুক না কেন, তার যথাযথ বাজার ব্যবস্থা না থাকলে কোনই লাভ হবেনা। আর এজন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের তড়িৎ, কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
কৃতজ্ঞতা : কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ।
#সকলের জন্য শুভকামনায় -- চাষা আলামিন জুয়েল॥

মন্তব্যসমূহ