সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
শীতকালীন আবাদ --CAJ ৩য় পর্ব :

ঢেঁড়শ/ভেন্ডি চাষ পদ্ধতি----

CAJ ভূমিকা --- ঢেড়শ কে ইংরেজিতে বলা হয় ওকরা (Okra)। আর  আমেরিকার বাইরের ইংরেজি ভাষীদের কাছে এটি লেডিজ ফিঙ্গার (Lady's Fingers) নামে পরিচিত। ঢেঁড়শ (ভেন্ডি) Malvaceae পরিবারের এক প্রকারের স-পুষ্পক উদ্ভিদ। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus অথবা Hibiscus esculentus L। ঢেঁড়শ একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর গ্রীষ্মকালীন সবজি। আমাদের দেশে সাধারণত মাঘ মাসের শুরু থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ সবজির চাষ বেশী হয়, তবে পুরো বছর জুড়ে চাষ করা যায়। ঢেঁড়শের বিভিন্ন জাতগুলোর মধ্যে বারি-১, পুষা শ্রাবণী, প্রভাতী ক্রান্তি, অর্কা-অনামিকা উল্লেখযোগ্য। এ জাতগুলোর মধ্যে পুষা শ্রাবণী স্বল্প মেয়াদি। এছাড়া আমাদের দেশিও আরো কিছু জাত রয়েছে।


জমি প্রস্তত--- ঢেঁড়শ চাষের জন্য সব সময় নতুন বীজ ব্যবহার করা ভাল। এতে কৃষক লাভবান হবে। ঢেঁড়শ চাষের জন্য আলো-বাতাস পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি উঁচু হবে এবং পানি নিকাশের ভাল সুবিধা থাকতে হবে। বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেলে সব ধরনের মাটিতেই ঢেঁড়শের চাষ হলেও দো-আঁশ মাটি-ই ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। কয়েকবার চাষ দেবার পর শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি ১০ কুইন্টাল শুকনো গোবর অথবা যে কোন জৈব সার, ৪০ কেজি ফসফেট ভালভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া পোকা-মাকড় ঠেকাতে মাটিতে শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি আড়াই কিলোগ্রাম ম্যালাথিয়ন ৫ শতাংশ গুঁড়ো কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হবে। জৈব বালাইনাশক ব্যবস্থা হিসেবে চাষের সময় নিমপাতা মেশালেও মাটিতে থাকা কীটপতঙ্গ দমন হবে।

রোপণ পদ্ধতি --- জমিতে বীজ রোপণের ৪০ দিন পর বিঘা প্রতি ৬ কেজি ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ঢেঁড়শের চারাগুলো ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি হয়ে যাওয়ার পর প্রতি চারায়  ২৫-৫০ গ্রাম পরিমাণে কেঁচো সার সারির দু’দিক থেকে গোঁড়ায় দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।

এছাড়া অধিক উৎপাদনের জন্য "এজটবেকটার" ও "সফটিকা" নামক জীবাণু সারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বিঘাপ্রতি ফলন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ঢেঁড়শের বীজ জমিতে লাগানোর আগে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর অঙ্কুরোদগম হলে সারিতে লাগাতে হবে। ঢেঁড়শ চাষে দু’টি সারির মধ্যে এক ফুট ও দুটি বীজের মধ্যে ৬ ইঞ্চি ব্যবধান রাখতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা ---পরিচর্যার ভেতরে আগাছা পরিস্কার করে গাছ থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার দূরে প্রতি বিঘায় ৬ কেজি হিসেবে ইউরিয়া সার টপড্রেস হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। ঢেঁড়শ চাষে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ঘটলে ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি নামক ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে এক চামচ হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ায় ঢেঁড়শ আক্রমণ করলে ডায়াথিন এম-৪৫, পেকটাফ, ব্লাইটক্স প্রভৃতি ওষুধ ৪০ গ্রাম করে ১৬ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

সতর্কতা --কীটনাশক প্রয়োগের পর এক সপ্তাহ ক্ষেত থেকে ঢেঁড়শ তোলা যাবে না।
( তথ্য --সংগৃহীত ও সংকলিত )

#সকল কৃষক বন্ধুদের জন্য শুভ কামনায় ---চাষা আলামীন জুয়েল .

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...