CAJ-চাষা একটি শব্দ,একটি স্বপ্ন :
গালি থেকে গর্ব ---
'চাষা' শব্দের আদ্যপান্ত খুঁজতে গিয়ে আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে যা বুঝলাম, তা হলো এর উত্পত্তি 'চাষ' শব্দ থেকে । চাষ +আ = চাষা । বাংলা অভিধানে এসেছে এভাবে , 'কৃষিকম্মকারী'-- কর্ষক, কৃষাণ , চাষা । ডিকশনারীতে এসেছে এভাবে , চাষা - বিশেষ্য পদ = যে চাষ করে , কৃষক ,মূর্খ, অভদ্র । এছাড়া বাংলা প্রবাদ বাক্যে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে , যেমন --- আশায় বাঁচে চাষা । এ শব্দটি আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করার পরে অনেক বিজ্ঞ ব্ন্ধু আমায় ব্যক্তিগত ভাবে এই পরামর্শ দিয়েছেন যে , চাষা -- এটা কোন শব্দ নয় , বরং আপনি চাষী শব্দটা ব্যবহার করতে পারেন । আমি তাদের অবশ্য এই শব্দটি ব্যবহারের কারণ ব্যখ্যা করিনি, তবে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ্ । তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসছি ।
চাষা-- শব্দটি আমাদের বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি কবিতায় ব্যবহার করেছেন - 'সব সাধকের বড় সাধক , আমার দেশের চাষা' ।
আবার একই কবিতার অন্য অংশে --' চাষী ওরা নয়কো চাষা, নয়কো ছোটলোক' ।
এছাড়া আরো অনেক বিখ্যাত কবি, উপন্যাসিক, লেখক এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন । যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার 'মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত' উপন্যাসে, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায তার ''শীর্ষেন্দু বিন্দু থেকে সিন্দু'' উপন্যাসে , শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ' পণ্ডিতমশাই' এ , নির্মলেন্দু গুণ তার ' ক্ষেত মজুরের কাব্য' এ , মনোজ মিত্র তার 'সাজানো বাগান - পরবাস' এ অবনীদ্রনাথ ঠাকুর তার ' বুড়ো আংলা ' এ সুকুমার রায় তার ' উকিলের বুদ্ধি' তে । আরো অনেকে এ শব্দটির ব্যবহার করেছেন ।
তবে শব্দটির প্রথম ব্যবহার কবে কখন কিভাবে হয়েছিলো, তার তথ্য প্রমাণ আমার কাছে নেই । হয়তো ভাষা বিশারদগণ সেটা বলতে পারবেন । কিন্ত একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত, সেটা হলো এই 'চাষা' শব্দটি কিন্ত কৃষককে ছোট জাত হিসেবে চিন্হিত করতেই ব্যবহার করা হয়েছে । আর এখানেই আমার হয়েছে যত জ্বালা । যতটুকু ধারণা করে বুঝি, বৃটিশ শ্বাসন আমলে এই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে বেশী । কারণ সে সময়ে তথাকথিত 'জমিদার' নামক একশ্রেণীর প্রাণীর অস্তিত্ব ছিলো । যারা শেয়াল শ্রেণীর সদৃশ । বৃটিশদের পা লেহন করতো আর বাঘের গর্জন দিতো কৃষক মজুরদের সামনে । নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এরা নির্যাতন , নির্মম তাণ্ডব চালাতো নিরীহ এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপর । বঞ্চিত করে রাখতো সকল মৌলিক অধিকার থেকে । যাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থে সাবলম্বী না হতে পারে , সে চেষ্টা ছিলো নিরন্তর । কথায় কথায় গালাগাল, শারীরিক নির্যাতন, লুটপাট ছিলো নিত্য দিনের কাজ । আর কৃষকদের ছোটজাত হিসেবে চিন্হিত করতে 'চাষা' শব্দের ব্যবহার এই জমিদার নামক শেয়ালদের মুখে ছিলো অহরহ ।
যাহোক আজ সে শেয়াল আর নেই । কিছু মরে পঁচে শেষ , কেউ গর্তে ঢুকেছে আবার কিছু চেহারা পরিবর্তন করে সেই চাষাদের কাছেই ভিক্ষে চাইছে । কিন্ত একটি বিষয় চলমান রয়েগেছে । সেটা হলো গালি হিসেবে 'চাষা' শব্দের ব্যবহার । আজকের সমাজে 'তথাকথিত অতি আধুনিক' কিছু মানুষ , যারা সেই শেয়ালদেরই উত্তরসুরি হিসেবে এই শব্দের ব্যবহার করে থাকেন । আবার আমার গায়ে জ্বালা ধরে, মস্তিষ্ক গরম হয় । সে আমলে জন্মালে হয়তো বিপ্লবী হতাম । কিন্তু আজকের যুগে জন্মে, আজকের তথাকথিত আধুনিক আমিও হয়ে উঠেছি । হয়তো সেই জমিদার নামক শেয়ালের রক্ত আমার শরীরেও রয়েছে । তাই বিপ্লবী হবার চেতনা খুব বেশী অনুভব করিনা । খুব বেশী এ কারণে বলেছি, কিছুটা প্রতিবাদ করার খায়েশ মাঝে মাঝে অনুভব করি । আর সেই ক্ষুদ্র প্রতিবাদী অনুভব থেকেই নিজের নামের সঙ্গে 'চাষা' শব্দটি সেটে দেয়া । উদ্যেশ্য, আমি যেহেতু একজন কৃষক, একটা ছোটজাত, গালি খেলে আমিও খাবো । অথবা এই 'চাষা' শব্দটিকে গালি থেকে গর্বের টাইটেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো । প্রথম দিকে পরিবার, আত্মীয়, ব্ন্ধু, পরিচিতজন সহ অনেকের ব্যঙ্গক্তি শুনতে হয়েছে । এমন কথাও শুনেছি যে, এর প্রভাব আমার সন্তানদের উপর পরবে । কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ , আজ আমি সত্যিই নিজেকে নিয়ে নিজেই গর্ব করতে পারি । কারণ এই শব্দটিই আজ আমাকে বেশকিছু মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছে । এই শব্দটি ব্যবহার করে গালি দেয়া কমেছে । সবথেকে বড় গর্বের কারণ , বর্তমান সময়ের উচ্চশিক্ষিত,আধুনিক, উচ্ছল , প্রাণবন্ত, আত্মপ্রত্যয়ী এক ঝাঁকতরুণ, নিজেদের নামের আগে পরে 'চাষা' শব্দটি ব্যবহার করছে , মাথা উঁচু করে নিজেকে 'চাষা' হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে । আমি একজন অতি সাধরণ কৃষক । আমার এর থেকে বড় গর্বের, এর থেকে বিশাল সুখের, এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে বলুন ?
দিন বদলাবেই । আজ চাষা আলামিন জুয়েল আছে , একদিন হাড়িয়ে যাবে । একদিন অতীত হয়ে যাবে আমার সকল কিছুই । হয়তো কেউ মনেও রাখবে না । কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনেই, নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কৃষককে ঘুরে দাড়াতেই হবে । ঝান্ডা হাতে নিয়ে সকলে না পারলেও, কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে । আমি স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ কৃষকের, একটি উন্নত দেশের । আর জীবদ্দশায় সেটা দেখে যেতে পারলে ভীষণ তৃপ্ত হবো । দোয়া করবেন ব্ন্ধু । ভালো থাকবেন অবিরত ---- চাষা আলামিন জুয়েল ॥
গালি থেকে গর্ব ---
'চাষা' শব্দের আদ্যপান্ত খুঁজতে গিয়ে আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে যা বুঝলাম, তা হলো এর উত্পত্তি 'চাষ' শব্দ থেকে । চাষ +আ = চাষা । বাংলা অভিধানে এসেছে এভাবে , 'কৃষিকম্মকারী'-- কর্ষক, কৃষাণ , চাষা । ডিকশনারীতে এসেছে এভাবে , চাষা - বিশেষ্য পদ = যে চাষ করে , কৃষক ,মূর্খ, অভদ্র । এছাড়া বাংলা প্রবাদ বাক্যে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে , যেমন --- আশায় বাঁচে চাষা । এ শব্দটি আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করার পরে অনেক বিজ্ঞ ব্ন্ধু আমায় ব্যক্তিগত ভাবে এই পরামর্শ দিয়েছেন যে , চাষা -- এটা কোন শব্দ নয় , বরং আপনি চাষী শব্দটা ব্যবহার করতে পারেন । আমি তাদের অবশ্য এই শব্দটি ব্যবহারের কারণ ব্যখ্যা করিনি, তবে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ্ । তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসছি ।
চাষা-- শব্দটি আমাদের বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি কবিতায় ব্যবহার করেছেন - 'সব সাধকের বড় সাধক , আমার দেশের চাষা' ।
আবার একই কবিতার অন্য অংশে --' চাষী ওরা নয়কো চাষা, নয়কো ছোটলোক' ।
এছাড়া আরো অনেক বিখ্যাত কবি, উপন্যাসিক, লেখক এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন । যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার 'মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত' উপন্যাসে, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায তার ''শীর্ষেন্দু বিন্দু থেকে সিন্দু'' উপন্যাসে , শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ' পণ্ডিতমশাই' এ , নির্মলেন্দু গুণ তার ' ক্ষেত মজুরের কাব্য' এ , মনোজ মিত্র তার 'সাজানো বাগান - পরবাস' এ অবনীদ্রনাথ ঠাকুর তার ' বুড়ো আংলা ' এ সুকুমার রায় তার ' উকিলের বুদ্ধি' তে । আরো অনেকে এ শব্দটির ব্যবহার করেছেন ।
তবে শব্দটির প্রথম ব্যবহার কবে কখন কিভাবে হয়েছিলো, তার তথ্য প্রমাণ আমার কাছে নেই । হয়তো ভাষা বিশারদগণ সেটা বলতে পারবেন । কিন্ত একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত, সেটা হলো এই 'চাষা' শব্দটি কিন্ত কৃষককে ছোট জাত হিসেবে চিন্হিত করতেই ব্যবহার করা হয়েছে । আর এখানেই আমার হয়েছে যত জ্বালা । যতটুকু ধারণা করে বুঝি, বৃটিশ শ্বাসন আমলে এই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে বেশী । কারণ সে সময়ে তথাকথিত 'জমিদার' নামক একশ্রেণীর প্রাণীর অস্তিত্ব ছিলো । যারা শেয়াল শ্রেণীর সদৃশ । বৃটিশদের পা লেহন করতো আর বাঘের গর্জন দিতো কৃষক মজুরদের সামনে । নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এরা নির্যাতন , নির্মম তাণ্ডব চালাতো নিরীহ এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপর । বঞ্চিত করে রাখতো সকল মৌলিক অধিকার থেকে । যাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থে সাবলম্বী না হতে পারে , সে চেষ্টা ছিলো নিরন্তর । কথায় কথায় গালাগাল, শারীরিক নির্যাতন, লুটপাট ছিলো নিত্য দিনের কাজ । আর কৃষকদের ছোটজাত হিসেবে চিন্হিত করতে 'চাষা' শব্দের ব্যবহার এই জমিদার নামক শেয়ালদের মুখে ছিলো অহরহ ।
যাহোক আজ সে শেয়াল আর নেই । কিছু মরে পঁচে শেষ , কেউ গর্তে ঢুকেছে আবার কিছু চেহারা পরিবর্তন করে সেই চাষাদের কাছেই ভিক্ষে চাইছে । কিন্ত একটি বিষয় চলমান রয়েগেছে । সেটা হলো গালি হিসেবে 'চাষা' শব্দের ব্যবহার । আজকের সমাজে 'তথাকথিত অতি আধুনিক' কিছু মানুষ , যারা সেই শেয়ালদেরই উত্তরসুরি হিসেবে এই শব্দের ব্যবহার করে থাকেন । আবার আমার গায়ে জ্বালা ধরে, মস্তিষ্ক গরম হয় । সে আমলে জন্মালে হয়তো বিপ্লবী হতাম । কিন্তু আজকের যুগে জন্মে, আজকের তথাকথিত আধুনিক আমিও হয়ে উঠেছি । হয়তো সেই জমিদার নামক শেয়ালের রক্ত আমার শরীরেও রয়েছে । তাই বিপ্লবী হবার চেতনা খুব বেশী অনুভব করিনা । খুব বেশী এ কারণে বলেছি, কিছুটা প্রতিবাদ করার খায়েশ মাঝে মাঝে অনুভব করি । আর সেই ক্ষুদ্র প্রতিবাদী অনুভব থেকেই নিজের নামের সঙ্গে 'চাষা' শব্দটি সেটে দেয়া । উদ্যেশ্য, আমি যেহেতু একজন কৃষক, একটা ছোটজাত, গালি খেলে আমিও খাবো । অথবা এই 'চাষা' শব্দটিকে গালি থেকে গর্বের টাইটেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো । প্রথম দিকে পরিবার, আত্মীয়, ব্ন্ধু, পরিচিতজন সহ অনেকের ব্যঙ্গক্তি শুনতে হয়েছে । এমন কথাও শুনেছি যে, এর প্রভাব আমার সন্তানদের উপর পরবে । কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ , আজ আমি সত্যিই নিজেকে নিয়ে নিজেই গর্ব করতে পারি । কারণ এই শব্দটিই আজ আমাকে বেশকিছু মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছে । এই শব্দটি ব্যবহার করে গালি দেয়া কমেছে । সবথেকে বড় গর্বের কারণ , বর্তমান সময়ের উচ্চশিক্ষিত,আধুনিক, উচ্ছল , প্রাণবন্ত, আত্মপ্রত্যয়ী এক ঝাঁকতরুণ, নিজেদের নামের আগে পরে 'চাষা' শব্দটি ব্যবহার করছে , মাথা উঁচু করে নিজেকে 'চাষা' হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে । আমি একজন অতি সাধরণ কৃষক । আমার এর থেকে বড় গর্বের, এর থেকে বিশাল সুখের, এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে বলুন ?
দিন বদলাবেই । আজ চাষা আলামিন জুয়েল আছে , একদিন হাড়িয়ে যাবে । একদিন অতীত হয়ে যাবে আমার সকল কিছুই । হয়তো কেউ মনেও রাখবে না । কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনেই, নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কৃষককে ঘুরে দাড়াতেই হবে । ঝান্ডা হাতে নিয়ে সকলে না পারলেও, কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে । আমি স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ কৃষকের, একটি উন্নত দেশের । আর জীবদ্দশায় সেটা দেখে যেতে পারলে ভীষণ তৃপ্ত হবো । দোয়া করবেন ব্ন্ধু । ভালো থাকবেন অবিরত ---- চাষা আলামিন জুয়েল ॥


মন্তব্যসমূহ