সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
রাণিক্ষেত রোগ এবং চিকিৎসা:
লেয়ার বা ব্রয়লার কিংবা কবুতর সবারই একটা খুব সাধারন রোগ হলো এই রাণিক্ষেত। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। আমরা অনেকেই রাণিক্ষেত রোগের চিকিৎসা করে থাকি, কেউ ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দেই, কেউ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেই, কউ বা সাথে আরো অন্য কিছু। আজ তাই এই সাধারন রোগটির চিকিৎসা বিষয়ে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।



প্রথমেই আসি ভ্যাকসিন বিষয়েঃ
চিকিৎসা হিসেবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কতটা যুক্তিযুক্ত বা সেটা কতটা কার্যকরী তা নিয়ে আছে মতবিরোধ। কেউ শুধু লাইভ ভ্যাকসিন আবার কেউ লাইভ এবং ১ দিন পর কিল্ড ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এইখানে আমার নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই।

১। ভ্যাকসিনেশনঃ
morbidity ৫% এর বেশি হলে চিকিৎসা হিসেবে ভ্যাকসিনেশন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনের দিকে না যাওয়াই উত্তম। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে জীবাণু যেখানে বাসা বেঁধে আছে সেইখানেই কিন্তু ভ্যাকসিন-ভাইরাস বাসা বাঁধবে অর্থাৎ বংশবিস্তার করবে। সুতরাং রোগ বেশি আকার ধারণ করলে ভ্যাকসিন কাজ করার মতো Respiratory tract এ জায়গাই পাবে না।

যদি ভ্যাকসিন করতেই হয় তবে Lasota স্ট্রেইন এর ভ্যাকসিন করতে হবে। আর একটি কথা, এই রোগে যেহেতু মুরগি ঝিমায়, পানি ও খাদ্য খাওয়া কমিয়ে দেয়, তাই ভ্যাকসিন দ্বিগুন ডোজে করতে হবে।

** ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে কোন জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করা যাবে না। তাতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ৩ দিন পর আবার স্প্রে করা যাবে। অনেকে জীবানুনাশক যেমন Timsen খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে চাইলে টিমসেন খাওয়ানো যাবে না।

 ২। জীবানুনাশক ব্যবহারঃ
ভ্যাকসিন ব্যবহার করে চিকিৎসা করতে না চাইলে যেকোন কার্যকরী ভাইরাস প্রতিরোধী জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। যেমন টিমসেন, ভিরকন এস ইত্যাদি। অনেকে টিমসেন খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে খাওয়ানোর মাত্রা হবে ১গ্রাম/৪লিটার পানিতে ৪-৬ ঘণ্টার জন্য।

৩। এন্টিবায়োটিকঃ
যেহেতু এটি ভাইরাস জনিত রোগ, তাই এখানে এন্টিবায়োটিকের খুব বড় কোন ভূমিকা নেই। সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত এন্টিাবায়োটিক হলো সিপ্রোফ্লক্সাসিন ব্যবহারের কারন এটি খুব দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং এর বায়োলজিক্যাল হাফ লাইফও যথেষ্ট(৪ ঘণ্টা) আর Bioavailability ৬৯%। ডোজ ১মিলি/২লিঃ পানিতে, আবশ্য আমরা ১মিলি/লিঃ পানিতে প্রয়োগ করার পরামর্শই বেশি দিয়ে থাকি।

**ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে থাকলে তার ৮ ঘণ্টা পর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।

৪। অন্যন্য ঔষধঃ
যেহেতু ভাইরাল ডিজিজ আর এন্টিভাইরাল কোন ঔষধ প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না তাই মুরগির নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় এন্টিভাইরাল ড্রাগ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন ঔষধ যেমন Imm0fast (নাভানা এনিমেল হেলথ), Immolyte (স্কয়ার), Immuno Care(এভোন এনিম্যল হেলথ) ইত্যাদির যেকোন একটা ১মিলি/লিঃ -এ প্রয়োগ করে বেশ ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে। এগুলো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

 ৫। ভিটামিন-ই ও সেলিনিয়ামঃ
সেলিনিয়ামের ভাইরাস প্রতিরোধী গুণ রয়েছে। যা ভাইরাসকে মারতেও সহায়তা করে তাই সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ভিটামিন-ই ও সেলিনিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে অনেক কোম্পানির ই-সেল পাওয়া যায়, যেমনঃ E-Sel(Square), Sel-E(Popular), Bio-Sel-E(Avon), Selcon forte (Prime care) ইত্যাদি। এর যেকোন একটা ১মিলি/লিঃ-এ প্রয়োগ করে বেশ ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে।

যদি চিকিৎসা হিসেবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা না হয়ে থাকে তবে রোগ ভাল হয়ে যাবার পরপরই লাইভ ভ্যাকসিন এবং তার ১ দিন পর ক্ল্ডি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৫ দিন পর এন্টিবডি টাইটার লেভেল টেস্ট করা উচিৎ।

** রোগের প্রকোপ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন যোগ্য। ওপরের চিকিৎসা পদ্ধতি কেবল মাত্র ধারণা দেবার জন্য।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার ---ডাঃ তায়ফুর রহমান, ডিভিএম, এম এস ইন ফার্মাকোলজী (বাকৃবি), ফিল্ড রিসার্চ অফিসার, জুনোটিক ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ,আইসিডিডিআর,বি (icddr,b) এবং ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...