সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
গামবোরো রোগ এবং চিকিৎসা:

গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে ব্রয়লার, কক, সোনালী ও লেয়ার মুরগি মারা গিয়ে থাকে। তাই এ রোগের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। গুরুত্ব আরো একটু বেশি এই কারণে যে, মুরগির মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত ফ্লক ইম্যূনোসাপ্রেশনে ভোগে। আর তাই এ রোগকে মুরগির এইডস বলা হয়। আর এ ধরনের ফ্লক থেকে কখনই আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই আমি আজ এই রোগটির চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। তবে প্রথমেই বলে রাখা দরকার এটি যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ, সুতরাং এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই আরেকটি কথা হলো আমি যে চিকিৎসা পদ্ধতিটি এখানে তুলে ধরছি তা আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে –


১। এন্টিবায়োটিকঃ
এন্টিবায়োটিক হিসেবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১০% ব্যবহার করা যায়। এটি রক্তে মেশেও তারাতারি আর শরীরে থাকেও দীর্ঘক্ষণ। ফলে দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যায়।

ব্যবহারঃ ১মিলি ১লিঃ পানিতে পরপর ৩-৫ দিন সবসময় পানিতে দিতে হবে। এটি মূলতঃ সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য।

২। অর্গানিক এসিডঃ
যে কোন ভালো অর্গানিক এসিড কোম্পানি নির্দেশীত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিনেগারও ব্যবহার করা যায়। তবে আমারা দেখেছি, ভিনেগারের ph কমিয়ে রাখার সময়টা খুব কম। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে যখন পানির পাত্রে খাবার ও বিষ্ঠা পরে তখনই ভিনেগার মিশ্রিত পানির ph আবার বাড়তে শুরু করে। তাছাড়া ভিনেগারের মধ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবনতা বেড়ে গেছে বলে মনে হয়। তাই নিম্নোক্তভাবে ভিনেগারের ডোজ ব্যবহারের পরামর্শ রইলো --- *যদি মুদি দোকান থেকে কেনা সাদা ভিনেগার হয় তবে ১০ মিলি ১ লিঃ পানিতে আর যদি প্রাণ বা আরসি কোম্পানির পোল্ট্রির জন্য প্রস্তুতকৃত ভিনেগার হয় তবে ২০ মিলি ১লিঃ পানিতে। তবে কোন কোন কোম্পানি উচ্চ মাত্রার ভিনেগার বাজারজাত করছে যার ডোজ ১মিলি ১ লিঃ পানিতে। এই অর্গানিক এসিডগুলো কিডনী হতে ইউরেট দূর করতে সহায়তা করে।

৩। ইমিউন মডুলেটর বা পটেশিয়েটরঃ
যেহেতু এ রোগের সরাসরি কোন চিকিতসা নেই, তাই মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিলে তা এ ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে। এ জন্য অনেকে ভিটামিন সি সহ বাজারে পাওয়া যায় এমন কিছু কিছু ইমিউন মডুলেটর বা পটেশিয়েটর ব্যবহার করে থাকে। যেমনঃ Immofast, Immolyte, Immuno Care ইত্যাদি। মাত্রা: ১মিলি ১ লিঃ পানিকে সারাবেলা।

৪। আখের গুড়ঃ
গামবোরো রোগের কিছু কমন লক্ষণ হলো পানি না খাওয়া, খাদ্য না খাওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া ইত্যাদি। আর তাই ঔষধের পানির সঙ্গে যদি আখর গুড় মিশিয়ে দেয়া হয় তবে মুরগি সেই পানি বেশি পরিমানে খাবে ফলে দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া গুড় কিছুটা শক্তি দেয়, ধকল প্রতিরোধ করে আর সেই সঙ্গে স্যালাইন হিসেবেও কাজ করে। মাত্রা ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে।

তবে রোগের প্রকোপ বেশি হলে-
৫। কিডনী টনিকঃ
গামবোরো রোগে কিডনী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এ সময় একটা কিডনী টনিক যেমন Nephrocare, Nephrosol, Nephronal LQ ইত্যাদির যেকোনটি ১মিলি ১লিঃ পানিতে এই মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

৬। ভিটামিন কেঃ অনেকে এটি ব্যবহার করে থাকেন ।

** বাজারে কিছু হারবাল ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু এগুলোর Mode of Action আমার কাছে পরিস্কার না হওয়ায় আমি সেগুলো এখানে উল্লেখ করলাম না।

 কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ
*এ রোগ হলে মুরগি বসে থাকার প্রবনতা দেখা যায়, মুরগিকে কিছুক্ষণ পরপর তাড়া দিতে হবে যাতে উঠে গিয়ে পানি খায়।

* সারারাত আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে যাতে ঔষধ খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পায়।

* ভালো কোন জীবাণু নাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

* অসুস্থ মুরগিকে আলাদা করে তাদের জন্য উপরোক্ত ঔষুধ সমূহের প্রদত্ত মাত্রার চেয়ে একটু বেশি মাত্রায় ব্যবহার করে তাদের জন্য আলাদা পানি দিতে হবে।

একটি অপ্রিয় কথাঃ গামবোরো রোগটি বাংলাদেশে ছিল না, আমার জানা মতে বিদেশীদের প্রেসক্রিপশনে প্রথম এ রোগের ভ্যাকসিন আমদানী করে আমাদের দেশের মুরগিতে প্রয়োগ করা হয়। আর এর ফল আজ কি ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে তা বোধকরি আর বলার দরকার নেই। এ কথাটি কেন উল্লেখ করলাম আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :  ডাঃ তায়ফুর রহমান ।

বিঃদ্রঃ
প্রিয় ভেটেরিনারিয়ানবৃন্দ, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শীল্পকে বাঁচানোর জন্য আসুন আরেকটু বেশি মনোযোগী হই। তবে চারদিকে কেমন যেন একটা জুজু’র উপস্থিতি টের পাই, যেন গভীর ষঢ়যন্ত্র, যেন সেই জুজুটা সব ভেটেরিনারিয়ানদের গিলে খেতে চাইছে। হয়তো এটা আমার ভুল ! তবে কিছু ব্যাপার আমাকে যথেষ্ট ভাবায়, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের অনেক উপজেলাতে ভেটেরিনারি সার্জন ছিল না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরগুলির চিকিৎসা কার্যক্রম কি দিয়ে চলেছে তা আর আমাকে বলে দিতে হবে না। এই দীর্ঘ সময়টায় বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পটা চলে গেছে কিছু ফিডের ডিলার, ওষুধের দোকানদার আর কিছু তথাকথিত আলেম /ওঝাদের হাতে। আর এর পরিণতি আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

দু’টি প্রশ্নঃ শেয়ার বাজার বাংলাদের অর্থনীতিতে কতটুকু অবদান রাখে ? আর বাংলাদেশের পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে কতটুকু অবদান রাখে কখনও ভেবেছেন? শেয়ার বাজার নিয়ে আজ যত কথা হয়, এই দুটি শিল্প নিয়ে কি তত কথা হয়?- কর্তা ব্যাক্তিদের ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।

#সকল খামারি বন্ধুদের জন্য শুভকামনা---চাষা আলামিন জুয়েল ॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...