সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
ডালিম চাষঃ

ডালিমের জাত পরিচিতি---
বাংলাদেশে ডালিমের জাত প্রকরণ নিয়ে কোন কাজ হয়নি৷ এর কোন উন্নত জাতও বাংলাদেশে নাই৷ পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে স্প্যানিশ রুবি, পেপার সেল, ওয়ান্ডারফুল, মাসকেট রেড, ঢোল্‌কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, বেদানা ও কান্ধারী। প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য৷

ডালিম গাছ ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয় এবং এর কাঠের রঙ ফিকে পীত, কাঠে অল্প কালো দাগ থাকে। এর শাখা প্রশাখাগুলো গোলাকার। পাতা সাধারণত ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা এবং উভয় দিক সরু এবং উপরিভাগ চকচকে মসৃণ। ফুল ভেদে ডালিমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে।


ডালিম গাছ চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে ফল দেওয়া শুরু করলেও, শুরুর দিকে ভালো ফলন হয় না। সাধারণত ৮-১০ বছর বয়সের গাছ থেকে ভালো ফলন শুরু হয়। একটি পূর্ণ বয়ষ্ক সুস্থ সবল ডালিম গাছে বৎসরে ১০০-১৫০টি ফল ধরে। তবে ভালো পরিচর্যা নিলে ২০০-২৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে। একটি ডালিম গাছ ত্রিশ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফলন দিতে সক্ষম।

ডালিমের বপন/রোপণ প্রযুক্তিঃ----
বংশবিস্তারঃ

বীজ, শাখা কলম, শেকড়ের সাকার দ্ধারা বংশবিস্তার করা হয়। ডালিমের চারা উৎপাদনের সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি হচ্ছে শাখা কলম পদ্ধতি। এপদ্ধতিতে কলম তৈরির জন্য এক বছর পূর্ণ বয়সের শক্ত ডাল নির্বাচন করতে হবে যা দৈর্ঘ্যে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার হতে হবে। গুটিকলম পদ্ধতিতেও ডালিমের চারা উৎপাদন করা যায়। কাটিং বা শাখা কলম এর নিচের অংশ ২০০০ পিপিএম ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (IBA) বা ৩০০০ পিপিএম ইনডোল বিউটিরিক অ্যাসিড (IBA)-এর পানির মিশ্রণে চুবিয়ে নিলে সবচেয়ে ভালো হয় কেননা, এতে শিকড় গজানোর হার ত্বরান্বিত হয়। গুটিকলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিকড় গজানোর হার ত্বরান্বিত করার জন্য ১০,০০০ পিপিএম (IBA) এর পানির মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

চারা রোপণঃ
জুন-জুলাই মাস উপযুক্ত সময়। ১৬ ফুট × ১৬ ফুট দূরত্বে স্পেসিং দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। একটি গর্ত/মাদার আকার হবে ২ ফুট × ২ ফুট × ২ ফুট। গর্ত তৈরীর পর ১৫ দিন রোদ্রে শুকাতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে ১৫ কেজি পচা আবর্জনা সার মাটির সাথে মিশিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তার ১৫ দিন পর চারা লাগাতে হবে।

ডালিম চাষে সার ব্যবস্থাপনাঃ
চারা রোপনের আগে গর্তে সার প্রয়োগ করলেও প্রতি বছর গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করতে হবে।

নিম্নবর্ণিত সার প্রয়োগ করা যেতে পারে---
১ বসর বয়সের প্রতি গাছেপচা গোবর ১০ কেজি,ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ১২৫ গ্রাম, জিপসাম ১২৫ গ্রাম ও পটাশ ১২৫ গ্রাম।
পূর্ণ বয়স্ক গাছে পচা গোবর ৬০ কেজি, ইউরিয়া ১.৫ কেজি, টিএসপি ১.৫ কেজি,জিপসাম ১.৫ কেজি ও টিএসপি ৭০ গ্রাম ।
উপরোক্ত পরিমাণ সার দুভাগ করে জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে একবার এবং আশ্বিন-কার্তিক মাসে আরেকবার প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার গাছের গোড়া থেকে ৩ ফুট দূর দিয়ে গোলাকারে মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

ডালিম চাষে অন্যান্য প্রযুক্তিঃ
ডাল ছাঁটাইঃ
ডালিম গাছ ঘন শাখা-প্রশাখা যুক্ত বেশ ঝোপালো গাছ তাই একে নিয়মিত ছাঁটাই করা একান্ত প্রয়োজন। ডালিম গাছের একটি কাণ্ড এবং তার সাথে ৪-৬ টি প্রধান শাখা গাছের সুঠাম কাঠামো তৈরিতে যথেষ্ট। এজন্য ছোট অবস্থায় জমি থেকে এক মিটার উপরে গাছের মাথা কেটে দিতে হয়। জমি থেকে দেড় ফুট উপরে ৪-৬ টি প্রধান শাখাকে মূল কাণ্ডের সাথে সমতা রেখে বাড়তে দিতে হয়। ছয় মাস পরে দেড় ফুট করে রেখে প্রধান শাখাগুলোকে ছেঁটে দিতে হয়। এভাবে নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে দিলে গাছের রূপ নিতে ৩-৪ বছর সময় লাগবে। ডালিম গাছের কাণ্ড ও প্রধান শাখা থেকে উৎপন্ন ডাল এবং শিকড় থেকে উৎপাদিত সাকার নিয়মিত ছেঁটে দেয়া দরকার। কারণ এগুলো থাকলে গাছের ফলন কমে যায়। যেহেতু ডালিম গাছের পুরাতন ডাল থেকে উৎপন্ন ছোট শাখার মাথায় ফুল আসে সেহেতু নতুন শাখা বের করার জন্য ফলন্ত গাছকে মাঝে মধ্যে ছেঁটে দিতে হয়।
বিশেষ পরিচর্যাঃ
ডালিম গাছে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল আসে। তবে সব সময়ের ফুল থেকে ফল উৎপন্ন হয় না। বসন্তকালে যে ফুল হয় সেই ফুল থেকে গ্রীষ্মকালের ফল হয় যদিও এই ফলের মান খুব একটা ভালো হয় না। বর্ষার শুরুতে যে ফুল আসে এবং সেই ফুল থেকে যে ফল হয় তা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে সংগ্রহের উপযুক্ত হয় এবং এ ফলের মান বেশ ভালো হয়। তাই বর্ষার শুরুতে ফুল আনার জন্য পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত গাছের বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয়। এই সময়ে গাছে পানির সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হয় ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে। চৈত্র মাসে গাছে সেচ দিতে হয় এবং কোদাল দিয়ে কুপিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আল্‌গা করে দিতে হয়। চৈত্র মাসে গাছের পাতা ঝরে যায় ও বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত গাছ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে দু-একটা সেচ দিলে ভালো হয়। বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাছের বদ্ধি ও ফুল ফল ধারণ শুরু হয় এবং কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এই ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয় ।
আন্তঃফসল চাষঃ
ডালিম গাছ সাধারণত ৪-৬ বছর বয়সের আগে স্বাভাবিক ফলন দেয় না। তাই ৪-৬ বছর বয়স পর্যন্ত সময়ে ডালিম বাগানের ফাঁকা জায়গায় সহজেই অন্তর্বর্তী ফসল চাষ করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তী ফসল হিসেবে নানা প্রকার শাকসবজি ও ডালজাতীয় ফসল যেমন ছোলা, মুগ, মসুর মাসকালাই প্রভৃতি চাষ করা যেতে পারে।
ছাদে ডালিম চাষ পদ্ধতিঃ
ছাদে আনার বা বেদানার চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে । ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে । এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার,এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন । অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে । মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ কলমের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে । চারা রোপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়া যেন মাটি থেকে আলাদা না হয়ে যায় । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে আবার বেশী শুকিয়েও না যায় ।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
আনার বা বেদানা গাছের চারা লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ২৫-৩০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে । সরিষার খৈল ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে । এক বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে । ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকরসহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে । মাটি পরিবর্তনের এই কাজটি সাধারণতঃ বর্ষার শেষ এবং শীতের আগে করলেই ভাল হয় । ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে ।
রোগ - বালাইঃ----
ডালিমের পাতা মোড়ানো পোকাঃ--
পোকার আক্রমণের লক্ষণ:
এরা পাতামুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। বড় গাছের জন্য বেশি ক্ষতিকর না হলেও ছোট গাছকে অনেক সময় পত্রশুন্য করে ফেলতে পারে।
আক্রমণের আগে করণীয়ঃ
১.ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন
২. পরিস্কার করার পর একাট ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৩. নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।
আক্রমণ হলে করণীয়ঃ
১. আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২. গাছের নিচে পড়ে থাকা পাতা ও আবর্জনা অপসারণ করা।
৩. রাসায়নিক কীটনাশক সুপারিশকৃত নয় তবে আক্রমণ বেশী হলে প্রতিলিটার পানিতে সুমিথিয়ন 2 মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা।

ডালিমের জাব পোকাঃ------
পোকার আক্রমণের লক্ষণ:
এ পোকা গাছের পাতা ও আগার রস খেয়ে ফেলে এবং এক ধরনের মিষ্টি রস নিঃসরণ করে।এর আক্রমন বেশি হলে শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমন ঘটে এবং পাতায় কালো আবরণ দেখা যায় ।
আক্রমণের আগে করণীয়ঃ
১.ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন
২. পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৩. নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।
আক্রমণ হলে করণীয়ঃ
১. অল্প আক্রমনের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে পিশে পোকা মেরে ফেলা
২. আক্রান্ত পাতা ও ডাল অপসারণ করা।
৩. পরভোজী পোকা যেমন : লেডিবার্ডবিটল লালন।
৪. ডিটারজেন্ট পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা
৫. প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকার আক্রমণ হলে এডমেয়ার ০.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করা।

ডালিমের মিলিবাগ বা ছাতরা পোকাঃ---
পোকার আক্রমণের লক্ষণ:
এরা পাতা ও ডালের রস চুষে নেয় ফলে গাছ দুর্বল হয়। পোকার আক্রমনে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মত দেখা যায়। অনেক সময় পিপড়া দেখা যায়। এর আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।
আক্রমণ হলে করণীয়ঃ
১. আকান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২. গাছের গোড়ার মাটি থেকে ১৫-২০ সেমি উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে যাতে মিলিমাগ গাছে উঠতে না পারে।
৩. সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম বা বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
৪. জৈব বালাইনাশক নিমবিসিডিন (০.৪ %) ব্যবহার করা।
৫. আক্রমণ বেশী হলে প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি রগর বা টাফগর বা সানগর বা সুমিথিয়ন অথবা ২ গ্রাম মিপসিন বা সপসিন মিশিয়ে স্প্রে করা।

ডালিমের প্রজাপাতি/ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ---
পোকার বৈশিষ্ট্যঃ
১.পূর্ণবয়স্ক প্রজাপতি মধ্যমাকৃতি৷
২.পুরুষ প্রজাপতি উজ্জ্বল নীলচে বেগুনী এবং স্ত্রী প্রজাপতি বাদামি বেগুনী৷ তবে স্ত্রী প্রজাপতির সামনের পাখায় কমলা রঙের ছাপ বিদ্যমান৷
৩.পূর্ণাঙ্গ শুককীট ১৭-২০ মিলিলিটার লম্বা, গাঢ় বাদামি, গায়ে ছোট ছোট লোম আছে ও সারা শরীরে সাদাটে ছাপ বিদ্যমান৷

ক্ষতির প্রকৃতি:
ডালিম ফলের মারাত্মক শত্রু হচ্ছে ডালিমের প্রজাপতি বা ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই প্রজাতির শূঁককীট ফলের ক্ষতি করে থাকে। স্ত্রী প্রজাপতি ফুল ও ছোট ফলের ওপর ডিম পাড়ে। ডিম থেকে শূঁককীট বের হয়ে বর্ধনশীল ফলে ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ফলের বীজ ও অন্যান্য অংশ খেয়ে ফেলে। পরে মূককীটে পরিণত হওয়ার পূর্বে ফলের ত্বকে গোলাকার ছিদ্র করে ফল থেকে বের হয়ে আসে এবং ছিদ্র দিয়ে শুককীটের মল ফলের বাইরে বের হয়ে আসে৷ ফলে ছিদ্রের চারদিকে মল দেখতে পাওয়া যায়৷ এই পোকায় আক্রান্ত ফলে মাধ্যমিক সংক্রমণ হিসেবে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।
আক্রান্ত ফল হতে বিশ্রী গন্ধ বের হয় ৷ আক্রান্ত ডালিম মাটিতে ঝরে পড়ে ৷ ফল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে৷

পোকার আক্রমণের পূর্বে করণীয়ঃ
গাছের মরা ডালপালা পরিষ্কার রাখতে হবে।
পোকার আক্রমণের পর করণীয়ঃ
আক্রান্ত ফল গাছ থেকে পেড়ে বা মাটিতে পড়ে থাকা ফল ও পোকা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
বাড়ন্ত ফলগুলোকে কাপড়ের থলে দিয়ে ডেকে দিতে হবে৷ এতে স্ত্রী প্রজাপতি ফলের গায়ে ডিম দিতে পাড়তে পারে না৷
ডালিম গাছে যখন ফল ধরতে শুরু করে তখন প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে ম্যালাথিয়ন বা কার্বারিল বা ফস্‌ফামিডন গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছে ও ফলে সেপ্র করতে হবে ।
ফল সংগ্রহঃ
কলমের গাছে ৩-৪ বছর থেকেই ফলন শুরু হয়। ফুল আসার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৬ মাস সময় লাগে। পুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে-বাদামি হয়ে এলেই ফল পাড়ার উপযুক্ত হয়। গাছে ফল বেশি দিন রেখে দিলে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফল ফেটে যাওয়া জাতের ওপর নির্ভরশীল। যেসব গাছে ফল ফেটে যাওয়ার প্রবণতা থাকে সেসব গাছের ফল পুষ্ট হওয়ার কিছু আগেই পেড়ে নিতে হয়। তবে অপুষ্ট ফলের স্বাদ ও গুণাগুণ খুব একটা ভালো হয় না। ডালিমের খোসা বেশ শক্ত এজন্য পাকা ফল অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায় এবং পরিবহনেও নষ্ট হয় না।
CAJতথ্য সংগ্রহ--- বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, কৃষকের জানালা ও কৃষি তথ্য কেন্দ্র।

#সকল কৃষক ব্ন্ধুদের জন্য শুভ কামনায়--- চাষা আলামীন জুয়েল *

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...