শীতের আগাম শাক চাষ:---------
আসছে শীত। চলছে আশ্বিন মাস । এখনই সময় শীতের আগাম শাক-সবজি চাষের। এতে আগাম হবার কারণে যেমন দাম পাওয়া যায় বেশী , তেমনি বাজারে চাহিদাও থাকে বেশী। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটি শাক চাষের জন্য ভালো। শাক বলতে আমরা লতা পাতাকেই বুঝি। সে কারণে পাতার উতপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন জৈব বা রসায়নিক সারের।
শাক আমাদের অনেকেরই প্রিয়। মুলা শাক, পালং শাক, লাউ শাক, লাল শাক, মটর শাক সহ তাজা যেকোন শাক -সবজী হলে তো কথাই নেই। কিন্ত আগাম শাক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ আমাদের এখনই শেষ করতে হবে ! কারণ আগাম শাক চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উত্তম সময়।
শাক চাষ পদ্ধতি:-----
দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটি শাক চাষের জন্য উত্তম। জমি উঁচু ও মাঝারি উঁচু হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শাক উৎপাদনের জন্য জমি পাঁচ থেকে ছয়টি আড়াআড়ি চাষ এবং মই দিয়ে ভালো করে তৈরি করে নিতে হবে। আগাছামুক্ত ও মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রায় সব শাকের বেলায় একই ভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শাকের বীজ ছিটিয়ে বপন করাই উত্তম। তবে গুচ্ছ, বেড পদ্ধতি বা সারিবদ্ধ আকারেও জাত ভেদে বীজ বপন করা যেতে পারে .
শাক চাষে সার ব্যবস্থাপনা -----
যেহেতু শাক হিসেবে পাতাই আসল, সে কারণে পাতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। আর এর জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োজন একটু বেশি। সব ধরনের শাকের বেলায় প্রতি শতাংশ বা ৪০ বর্গমিটারে জমিতে কম্পোস্ট বা পচা গোবর অথবা জৈব সার লাগে ৫০ থেকে ৬০ কেজি। পাশাপশি ইউরিয়ার প্রয়োজন হয় ৮০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম, টিএসপি ও এমওপি লাগে ২৫০ গ্রাম করে। জমি তৈরির শেষ চাষে অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া ও অন্য সার পুরোটা ছিটিয়ে দিয়ে উত্তমরূপে মই দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর জমির অবস্থা দেখে বুঝে দিতে হয়।
বীজ:----
বিভিন্ন শাকের জন্য বীজের পরিমাণও কম বেশি হয়। ছোট বীজ কম লাগে আর বড় আকারের বীজ লাগে একটু বেশি। বীজ খুব ছোট হলে ছাই,বালি বা ধুলার সঙ্গে মিশিয়ে বীজ বুনতে হয়।
বীজ ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, বপনের আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪০০ গ্রাম ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। এতে পরে আর বীজবাহিত রোগ এর প্রাদুর্ভাব হয় না।
পরিচর্যাঃ----
অন্যান্য ফসলের চেয়ে শাক-সবজিতে আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। শীতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হয়।
মাটিতে চটা লেগে গেলে বা শক্ত আস্তরণ পড়লে তা ভেঙে দিতে হবে। বৃষ্টির পানির কারণে পানি জমে গেলে তাড়াতাড়ি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হয়। ক্ষেত সব সময় রাখতে হয় আগাছামুক্ত ।
শাকের বিভিন্ন রোগ হতে পারে । যেমন ঢলে পড়া, পাতা পচন রোগ হতে পারে। এছাড়া পাতা খেকো পোকার আক্রমণ হতে পারে । পোকা-মাকড়ের মধ্যে পিঁপড়া, মাকড়সা, বিছা পোকা, মাছি পোকা, পূতিপোকা ইত্যাদি।
ঢলে পড়া রোগ রোধে সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যে কোনো জৈব বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে অল্প পরিমাণে।
পচন রোগে বেনডাজিম দেয়া যেতে পারে। যে কোনো ছত্রাকনাশক বা জৈব বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি বা এক গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
CAJ সতর্কতা : কীটনাশক প্রয়োগের কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বিষক্রিয়া থাকে , যেটা মানব স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । তাই এসময়ে শাক সংগ্রহ থেকে বিরত থাকতে হবে। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা বা যত কম ব্যবহার করা যায় সেটাই উত্তম । বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক যেমন তামাক পাতা, নিম পাতা, নিমের বীজ , মেহগনির বীজ গুঁড়ো করে পরিমাণ মত পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে শাক সবজীকে রক্ষা করা সম্ভব ।
পাতা সংগ্রহঃ----
শাকের পাতা, ডগা, কান্ড তরতাজা, রসালো ও পুষ্ট হলে সংগ্রহ করতে হয়। শাক দ্রুত পচনশীল বিধায়, শাক তোলার পর পরই বাজারজাতকরণ এর ব্যবস্থা নিতে হবে।
#সকল কৃষক বন্ধুদের জন্য শুভ কামনায় -- চাষা আলামীন জুয়েল ।
আসছে শীত। চলছে আশ্বিন মাস । এখনই সময় শীতের আগাম শাক-সবজি চাষের। এতে আগাম হবার কারণে যেমন দাম পাওয়া যায় বেশী , তেমনি বাজারে চাহিদাও থাকে বেশী। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটি শাক চাষের জন্য ভালো। শাক বলতে আমরা লতা পাতাকেই বুঝি। সে কারণে পাতার উতপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন জৈব বা রসায়নিক সারের।
শাক আমাদের অনেকেরই প্রিয়। মুলা শাক, পালং শাক, লাউ শাক, লাল শাক, মটর শাক সহ তাজা যেকোন শাক -সবজী হলে তো কথাই নেই। কিন্ত আগাম শাক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ আমাদের এখনই শেষ করতে হবে ! কারণ আগাম শাক চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উত্তম সময়।
শাক চাষ পদ্ধতি:-----
দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটি শাক চাষের জন্য উত্তম। জমি উঁচু ও মাঝারি উঁচু হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শাক উৎপাদনের জন্য জমি পাঁচ থেকে ছয়টি আড়াআড়ি চাষ এবং মই দিয়ে ভালো করে তৈরি করে নিতে হবে। আগাছামুক্ত ও মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রায় সব শাকের বেলায় একই ভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শাকের বীজ ছিটিয়ে বপন করাই উত্তম। তবে গুচ্ছ, বেড পদ্ধতি বা সারিবদ্ধ আকারেও জাত ভেদে বীজ বপন করা যেতে পারে .
শাক চাষে সার ব্যবস্থাপনা -----
যেহেতু শাক হিসেবে পাতাই আসল, সে কারণে পাতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। আর এর জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োজন একটু বেশি। সব ধরনের শাকের বেলায় প্রতি শতাংশ বা ৪০ বর্গমিটারে জমিতে কম্পোস্ট বা পচা গোবর অথবা জৈব সার লাগে ৫০ থেকে ৬০ কেজি। পাশাপশি ইউরিয়ার প্রয়োজন হয় ৮০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম, টিএসপি ও এমওপি লাগে ২৫০ গ্রাম করে। জমি তৈরির শেষ চাষে অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া ও অন্য সার পুরোটা ছিটিয়ে দিয়ে উত্তমরূপে মই দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর জমির অবস্থা দেখে বুঝে দিতে হয়।
বীজ:----
বিভিন্ন শাকের জন্য বীজের পরিমাণও কম বেশি হয়। ছোট বীজ কম লাগে আর বড় আকারের বীজ লাগে একটু বেশি। বীজ খুব ছোট হলে ছাই,বালি বা ধুলার সঙ্গে মিশিয়ে বীজ বুনতে হয়।
বীজ ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, বপনের আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪০০ গ্রাম ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। এতে পরে আর বীজবাহিত রোগ এর প্রাদুর্ভাব হয় না।
পরিচর্যাঃ----
অন্যান্য ফসলের চেয়ে শাক-সবজিতে আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। শীতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হয়।
মাটিতে চটা লেগে গেলে বা শক্ত আস্তরণ পড়লে তা ভেঙে দিতে হবে। বৃষ্টির পানির কারণে পানি জমে গেলে তাড়াতাড়ি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হয়। ক্ষেত সব সময় রাখতে হয় আগাছামুক্ত ।
শাকের বিভিন্ন রোগ হতে পারে । যেমন ঢলে পড়া, পাতা পচন রোগ হতে পারে। এছাড়া পাতা খেকো পোকার আক্রমণ হতে পারে । পোকা-মাকড়ের মধ্যে পিঁপড়া, মাকড়সা, বিছা পোকা, মাছি পোকা, পূতিপোকা ইত্যাদি।
ঢলে পড়া রোগ রোধে সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যে কোনো জৈব বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে অল্প পরিমাণে।
পচন রোগে বেনডাজিম দেয়া যেতে পারে। যে কোনো ছত্রাকনাশক বা জৈব বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি বা এক গ্রাম হারে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
CAJ সতর্কতা : কীটনাশক প্রয়োগের কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বিষক্রিয়া থাকে , যেটা মানব স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । তাই এসময়ে শাক সংগ্রহ থেকে বিরত থাকতে হবে। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা বা যত কম ব্যবহার করা যায় সেটাই উত্তম । বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক যেমন তামাক পাতা, নিম পাতা, নিমের বীজ , মেহগনির বীজ গুঁড়ো করে পরিমাণ মত পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে শাক সবজীকে রক্ষা করা সম্ভব ।
পাতা সংগ্রহঃ----
শাকের পাতা, ডগা, কান্ড তরতাজা, রসালো ও পুষ্ট হলে সংগ্রহ করতে হয়। শাক দ্রুত পচনশীল বিধায়, শাক তোলার পর পরই বাজারজাতকরণ এর ব্যবস্থা নিতে হবে।
#সকল কৃষক বন্ধুদের জন্য শুভ কামনায় -- চাষা আলামীন জুয়েল ।



মন্তব্যসমূহ