ভাবিনি কখনো ,এমন কিছূ লিখতে হবে:
আমি অতি নগন্য একজন চাষা । নিজের সাধ্য সামর্থও অতি নগন্য । কিন্ত কৃষি ও কৃষক ভালোবাসি । তাই নিজের ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে কৃষি নিয়ে কিছু করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি । কিন্ত এমন কখনো ভাবিনি, যে সেই কৃষক সমাজের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে হবে ।
আমরা যারা কৃষি খামারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত তারাই কৃষক । একটা সময় ছিলো, যখন কৃষকদের নিরীহ , সহজ - সরল, খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো । কিন্ত এখন আর সেদিন নেই । কারণ এখন কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চশিক্ষিত, মেধা সম্পন্ন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষও । যেকারণে পরিবর্তন হয়েছে সেই 'সহজ - সরল' নামক তকমা । এবং যার যথেষ্ঠ সঙ্গত কারণও রয়েছে ।
আধূনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবন ধারায় বিশাল এক পরিবর্তন এনেছে । বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেবা বদলে দিয়েছে আমার দৈনন্দিন জীবন মান । যেগুলোর ব্যবহার ক্রমশ যেমন আমাদের সুবিধার দ্বার উন্মোচন করেছে , তেমনি কিছু ক্ষতির ও কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । কিন্ত তাতে প্রযুক্তির দোষ নেই । দোষ তার , যে প্রযুক্তিকে নিজের কুমতলব চরিতার্থ করার কাজে অপব্যবহার করছে ।
আমি চাষা আলামিন জুয়েল ছোট বেলায় দেখেছি , বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বাজারজাত করার পূর্বে বা পরে পচে যেতো । পণ্য সরবরাহকারী বা বিক্রেতা বাধ্য হয়ে তা ফেলে দিতেন । কিন্ত আজ আর কোন পচেনা । কারণ কি !! কারণ ফরমালিন । আমার নিজের কলা ক্ষেত রয়েছে । কিন্ত একটা ছড়ির সব কলা একসঙ্গে পেকেছে, আমি CAJ কখনো দেখিনি । অথচ বাজারে গেলে দেখি, সকল কলা একসঙ্গে পেকেছে । কিভাবে সম্ভব !! অনুঘটক হাইডোছ নামক কেমিকেল । এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে । কে করছে এসব ? সবই কি বিক্রেতা বা সরবরাহকারী বেপারীর দোষ ? আমার স্পষ্ট উত্তর - না । সকল কৃষক নয় , কিন্ত আমার মত অনেক লোভী কৃষক আজ মানবতা বিরোধী এমন অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত । যার অসংখ্য ছবিসহ প্রমাণ আমার কাছে আছে । যদি প্রশ্ন করি , কেন এটা করছেন ? নিঃসঙ্কোচে উত্তর , এছাড়া উপায় নেই , লোকসান হয় ।
আমার নিজেকে তখন ভীষণ অসহায় মনে হয় , নিজেকে ভীষণ ছোট জাতের প্রাণী মনে হয় । লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরি । প্রশ্ন জাগে , এই কি সেই সহজ - সরল কৃষক ?
আমরা যারা কৃষি কাজ করি , তারা রাষ্ট্রের উদাসীন মনোভাব বা কৃষি বান্ধব পরিবেশ না থাকায় বিভিন্ন জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছি প্রতিনিয়ত । কৃষিপণ্য উতপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকরণগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী । আবার কৃষকের উত্পাদিত পণ্য বাজারজাতের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম প্রখর । যেখানে কৃষক ভীষণ অসহায় । এসকল বিষয় নিয়ে কৃষক অনেক ক্ষেত্রে মুখ খোলার মতও অধিকার রাখেন না । ব্যক্তিগত ভাবে দুএকজন কথা বললেও কোন সুফল আসছেনা । নামে বেনামে অনেক ভূঁইফোড় কৃষি সংগঠন, চুরি করা সংগঠন ও সংগঠকরা থাকলেও, তারা নিজেদের স্বার্থের কারণেই চুপ । সঙ্গে সরকারী উদাসীনতা এবং কার্যকরী ভুমিকার অভাব । হয়তো কোনদিনই এদেশে কৃষিবান্ধব পরিবেশ তৈরী হবেনা । তাইবলে আমিও নিজের সত্বা, সততা , মানবতা বিকিয়ে দেবো !! হয়তো আজকের মানবতা বিবর্জিত যুগে সেটাই সঠিক ।
কৃষিজ বেশিরভাগ সেক্টরই এখন অলাভজনক । কৃষি পরিবেশ নেই বলে অনেক কৃষক আজ অন্য পেশায় । আবার তরুণ , শিক্ষিত , উদ্দ্যোমী অনেক নতুন মুখ কৃষি পেশায় যুক্ত হচ্ছেন । এভাবেই চলছে , চলবে । কিন্ত যে আশংকা তৈরী হচ্ছে , সেটা বাস্তব রূপ নিলে , পরিণতি হতে পারে ভয়াভহ । সেটা হলো 'প্রতারণা' । যেটা এখন কৃষি সেক্টরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে । এতোটাই মারাত্নক যেনো ধোঁকাবাজির প্রতিযোগীতা চলছে ।
শুধু টার্কির কথাই যদি বলি ,২০১৫ সালের পূর্বে এদেশে হাতেগোনা ৪-৫ টি টার্কি খামার ছিলো । তেমন কোন প্রচার না থাকায় এর সঙ্গে মানুষ তেমন পরিচিত ছিলোনা । গুগল সার্চ দিলে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের টার্কি নিয়ে একটি লেখা চোখে পড়তো, যেটাই বাংলাদেশে প্রথম । এরপর আমি CAJ অনলাইন সার্চ করে টার্কি পালনসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ তৈরী করি 'আমরা সবাই কৃষক' নামের একটি সংগঠনের জন্য ২০১৫ সালের শেষভাগে । এবং লেখাটি সেই সংগঠনের নামেই ফেসবুক ও লিফলেট আকারে প্রচার হয় । এরপর সেই সংগঠনের ব্যানারে বাকৃবি ময়মনসিংহের পোল্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড: সুবাস চন্দ্র স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় তিতির ও টার্কি পালন বিষয়ে একটি কর্মশালা পরিচালিত হয় । যেখানে বিএলআরআই এর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক, বাকৃবি - ময়মনসিংহ পোল্ট্রি অনুষদের সন্মানিত ডীন সহ একঝাক মেধাবীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পরার মত । এরপরই বিভীন্ন আনলাইন, প্রিন্ট মিড়িয়া গুলোতে প্রচার শুরু হয় । ফলশ্রুতিতে টার্কি হয়ে ওঠে হটকেক । পোল্ট্রি সেক্টরে অনবরত লোকসান দিয়ে খামারিরা যখন দিশেহারা , তখনই টার্কি হয়ে ওঠে আশার নতুন প্রদীপ । নতুন তরুণ উদ্দ্যোগতা আগ্রহী হয়ে ওঠে । ব্যপক চাহিদা তৈরী হয়ে যায় টার্কির । চাহিদার তুলনায় যোগান না থাকায় মূল্য হয়ে ওঠে আকাশ ছোঁয়া । একশ্রেণীর মুনাফালোভী রাতারাতি হয়ে ওঠে টার্কি খামারি ( মধ্যস্বত্বভোগী ) । হাজারো আলোচনা সমলোচনার মধ্যেই টার্কি এগিয়ে চলে । আজ দেশে ছোটবড় সহস্রাধিক প্রতিষ্টিত টার্কি খামার রয়েছে । এক্ষেত্রে আমি সব থেকে বেশী ক্রেডিট দিতে চাই সেই মধ্যস্বত্বভোগীদের । যারা নিজেদের স্বার্থেই প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে বেশী বিক্রয়ের আশায় । ভারত থেকে অবাধে বাচ্চা আমদানী করে দেশীয় খামারিদের আর্থিক ক্ষতি করেছে । রোগাক্রান্ত বাচ্চা সরবরাহ ছিলো এদের ক্ষমা অযোগ্য অপরাধ। কারণ অনেক নতুন তরুণ উদ্দ্যোগতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন । কিন্ত টার্কি কে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে খামার তৈরীর আগ্রহ সৃস্টি তাদেরই অবদান । তখন থেকে আজ অব্দি অনেকেই তাদের বিভিন্ন বাজে ভাষায় সমলোচনা করলেও , আমি আজকের মতোই তাদের প্রশংসা করেছি । এবং ঐটাই বাস্তব যে , এরা না থাকলে বা এদের বিক্রয় প্রচারণা না থাকলে মাত্র দু - তিন বছরে টার্কির এতো খামার গড়ে উঠতো না । সঙ্গে সঙ্গে আজ আমি যে উল্টো প্রশ্ন করতে চাই , সেটা হলো সেদিন যেসকল সমালোচক টার্কির উচ্চ মূল্যের কঠোর সমলোচনা করেছেন , আজ আপনি নিজে টার্কি খামারি হয়ে কেন সুলভ মূল্যে টার্কি বিক্রয় করছেন না ? আমি টার্কির বাজার মূল্য সহনীয় করার জন্য যে প্রস্তাবনা দিলাম , সেখানে সেই পুরাতন দু- একজন খামারি ব্যতীত আপনাদের তো কোন সারা পেলামনা । আমি সেই ২০১৫ থেকে আজ অব্দি টার্কি থেকে কোন মুনাফা গ্রহণ করিনি, কিন্ত মনে প্রাণে টার্কির খামার সম্প্রসারনে নীরবে কাজ করেছি । কিন্ত আপনি সমালোচক থেকে একজন সফল টার্কি খামারি হয়ে আজ কেনো চড়ামূল্যে টার্কি বিক্রয় করছেন ? আপনি কেন আজ টিকা বিহীন , রোগাক্রান্ত টার্কি সরবরাহ করছেন ? আপনি কেন নতুন খামারিদের বিক্রয়োত্তর সেবা বা কোন রকম সহযোগীতা দিচ্ছেন না ? এর অর্থ কি দাঁড়ায় ? সেদিন আপনার নিজের টার্কি খামার ছিলোনা বলে সমলোচনা ? আপনি পারছেন না কিন্ত অন্য কেউ কামিয়ে নিয়েছে বলে গাত্রদাহ ?
এটাই কি একজন প্রকৃত খামারির চরিত্র ?
মুরগীর বাচ্চার দাম বেশী হলে, খাবারের দাম বেশী হলে যে খামারি গলা ফাটায় , একই খামারি ডিমের দাম কম হলে , মাংসের দাম কম হলে গলা ফাটায় । আবার ব্রয়লার বা লেয়ার বাচ্চার সিন্ডিকেট দাম বাড়ালে যে খামারি আর্তনাদ করে , সে খামারিই নিজের খামারের সোনালীর বাচ্চা বেশী দামে বিক্রয় করে ব্রয়লার লেয়ার বাচ্চার দাম বেশীর অজুহাত দেখিয়ে । কি আজব আমাদের চরিত্র !!! মূল বিষয় হলো , সুযোগ নেই বলে আমি ভীষণ ভালো মানুষ । আর সুযোগ পেয়ে গেলে সেই আমিই সেরা চোর । সত্যিই সেলুকাস ।
বেশিরভাগ কৃষক তার নিজের শ্রমমূল্য হিসেব করেনা । উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলে বর্তমান সময়ে লোকসান পিছু ছাড়েনা। তবুও বেশিরভাগ কৃষক সততার সঙ্গে মাটি কামড়ে পরে আছে । কারণ কৃষিকে তারা ভালোবাসে । কৃষিই তাদের জীবন । কিন্ত মুষ্ঠিমেয় কিছূ লোভাতুর কৃষকের জন্য বদনাম হচ্ছে সকল কৃষকের । ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নতুন কৃষি উদ্দোগতাগণ । ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি সেক্টর তথা দেশ ।
#আসুন বন্ধু নিজের ও দেশের সার্থে সচেতন হই । অন্যের সমলোচনা কম করে আত্মসমালোচনা বেশী করি । কৃষি একটি পবিত্র , মহত পেশা । নিজের স্বার্থে কৃষিকে,সমস্ত কৃষক সমাজকে কলুষিত না করে এর পবিত্রতা রক্ষা করি । আর যদি টাকা কমানো মূল ধান্দা হয় , তবে দয়া করে কৃষিটাকে কৃষক সমাজকে রেহাই দিন এবং অন্য কোন পেশা চয়েজ করুন। আপনি উলঙ্গ হতে লজ্জা পাননা সেটা আপনার নিজস্ব ব্যপার । তাই বলে নিজের স্বার্থে অন্যকে কেন করছেন ? নিজের নোংরামীকে নিজের মধ্যেই পুষে রাখুন । অন্তত আপনার সন্তান লজ্জা থেকে রেহাই পাবে ---চাষা আলামিন জুয়েল ।
আমি অতি নগন্য একজন চাষা । নিজের সাধ্য সামর্থও অতি নগন্য । কিন্ত কৃষি ও কৃষক ভালোবাসি । তাই নিজের ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে কৃষি নিয়ে কিছু করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি । কিন্ত এমন কখনো ভাবিনি, যে সেই কৃষক সমাজের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে হবে ।
আমরা যারা কৃষি খামারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত তারাই কৃষক । একটা সময় ছিলো, যখন কৃষকদের নিরীহ , সহজ - সরল, খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো । কিন্ত এখন আর সেদিন নেই । কারণ এখন কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চশিক্ষিত, মেধা সম্পন্ন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষও । যেকারণে পরিবর্তন হয়েছে সেই 'সহজ - সরল' নামক তকমা । এবং যার যথেষ্ঠ সঙ্গত কারণও রয়েছে ।
আধূনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবন ধারায় বিশাল এক পরিবর্তন এনেছে । বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেবা বদলে দিয়েছে আমার দৈনন্দিন জীবন মান । যেগুলোর ব্যবহার ক্রমশ যেমন আমাদের সুবিধার দ্বার উন্মোচন করেছে , তেমনি কিছু ক্ষতির ও কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । কিন্ত তাতে প্রযুক্তির দোষ নেই । দোষ তার , যে প্রযুক্তিকে নিজের কুমতলব চরিতার্থ করার কাজে অপব্যবহার করছে ।
আমি চাষা আলামিন জুয়েল ছোট বেলায় দেখেছি , বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বাজারজাত করার পূর্বে বা পরে পচে যেতো । পণ্য সরবরাহকারী বা বিক্রেতা বাধ্য হয়ে তা ফেলে দিতেন । কিন্ত আজ আর কোন পচেনা । কারণ কি !! কারণ ফরমালিন । আমার নিজের কলা ক্ষেত রয়েছে । কিন্ত একটা ছড়ির সব কলা একসঙ্গে পেকেছে, আমি CAJ কখনো দেখিনি । অথচ বাজারে গেলে দেখি, সকল কলা একসঙ্গে পেকেছে । কিভাবে সম্ভব !! অনুঘটক হাইডোছ নামক কেমিকেল । এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে । কে করছে এসব ? সবই কি বিক্রেতা বা সরবরাহকারী বেপারীর দোষ ? আমার স্পষ্ট উত্তর - না । সকল কৃষক নয় , কিন্ত আমার মত অনেক লোভী কৃষক আজ মানবতা বিরোধী এমন অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত । যার অসংখ্য ছবিসহ প্রমাণ আমার কাছে আছে । যদি প্রশ্ন করি , কেন এটা করছেন ? নিঃসঙ্কোচে উত্তর , এছাড়া উপায় নেই , লোকসান হয় ।
আমার নিজেকে তখন ভীষণ অসহায় মনে হয় , নিজেকে ভীষণ ছোট জাতের প্রাণী মনে হয় । লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরি । প্রশ্ন জাগে , এই কি সেই সহজ - সরল কৃষক ?
আমরা যারা কৃষি কাজ করি , তারা রাষ্ট্রের উদাসীন মনোভাব বা কৃষি বান্ধব পরিবেশ না থাকায় বিভিন্ন জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছি প্রতিনিয়ত । কৃষিপণ্য উতপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকরণগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী । আবার কৃষকের উত্পাদিত পণ্য বাজারজাতের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম প্রখর । যেখানে কৃষক ভীষণ অসহায় । এসকল বিষয় নিয়ে কৃষক অনেক ক্ষেত্রে মুখ খোলার মতও অধিকার রাখেন না । ব্যক্তিগত ভাবে দুএকজন কথা বললেও কোন সুফল আসছেনা । নামে বেনামে অনেক ভূঁইফোড় কৃষি সংগঠন, চুরি করা সংগঠন ও সংগঠকরা থাকলেও, তারা নিজেদের স্বার্থের কারণেই চুপ । সঙ্গে সরকারী উদাসীনতা এবং কার্যকরী ভুমিকার অভাব । হয়তো কোনদিনই এদেশে কৃষিবান্ধব পরিবেশ তৈরী হবেনা । তাইবলে আমিও নিজের সত্বা, সততা , মানবতা বিকিয়ে দেবো !! হয়তো আজকের মানবতা বিবর্জিত যুগে সেটাই সঠিক ।
কৃষিজ বেশিরভাগ সেক্টরই এখন অলাভজনক । কৃষি পরিবেশ নেই বলে অনেক কৃষক আজ অন্য পেশায় । আবার তরুণ , শিক্ষিত , উদ্দ্যোমী অনেক নতুন মুখ কৃষি পেশায় যুক্ত হচ্ছেন । এভাবেই চলছে , চলবে । কিন্ত যে আশংকা তৈরী হচ্ছে , সেটা বাস্তব রূপ নিলে , পরিণতি হতে পারে ভয়াভহ । সেটা হলো 'প্রতারণা' । যেটা এখন কৃষি সেক্টরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে । এতোটাই মারাত্নক যেনো ধোঁকাবাজির প্রতিযোগীতা চলছে ।
শুধু টার্কির কথাই যদি বলি ,২০১৫ সালের পূর্বে এদেশে হাতেগোনা ৪-৫ টি টার্কি খামার ছিলো । তেমন কোন প্রচার না থাকায় এর সঙ্গে মানুষ তেমন পরিচিত ছিলোনা । গুগল সার্চ দিলে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের টার্কি নিয়ে একটি লেখা চোখে পড়তো, যেটাই বাংলাদেশে প্রথম । এরপর আমি CAJ অনলাইন সার্চ করে টার্কি পালনসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ তৈরী করি 'আমরা সবাই কৃষক' নামের একটি সংগঠনের জন্য ২০১৫ সালের শেষভাগে । এবং লেখাটি সেই সংগঠনের নামেই ফেসবুক ও লিফলেট আকারে প্রচার হয় । এরপর সেই সংগঠনের ব্যানারে বাকৃবি ময়মনসিংহের পোল্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড: সুবাস চন্দ্র স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় তিতির ও টার্কি পালন বিষয়ে একটি কর্মশালা পরিচালিত হয় । যেখানে বিএলআরআই এর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক, বাকৃবি - ময়মনসিংহ পোল্ট্রি অনুষদের সন্মানিত ডীন সহ একঝাক মেধাবীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পরার মত । এরপরই বিভীন্ন আনলাইন, প্রিন্ট মিড়িয়া গুলোতে প্রচার শুরু হয় । ফলশ্রুতিতে টার্কি হয়ে ওঠে হটকেক । পোল্ট্রি সেক্টরে অনবরত লোকসান দিয়ে খামারিরা যখন দিশেহারা , তখনই টার্কি হয়ে ওঠে আশার নতুন প্রদীপ । নতুন তরুণ উদ্দ্যোগতা আগ্রহী হয়ে ওঠে । ব্যপক চাহিদা তৈরী হয়ে যায় টার্কির । চাহিদার তুলনায় যোগান না থাকায় মূল্য হয়ে ওঠে আকাশ ছোঁয়া । একশ্রেণীর মুনাফালোভী রাতারাতি হয়ে ওঠে টার্কি খামারি ( মধ্যস্বত্বভোগী ) । হাজারো আলোচনা সমলোচনার মধ্যেই টার্কি এগিয়ে চলে । আজ দেশে ছোটবড় সহস্রাধিক প্রতিষ্টিত টার্কি খামার রয়েছে । এক্ষেত্রে আমি সব থেকে বেশী ক্রেডিট দিতে চাই সেই মধ্যস্বত্বভোগীদের । যারা নিজেদের স্বার্থেই প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে বেশী বিক্রয়ের আশায় । ভারত থেকে অবাধে বাচ্চা আমদানী করে দেশীয় খামারিদের আর্থিক ক্ষতি করেছে । রোগাক্রান্ত বাচ্চা সরবরাহ ছিলো এদের ক্ষমা অযোগ্য অপরাধ। কারণ অনেক নতুন তরুণ উদ্দ্যোগতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন । কিন্ত টার্কি কে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে খামার তৈরীর আগ্রহ সৃস্টি তাদেরই অবদান । তখন থেকে আজ অব্দি অনেকেই তাদের বিভিন্ন বাজে ভাষায় সমলোচনা করলেও , আমি আজকের মতোই তাদের প্রশংসা করেছি । এবং ঐটাই বাস্তব যে , এরা না থাকলে বা এদের বিক্রয় প্রচারণা না থাকলে মাত্র দু - তিন বছরে টার্কির এতো খামার গড়ে উঠতো না । সঙ্গে সঙ্গে আজ আমি যে উল্টো প্রশ্ন করতে চাই , সেটা হলো সেদিন যেসকল সমালোচক টার্কির উচ্চ মূল্যের কঠোর সমলোচনা করেছেন , আজ আপনি নিজে টার্কি খামারি হয়ে কেন সুলভ মূল্যে টার্কি বিক্রয় করছেন না ? আমি টার্কির বাজার মূল্য সহনীয় করার জন্য যে প্রস্তাবনা দিলাম , সেখানে সেই পুরাতন দু- একজন খামারি ব্যতীত আপনাদের তো কোন সারা পেলামনা । আমি সেই ২০১৫ থেকে আজ অব্দি টার্কি থেকে কোন মুনাফা গ্রহণ করিনি, কিন্ত মনে প্রাণে টার্কির খামার সম্প্রসারনে নীরবে কাজ করেছি । কিন্ত আপনি সমালোচক থেকে একজন সফল টার্কি খামারি হয়ে আজ কেনো চড়ামূল্যে টার্কি বিক্রয় করছেন ? আপনি কেন আজ টিকা বিহীন , রোগাক্রান্ত টার্কি সরবরাহ করছেন ? আপনি কেন নতুন খামারিদের বিক্রয়োত্তর সেবা বা কোন রকম সহযোগীতা দিচ্ছেন না ? এর অর্থ কি দাঁড়ায় ? সেদিন আপনার নিজের টার্কি খামার ছিলোনা বলে সমলোচনা ? আপনি পারছেন না কিন্ত অন্য কেউ কামিয়ে নিয়েছে বলে গাত্রদাহ ?
এটাই কি একজন প্রকৃত খামারির চরিত্র ?
মুরগীর বাচ্চার দাম বেশী হলে, খাবারের দাম বেশী হলে যে খামারি গলা ফাটায় , একই খামারি ডিমের দাম কম হলে , মাংসের দাম কম হলে গলা ফাটায় । আবার ব্রয়লার বা লেয়ার বাচ্চার সিন্ডিকেট দাম বাড়ালে যে খামারি আর্তনাদ করে , সে খামারিই নিজের খামারের সোনালীর বাচ্চা বেশী দামে বিক্রয় করে ব্রয়লার লেয়ার বাচ্চার দাম বেশীর অজুহাত দেখিয়ে । কি আজব আমাদের চরিত্র !!! মূল বিষয় হলো , সুযোগ নেই বলে আমি ভীষণ ভালো মানুষ । আর সুযোগ পেয়ে গেলে সেই আমিই সেরা চোর । সত্যিই সেলুকাস ।
বেশিরভাগ কৃষক তার নিজের শ্রমমূল্য হিসেব করেনা । উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলে বর্তমান সময়ে লোকসান পিছু ছাড়েনা। তবুও বেশিরভাগ কৃষক সততার সঙ্গে মাটি কামড়ে পরে আছে । কারণ কৃষিকে তারা ভালোবাসে । কৃষিই তাদের জীবন । কিন্ত মুষ্ঠিমেয় কিছূ লোভাতুর কৃষকের জন্য বদনাম হচ্ছে সকল কৃষকের । ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নতুন কৃষি উদ্দোগতাগণ । ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি সেক্টর তথা দেশ ।
#আসুন বন্ধু নিজের ও দেশের সার্থে সচেতন হই । অন্যের সমলোচনা কম করে আত্মসমালোচনা বেশী করি । কৃষি একটি পবিত্র , মহত পেশা । নিজের স্বার্থে কৃষিকে,সমস্ত কৃষক সমাজকে কলুষিত না করে এর পবিত্রতা রক্ষা করি । আর যদি টাকা কমানো মূল ধান্দা হয় , তবে দয়া করে কৃষিটাকে কৃষক সমাজকে রেহাই দিন এবং অন্য কোন পেশা চয়েজ করুন। আপনি উলঙ্গ হতে লজ্জা পাননা সেটা আপনার নিজস্ব ব্যপার । তাই বলে নিজের স্বার্থে অন্যকে কেন করছেন ? নিজের নোংরামীকে নিজের মধ্যেই পুষে রাখুন । অন্তত আপনার সন্তান লজ্জা থেকে রেহাই পাবে ---চাষা আলামিন জুয়েল ।

মন্তব্যসমূহ