ভেড়া পালন :(CAJ পোস্ট )
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ভেড়া পালন জনপ্রিয়।
মাংস, উল ও দুধ উৎপাদনের জন্য ভেড়া পালন হয়ে থাকে।
বড় বড় বাণিজ্যিক খামারের মাধ্যমে ভেড়া পালন করা হয়, আবার পারিবারিক পর্যায়েও পালন করা হয়।
বিভিন্ন দেশে ভেড়ার মাংস বেশ জনপ্রিয়।
ভেড়া পালনের বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরা হলো--(CAJ)
* ভেড়া শান্ত ও ছোট প্রাণী; ফলে এদের খাদ্য ও আবাসনজনিত বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি কম
* ভেড়া মাংস, পশম, চামড়া ও জৈবসার উৎপাদন করে
* ভেড়া গরু-ছাগলের সঙ্গে মিশ্রভাবে পালন করা যায়।
* একটি ভেড়া বছরে সাধারণত দু’বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার গড়ে দুটি করে বাচ্চা দেয়।
ভেড়া নির্বাচন :
পালনের জন্য ৭-১২ মাস বয়সী সুস্থ ভেড়া নির্বাচন করা উচিত। শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সাধারণত দু’ প্রকার ভেড়া দেখা য়ায়।
একটি জাতের কান খুব ছোট এবং লেজ খাটো।অন্যটির কান মোটামুটি বড় এবং লেজ মধ্যম আকৃতির।
ভেড়ার জাত: (CAJ)
সারা বিশ্বে ৯০০ এর অধিক জাতের ভেড়া রয়েছে । বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ভেড়ার জাতকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। যেমন-
* মাংস ও বাচ্চা উৎপাদনকারী জাত, আর্কট (কানাডা)।
* মাংস ও উল উৎপাদনকারী জাত যেমন:
ম্যারিনো (স্পেন), ছোটনাগপুরি (ভারত), বালুচি (আফগানিস্থান,ইরান, পাকিস্থান), ভাওয়ালপুরী (পাকিস্থান), লিংকন (ইংল্যান্ড), চিভয়েট (যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ), ডালা (সুইডেন) ইত্যাদি।
* দুধ উৎপাদনকারী জাত: ইস্ট ফ্রিজিয়ান ভেড়া--
ইস্ট ফ্রিজিয়ান ভেড়া পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করে ও দুধের গুণগত মানও ভালো। এছাড়া দুধ উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে আওয়াসি (আরব-সিরিয়ার মরু অঞ্চল) জাতের ভেড়াও অন্যতম।
সুস্থ্য ভেড়া চেনার উপায়ঃ
* চোখ, নাক, মুখ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হবে।
* লোম ও চামড়া মসৃণ এবং পরিষ্কার থাকবে।
* মুখের উপরে মাজেলে (কালো জায়গায়) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
* ঠিকমতো জাবর কাটবে।
* চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
* কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
* খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
* শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
* প্রস্রাব-পায়খানা স্বাভাবিক হবে।
* কোনো অচেনা লোক কাছে আসলে সজাগ হবে।
* মশামাছি তাড়াবে।
* দলবদ্ধ ভাবে মাঠে চরবে।
অসুস্থ ভেড়া চেনার উপায়ঃ
* চোখ অনুজ্জ্বল ও অপরিষ্কার হবে।
* লোম ও চামড়া অমসৃণ এবং অপরিষ্কার থাকবে।
* মুখের উপরে কালো জায়গা শুকনা দেখা যাবে।
* ঠিকমতো জাবর কাটবে না।
* দুর্বল ও হাড্ডিসার হবে।
* নড়াচড়া কম করবে ও খাবারের প্রতি আগ্রহ কম দেখাবে।
* রক্তশূন্যতার কারণে মুখ-চোখ ফ্যাকাশে দেখাবে।
* অস্বাভাবিক আচরণ করবে।
* দলছুট হবে এবং একসময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে বা শুয়ে থাকবে।
* প্রস্রাব-পায়খানা অস্বাভাবিক হবে।
* প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার খাবে না।
ভেড়ার বাসস্থান:
ভেড়া পালনের জন্য সঠিক বাসস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভেড়া মেঝেতে বা মাচায় পালন করা যায়। ভেড়া মাচায় পালন করা ভালো।
ভেড়ার ঘরের বৈশিষ্ট:
* ভেড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
* মেঝেতে পালন করলে ছালা বা চট অথবা খড় বিছানা * হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সাধারণভাবে ভেড়ার ঘর তৈরির করার ক্ষেত্রে পারিবারিক পর্যায়ে ৩-৭টি ভেড়ার জন্য ঘরের আয়তন ২৫ থেকে ৪০ বর্গফুট (৭ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া, ৬ ফুট উঁচু)।বাঁশ, চাটাই, টিন, কাঠ, খড় ব্যবহার করে এরকম ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।
* নিচু বা বন্যাপ্রবণ এলাকাভেদে মাচার উচ্চতা ১ থেকে দেড় ফুট বা বেশি হতে পারে।
ভেড়ার খাদ্য:
* ভেড়া চরে খেতে পছন্দ করে।
* ভেড়া ছাগলের মত লতা ও গুল্মজাতীয় গাছের পাতাও খায়।
* ভেড়া সহজে নতুন খাদ্যে অভ্যস্ত হয়।
* ভেড়া ঘাস, লতা-পাতা, শুকনো বা সংরক্ষিত ঘাস, খড়, দানাদার খাদ্য ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
* খাদ্যের অভাব দেখা দিলে ভেড়া খড়, নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।
পাঁঠা ভেড়ার খাদ্য:
* পাঁঠা ভেড়াকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
* ১৫ থেকে ২০ কে.জি ওজনের পাঁঠাকে দৈনিক ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম আমিষ সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
* প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঁঠাকে দৈনিক প্রায় ১০ গ্রাম করে গজানো ছোলা খাওয়াতে হবে।
* কাঁচা ঘাসের পরিমাণ কম হলে বছরে অনন্ত ২ বার ২-৩ মি.লি ভিটামিন এ.ই.ডি ইনজেকশন দিতে হবে।
* পাঁঠাকে কখনোই অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার দেওয়া যাবে না।
পালন ব্যবস্থাপনা:
গর্ভবতী ভেড়ার যত্ন---
* গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে ভেড়াকে দ্বিতীয় কোনো পাঁঠার কাছে নেওয়া যাবে না এবং কোনো কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
* গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ভেড়াকে নরম বিছানা দিতে হবে।
* গর্ভবতী ভেড়াকে আলাদা রাখতে হবে।
* গর্ভাবস্থায় ভেড়াকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার যেমন- গমের ভুসি, কাঁচা ঘাস, তিলের খৈল, ভিটামিন মিশ্রিত তরল পদার্থ, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।
বাচচা ভেড়ার পরিচর্যা ও যত্ন---
* বাচ্চা প্রসবের সময়ে গর্ভবতী ভেড়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শুকনো ও আলো-বাতাস চলাচল করে এমন খোলা ঘরে রাখতে হবে। নতুবা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* বাচ্চার শরীর যাতে মা-ভেড়া চেটে পরিষ্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতে বাচ্চার শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
* পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক ও মুখ পরিষ্কার করে দিতে হবে।
প্রজনন ব্যবস্থাপনা:
* ভেড়া সাধারণত ৬-১২ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
* ভেড়ার ঋতুচক্র ১৩-১৯ বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
* ভেড়ার হিট পিরিয়ড ২৪-৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
* ভেড়ার গর্ভাধারণকাল ১৪৫-১৫০ দিন ।
পাল দেওয়ানোর নিয়ম:
* ভেড়া ডাকে আসার ১২ ঘণ্টা পর এবং ১৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে পাল দেওয়াতে হবে। ১৮ ঘণ্টা পর পাল দিলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে।
* কোনো ভেড়া রাতে ডাকে আসলে সেটাকে পরদিন সকালে একবার এবং আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওইদিন বিকালের মধ্যে আরেকবার পাল দেওয়াতে হবে।
* সকালে ডাকে এসেছে মনে হলে সেটাকে ওইদিন বিকালে ও পরদিন সকালে আরেকবার পাল দেওয়ানো ভালো।
* এ নিয়ম মেনে চললে ভেড়ার প্রজনন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি অনেকাংশে কমানো যায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে।
* সুস্থ এবং যে পাঁঠাকে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি পাল দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় না এমন পাঁঠার কাছে পাল দেওয়ার জন্য নিতে হবে।
ভেড়ার মাংসের বৈশিষ্ট:
* ভেড়ার মাংসে বিভিন্ন ধরণের খনিজ লবণ ও জিঙ্ক রয়েছে। ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে খনিজ লবণের প্রতিদিনের চাহিদার ৩৩ ভাগ পূরণ হয়ে থাকে। জিঙ্ক শরীরের ক্ষত নিরাময় এবং টেস্টস্টেরন (testosterone) এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে জিঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
* ভেড়ার মাংস আয়রন ও কপারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
* ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে আয়রনের প্রতিদিনের চাহিদার ১২ ভাগ এবং কপারের (copper) ৭ ভাগ পূরণ হয়ে থাকে।
* লোহিত রক্ত কনিকা উৎপাদনে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* কপার (copper) শরীরে আয়রন বিপাকে এবং লোহিত রক্ত কনিকা বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
* ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
* ভেড়ার মাংসে কার্বহাইড্রেডের উপস্থিতি থাকেনা এবং এর ফলে গ্লাইসেমিক সূচকের (glycemic index) মাত্রা খুব কম থাকে।
* ভেড়ার মাংস প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংসে ২৭.৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যা প্রোটিনের প্রতিদিনের চাহিদার ৫৫ ভাগ পূরণ করে থাকে।
* ভেড়ার মাংস ওমেগা-৩ ফ্যাট এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ওমেগা-৩ যখন ওমেগা-৬ এ উন্নীত বা পরিবর্তিত হয় তখন সেটা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (cardiovascular disease) এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
* ভেড়ার মাংসে উৎকৃষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ এবং নায়াসিন (niacin) রয়েছে।
ভেড়ার মাংস খাওয়া যে ক্ষেত্রে নিষেধঃ
* যাদের গাউট/গেঁটেবাত (Gout) এবং কিডনিতে পাথর (Kidney stone) আছে তাদের ভেড়ার মাংস এড়িয়ে চলা উচিৎ।
* ভেড়ার মাংসে পিউরিন (purines) নামের এক ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে।
* পিউরিনযুক্ত (purines) খাবার গ্রহণ করলে শরীরে ইউরিক এসিডের (uric acid) পরিমান বেড়ে যায় এবং এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সুরূপ কিডনিতে পাথর ও গেঁটেবাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ভেড়ার রোগব্যাধি ও প্রতিকার (CAJ):
অ্যান্টেরোটক্সিমিয়া(Enterotoxaemia ):
ব্যাকটেরিয়াজনিত এ রোগে ভেড়া হঠাৎ করে মারা যায়। একসঙ্গে অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খেলে পাকস্থলীতে বিদ্যমান ক্লোসট্রিডিয়াম জীবাণুর আধিক্য ঘটে। এতে তীব্র বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে ভেড়া মারা যায়। বাড়ন্ত ভেড়াতে এ রোগ সাধারণত বেশি দেখা যায়।
লক্ষণঃ
রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই ভেড়া মারা যায়। তাপমাত্রা কমে গিয়ে শরীর কাঁপতে থাকে। পেটের ব্যথায় ভেড়া পা ছুড়তে থাকে; মাথা বাঁকা করে। পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
হঠাৎ মারা যায় বলে অ্যান্টেরোটক্সিমিয়া রোগে আক্রান্ত ভেড়ার চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। তবে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে এট্রোফিন সালফেট (৩ মি.লি, ৬ ঘন্টা পর পর) ইনজেকশন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
টিটেনাস---
টিটেনাস একটি মারাত্মক রোগ। ক্লোসট্রিডিয়াম টিট্যানি নামক জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী। কাটা বা ক্ষতস্থান দিয়ে জীবাণু প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে। ঘোড়ার মল এ রোগজীবাণুর অন্যতম উৎস।
লক্ষণঃ
খুব জ্বর হয়। প্রচুর- খিঁচুনিসহ শরীর শক্ত হয়ে যায়।
তৃতীয় অক্ষিপত্র (চোখের পাতার নিচের পাতলা পর্দা) ঝুলে পড়ে। মুখের দুই মাড়ি একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে থাকে, এটা ’লক-জ’ নামে পরিচিত। লালা পড়ে এবং পেট ফেঁপে যায়। খাবার ও পানি গিলতে পারে না।
আক্রান্ত প্রাণী অবশেষে মারা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
প্রোকেইন পেনিসিলিন-জি ইনজেকশন দিনে দু’বার করে ৩-৬ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে (প্রতি কেজি ওজনের জন্য মাত্রা: ২৫,০০০ আই.ইউ হিসেবে); অথবা
ক্লোরোপ্রোমাজিন ইনজেকশন (প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৪ মিলি গ্রাম হিসেবে) শিরায়, দিনে ২ বার, ১০-১২দিন; অথবা
এ.টি.এস ইনজেকশন (মাত্রা: ১,৫০০ আই.ইউ) চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে (দিনে একবার, ৩-৫ দিন)
যত্নঃ
আক্রান্ত প্রাণীকে অন্ধকারে রাখতে হবে। নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিউমোনিয়া---
সাধারণত পাসস্তুরেলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়। তাছাড়া ভাইরাস এবং মাইকোপ্লজমা দ্বারাও এ রোগ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের পীড়ন যেমন- খুব গরম বা ঠান্ডা, তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অল্প জায়গায় অধিক বাচ্চা রাখা, স্থানান্তর ইত্যাদির ফলেও নিউমোনিয়া হতে পারে।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত বাচ্চায় অবসন্নতা, প্রচুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দিকাশি ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। অনেক ক্ষত্রে হঠাৎ ভেড়ার বাচ্চা মারা যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
আক্রান্ত ভেড়াকে সালফারজাতীয় ওষুধ বা উচ্চক্ষমতা সমপন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইনজেকশন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধঃ
খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন এবং অবাধ বায়ু চলাচল নিশ্চিত করলে নিউমোনিয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
ব্রুসেলোসিস:
ব্রুসেলা ওভিস নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ভেড়ার এ রোগ হয়ে থাকে। গর্ভের শেষের দিকে এ রোগের কারণে ভেড়ার গর্ভপাত হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থা ছাড়াও সাধারণ অবস্থাতেও রোগটি হতে পারে।
লক্ষণঃ
গর্ভাবস্থায় এ ব্যাকটেরিয়া ভেড়ার জরায়ু ও গর্ভফুলকে আক্রান্ত করে গর্ভপাত ঘটায়। এ কারণে আক্রান্ত ভেড়া বহুদিন পর্যন্ত গর্ভধারণ করতে পারে না। পুরুষ ভেড়ার ক্ষেত্রে অন্ডকোষ ফুলে যায়; অনেক সময় ভেড়ার যৌনক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করে অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়। তবে আক্রান্ত ভেড়াকে পাল থেকে আলাদা করাই উত্তম।
পি.পি.আর:
ভাইরাসজনিত এই রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে। রোগটি ছাগলের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পি.পি.আর রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেক ছাগল মারা যায়। দেশি জাতের ভেড়াও এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে তা খুব কম।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত ভেড়া বা ছাগল ভেড়া প্রথমে সাধারণত পিঠ বাঁকা করে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল নিঃসৃত হয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়। মলের রং গাঢ় বাদামি, মাঝে মধ্যে আমাশয় দেখা দেয়। মুখের চারদিকে ও দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মারাত্মক নিউমোনিয়া দেখা যায় ও শ্বাসকষ্ট হয়। চিকিৎসা না করলে ৭-৯ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ভেড়া বা ছাগল মারা যেতে পারে। আক্রান্ত গর্ভবতী ভেড়ার গর্ভপাত হয়। মুখে ও পেটের ভিতর ঘা হওয়ায় ভেড়া কোনো কিছু খেতে পারে না।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করে মৃত্যুর হার কমানো যায়। পাশাপাশি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ও স্যালাইন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
জীবাণুর জটিলতা রোধ ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়। স্ট্রেপটোপেন ইনজেকশন ০.৫ গ্রাম ১০-২০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫ গ্রাম অথবা সালফোনেমাইডস ইনজেকশন (যেমন- ডায়াডিন) ৩০ মি.লি. দিনে ১৫ মি.লি. প্রতি ৫০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ৪-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।
অ্যান্টিহিস্টামিন ইনজেকশন (যেমন- হিস্টাভেট, হিস্টাসিনভেট ১০ মি.লি) প্রতি ১৫ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মি.লি হিসেবে ৩-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।
ডায়রিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনামাইড ট্যাবলেট/বোলাস (যেমন- রেনামাইসিন, টেট্রাভেট, স্ট্রিনাসিন ইত্যাদি) প্রতি ৫০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য একটি ট্যাবলেট/বোলাস ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।
এক লিটার পানিতে এক চা চামচ স্যালাইন (যেমন-গ্লকোলাইট, রেনালাইট, কেমোলাইট ইত্যাদি) মিশিয়ে দিনে৩-৪ বার খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধঃ
সুস্থ ছাগল ও ভেড়াকে পি.পি.আর রোগের টিকা দিতে হবে। এ রোগে মারা যাওয়া ভেড়া বা ছাগলকে পুড়িয়ে অথবা নিরাপদ গভীরতায় মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
একথাইমা:
একথাইমা রোগটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।ভাইরাসজনিত এ রোগ ছাগলের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেলেও ভেড়াতে কম দেখা যায়।
লক্ষণঃ
ভেড়ার মুখ, পা ও ওলান-এ তিনটি স্থানে রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমে ঠোঁটের কোনায় ঘা আকারে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ঘা ঠোটের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দাঁতের মতো দেখতে শক্ত ঘাগুলো অনেক সময় বাদামের মতো আকার ধারণ করে। পায়ে ঘা হলে ভেড়া দাঁড়াতে পারে না। মুখের ভেতর এবং চোয়ালে ফুলকপির মতো দেখতে ছোট ছোট টিউমার দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
ঘায়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ফিটকিরি দিয়ে ধুয়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
মিথাইলিন ব্লু / ক্রিস্টাল ভায়োলেট (২%) মুখে বা আক্রান্ত জায়গায় প্রতিদিন একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধঃ
টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তিন দিন বয়সে টিকার প্রথম ডোজ এবং ১০-১৪ দিন বয়সে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে।
ক্ষুরারোগ (F.M.D):
ভাইরাস ঘটিত এ রোগে বয়স্ক ভেড়ার চেয়ে বাচ্চা ভেড়া বেশি মারা যেতে পারে।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত ভেড়াকে প্রথমে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়; তীব্র জ্বর হয় ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে। মুখে, পায়ে ও দুই ক্ষুরের মাঝে ফোস্কা দেখা যায় এবং ফোস্কা গলে লাল বর্ণের ঘা হয়; পায়ের ক্ষতে মাছি পড়ে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ফিটকিরি বা পটাশের পানি দিয়ে আক্রান্ত ভেড়ার মুখ ও পায়ের ঘা ধুয়ে দিতে হবে। তারপর লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করাতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিসটামিনিক ও ব্যথানাশক ওষুধে আক্রান্ত ভেড়া সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিরোধঃ
আক্রান্ত ভেড়া থেকে সুস্থ ভেড়াকে আলাদা করতে হবে। সুস্থ অবস্থায় ভেড়াকে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে।
বসন্ত---
ভাইরাসজনিত এ রোগে তাৎক্ষণিক ক্ষতি কম হলেও ভেড়ার চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। বয়স্ক ভেড়ার চেয়ে এ রোগে বাচ্চা ভেড়ার মৃত্যুর হার বেশি। এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
লক্ষণঃ
বাচ্চা ভেড়াতে এ রোগ মারাত্মক আকারে দেখা যায়।
আক্রান্ত বাচ্চার ঝিমুনি, নিস্তেজ ভাব, জ্বর ও নাক দিয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। আবার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই বাচ্চা মারা যেতে পারে। বয়স্ক ভেড়ার ক্ষেত্রে পায়ুপথ ও মুখের চারপাশে, মুখ গহবরে, কানে ও দুধের বাঁটে বসন্তের গুটি দেখা যায়।
দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের ছিটা ও আমযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিনিক, ব্যথানাশক ইনজেকশন দিলে আক্রান্ত ভেড়ার মৃত্যুর হার কমানো যায়।
প্রতিরোধঃ
সুস্থ ভেড়াকে আক্রান্ত ভেড়া থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে। নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
ফ্যাসিওলিয়াসিস (কলিজাকৃমি/পাতাকৃমি):
আমাদের দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কলিজা কৃমিতে আক্রান্ত হয়। এ রোগকে ফ্যাসিওলিয়াসিস বলে। ঘাসের মাধ্যমে এ কৃমি পশুর শরীরে ঢোকে।
লক্ষণঃ
তীব্র প্রকৃতির কলিজা কৃমিতে কলিজায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এতে ভেড়া উঠা-বসা বা ছটফট করে এবং হঠাৎ মারা যায়।
দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণঃ
ভেড়া দিন দিন শুকিয়ে যাবে। খাদ্যে অরুচি দেখা যায় ও ভেড়া ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে পাতলা বা শক্ত পায়খানা করতে দেখা যায়। ভেড়ার পেট বড় হয়ে যায়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। চোয়ালের নিচে থলের মতো তরল পদার্থ জমে থাকে; এটা বটল জ’ নামে পরিচিত।
রোগ নির্ণয়:
রোগের ইতিহাস ও লক্ষণ দেখে (বিশেষ করে ডায়রিয়া, বটল জ’ দেখে) প্রাথমিকভাবে এ রোগ হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ফেসিনেক্স/ফেসিনিল /ফ্লুকেনিল, যেকোনো একটি ট্যাবলেট ৭০-৮০ কে.জি ওজনের জন্য খাওয়াতে হবে।
হিমোনকোসিস (গোলকৃমি):
হিমোনকাস কনটরটাস নামক গোলকৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ কৃমি ভেড়ার অন্ত্রে রক্ত ও পুষ্টি শোষণ করে ভেড়াকে দুর্বল করে দেয়। এতে ভেড়া মারাও যেতে পারে।
লক্ষণঃ
এ কৃমি ভেড়ার খাদ্য হজম ও শোষণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। খাদ্যে অরুচি, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা ও শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া। চোয়ালের নিচে পানি জমা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
আক্রান্ত ভেড়াকে এনডেক্স/ রেনাডেক্স ১৫০০ মি.গ্রা (৭০ কে.জির জন্য একটি ট্যাবলেট হিসেবে) খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধঃ
ভেড়াকে বছরে অন্তত দু’বার (বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে) কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং আক্রান্ত ভেড়ার চিকিৎসাকরতে হবে।
উকুন, আটালি ও মাইটের আক্রমণ:
লক্ষণঃ
ভেড়ার লোম উস্কখুস্ক হয়ে যায়; অনেক সময় লোম ঝরে যায়। ভেড়ার দেহে চুলকানি হয় এবং শক্ত বস্ত্তর সঙ্গে শরীর ঘষার ফলে অনেক সময় পশমসহ চামড়া উঠে যায়। আক্রান্ত ভেড়া অস্বস্তি বোধ করে। ভেড়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
ভেড়ার খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
রোগ নির্ণয়ঃ
ভেড়ার ত্বকে ও লোমে উকুন, উকুনের ডিম, আটালি ও মাইট দেখে রোগ নির্নয় করা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ভারমিক্স ইনজেকশন ৫ মি.লি, ০.৫ মি.লি/২০-২৫ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে।
পাশাপাশি অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইনকেজশন যেমন- হিস্টাভেট/হিস্টাসিনভেট ১০ মি.লি (১ মি.লি. প্রতি ১৫কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য) ৩-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করলে ভালো কাজ করে।
পেট ফাঁপা:
ভেড়াসহ অন্যান্য জাবর কাটা প্রাণীর (গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি) পাকস্থলীর প্রথম দুই অংশে পচা গ্যাসযুক্ত ফেনা জমে পেট ফেঁপে যায় যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দূর হয় না। অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফাঁপা বা টিম্পানি রোগ সৃষ্টি হয়। ভেড়াকে শুধুমাত্র লেগুমিনাস (শিমজাতীয় উদ্ভিদ) বা সবুজ লতা বা দানাদার খাদ্য অধিক খাওয়ালে এ রোগ হয়।
লক্ষণঃ
ভেড়ার বাম পাশের পেট হঠাৎ করে ফুলে যায়। আক্রান্ত ভেড়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। জাবর কাটা বন্ধ করে মাড়ি আটকে থাকে। শ্বাসকষ্ট হয়। প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ করে দেয়। ভেড়া অবশেষে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।
রোগ নির্ণয়ঃ
খাদ্যের ইতিহাস জেনে। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ট্রকার ও ক্যানুলা বা মোটা ইনজেকশনের সুঁই দিয়ে বাম পাশের ত্রিকোনাকার গর্তের ফাঁপা অংশে ছিদ্র করে গ্যাস বের করতে হবে। অ্যান্টিজাইমোটিক মিকচার (যেমন- জাইমোভেট/ডিজিভেট) এক প্যাকেট পানিতে গুলিয়ে সরাসরি পাকস্থলীতে ইনজেকশন দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : বিএলআরআই ।
তথ্য : সংগৃহীত ও সংকলিত ।
#সকল খামারি ভাইদের জন্য শুভ কামনায়---চাষা আলামিন জুয়েল ॥
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ভেড়া পালন জনপ্রিয়।
মাংস, উল ও দুধ উৎপাদনের জন্য ভেড়া পালন হয়ে থাকে।
বড় বড় বাণিজ্যিক খামারের মাধ্যমে ভেড়া পালন করা হয়, আবার পারিবারিক পর্যায়েও পালন করা হয়।
বিভিন্ন দেশে ভেড়ার মাংস বেশ জনপ্রিয়।
ভেড়া পালনের বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরা হলো--(CAJ)
* ভেড়া শান্ত ও ছোট প্রাণী; ফলে এদের খাদ্য ও আবাসনজনিত বিনিয়োগ এবং ঝুঁকি কম
* ভেড়া মাংস, পশম, চামড়া ও জৈবসার উৎপাদন করে
* ভেড়া গরু-ছাগলের সঙ্গে মিশ্রভাবে পালন করা যায়।
* একটি ভেড়া বছরে সাধারণত দু’বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার গড়ে দুটি করে বাচ্চা দেয়।
ভেড়া নির্বাচন :
পালনের জন্য ৭-১২ মাস বয়সী সুস্থ ভেড়া নির্বাচন করা উচিত। শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সাধারণত দু’ প্রকার ভেড়া দেখা য়ায়।
একটি জাতের কান খুব ছোট এবং লেজ খাটো।অন্যটির কান মোটামুটি বড় এবং লেজ মধ্যম আকৃতির।
সারা বিশ্বে ৯০০ এর অধিক জাতের ভেড়া রয়েছে । বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ভেড়ার জাতকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। যেমন-
* মাংস ও বাচ্চা উৎপাদনকারী জাত, আর্কট (কানাডা)।
* মাংস ও উল উৎপাদনকারী জাত যেমন:
ম্যারিনো (স্পেন), ছোটনাগপুরি (ভারত), বালুচি (আফগানিস্থান,ইরান, পাকিস্থান), ভাওয়ালপুরী (পাকিস্থান), লিংকন (ইংল্যান্ড), চিভয়েট (যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ), ডালা (সুইডেন) ইত্যাদি।
* দুধ উৎপাদনকারী জাত: ইস্ট ফ্রিজিয়ান ভেড়া--
ইস্ট ফ্রিজিয়ান ভেড়া পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করে ও দুধের গুণগত মানও ভালো। এছাড়া দুধ উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে আওয়াসি (আরব-সিরিয়ার মরু অঞ্চল) জাতের ভেড়াও অন্যতম।
সুস্থ্য ভেড়া চেনার উপায়ঃ
* চোখ, নাক, মুখ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হবে।
* লোম ও চামড়া মসৃণ এবং পরিষ্কার থাকবে।
* মুখের উপরে মাজেলে (কালো জায়গায়) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
* ঠিকমতো জাবর কাটবে।
* চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
* কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
* খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
* শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
* প্রস্রাব-পায়খানা স্বাভাবিক হবে।
* কোনো অচেনা লোক কাছে আসলে সজাগ হবে।
* মশামাছি তাড়াবে।
* দলবদ্ধ ভাবে মাঠে চরবে।
অসুস্থ ভেড়া চেনার উপায়ঃ
* চোখ অনুজ্জ্বল ও অপরিষ্কার হবে।
* লোম ও চামড়া অমসৃণ এবং অপরিষ্কার থাকবে।
* মুখের উপরে কালো জায়গা শুকনা দেখা যাবে।
* ঠিকমতো জাবর কাটবে না।
* দুর্বল ও হাড্ডিসার হবে।
* নড়াচড়া কম করবে ও খাবারের প্রতি আগ্রহ কম দেখাবে।
* রক্তশূন্যতার কারণে মুখ-চোখ ফ্যাকাশে দেখাবে।
* অস্বাভাবিক আচরণ করবে।
* দলছুট হবে এবং একসময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে বা শুয়ে থাকবে।
* প্রস্রাব-পায়খানা অস্বাভাবিক হবে।
* প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার খাবে না।
ভেড়ার বাসস্থান:
ভেড়া পালনের জন্য সঠিক বাসস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভেড়া মেঝেতে বা মাচায় পালন করা যায়। ভেড়া মাচায় পালন করা ভালো।
ভেড়ার ঘরের বৈশিষ্ট:
* ভেড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
* মেঝেতে পালন করলে ছালা বা চট অথবা খড় বিছানা * হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সাধারণভাবে ভেড়ার ঘর তৈরির করার ক্ষেত্রে পারিবারিক পর্যায়ে ৩-৭টি ভেড়ার জন্য ঘরের আয়তন ২৫ থেকে ৪০ বর্গফুট (৭ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া, ৬ ফুট উঁচু)।বাঁশ, চাটাই, টিন, কাঠ, খড় ব্যবহার করে এরকম ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।
* নিচু বা বন্যাপ্রবণ এলাকাভেদে মাচার উচ্চতা ১ থেকে দেড় ফুট বা বেশি হতে পারে।
ভেড়ার খাদ্য:
* ভেড়া চরে খেতে পছন্দ করে।
* ভেড়া ছাগলের মত লতা ও গুল্মজাতীয় গাছের পাতাও খায়।
* ভেড়া সহজে নতুন খাদ্যে অভ্যস্ত হয়।
* ভেড়া ঘাস, লতা-পাতা, শুকনো বা সংরক্ষিত ঘাস, খড়, দানাদার খাদ্য ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
* খাদ্যের অভাব দেখা দিলে ভেড়া খড়, নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।
পাঁঠা ভেড়ার খাদ্য:
* পাঁঠা ভেড়াকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
* ১৫ থেকে ২০ কে.জি ওজনের পাঁঠাকে দৈনিক ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম আমিষ সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
* প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঁঠাকে দৈনিক প্রায় ১০ গ্রাম করে গজানো ছোলা খাওয়াতে হবে।
* কাঁচা ঘাসের পরিমাণ কম হলে বছরে অনন্ত ২ বার ২-৩ মি.লি ভিটামিন এ.ই.ডি ইনজেকশন দিতে হবে।
* পাঁঠাকে কখনোই অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার দেওয়া যাবে না।
পালন ব্যবস্থাপনা:
গর্ভবতী ভেড়ার যত্ন---
* গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে ভেড়াকে দ্বিতীয় কোনো পাঁঠার কাছে নেওয়া যাবে না এবং কোনো কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
* গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ভেড়াকে নরম বিছানা দিতে হবে।
* গর্ভবতী ভেড়াকে আলাদা রাখতে হবে।
* গর্ভাবস্থায় ভেড়াকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার যেমন- গমের ভুসি, কাঁচা ঘাস, তিলের খৈল, ভিটামিন মিশ্রিত তরল পদার্থ, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।
বাচচা ভেড়ার পরিচর্যা ও যত্ন---
* বাচ্চা প্রসবের সময়ে গর্ভবতী ভেড়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শুকনো ও আলো-বাতাস চলাচল করে এমন খোলা ঘরে রাখতে হবে। নতুবা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* বাচ্চার শরীর যাতে মা-ভেড়া চেটে পরিষ্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এতে বাচ্চার শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
* পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক ও মুখ পরিষ্কার করে দিতে হবে।
প্রজনন ব্যবস্থাপনা:
* ভেড়া সাধারণত ৬-১২ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
* ভেড়ার ঋতুচক্র ১৩-১৯ বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
* ভেড়ার হিট পিরিয়ড ২৪-৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
* ভেড়ার গর্ভাধারণকাল ১৪৫-১৫০ দিন ।
পাল দেওয়ানোর নিয়ম:
* ভেড়া ডাকে আসার ১২ ঘণ্টা পর এবং ১৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে পাল দেওয়াতে হবে। ১৮ ঘণ্টা পর পাল দিলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে।
* কোনো ভেড়া রাতে ডাকে আসলে সেটাকে পরদিন সকালে একবার এবং আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওইদিন বিকালের মধ্যে আরেকবার পাল দেওয়াতে হবে।
* সকালে ডাকে এসেছে মনে হলে সেটাকে ওইদিন বিকালে ও পরদিন সকালে আরেকবার পাল দেওয়ানো ভালো।
* এ নিয়ম মেনে চললে ভেড়ার প্রজনন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি অনেকাংশে কমানো যায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে।
* সুস্থ এবং যে পাঁঠাকে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি পাল দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় না এমন পাঁঠার কাছে পাল দেওয়ার জন্য নিতে হবে।
ভেড়ার মাংসের বৈশিষ্ট:
* ভেড়ার মাংসে বিভিন্ন ধরণের খনিজ লবণ ও জিঙ্ক রয়েছে। ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে খনিজ লবণের প্রতিদিনের চাহিদার ৩৩ ভাগ পূরণ হয়ে থাকে। জিঙ্ক শরীরের ক্ষত নিরাময় এবং টেস্টস্টেরন (testosterone) এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে জিঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
* ভেড়ার মাংস আয়রন ও কপারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
* ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে আয়রনের প্রতিদিনের চাহিদার ১২ ভাগ এবং কপারের (copper) ৭ ভাগ পূরণ হয়ে থাকে।
* লোহিত রক্ত কনিকা উৎপাদনে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* কপার (copper) শরীরে আয়রন বিপাকে এবং লোহিত রক্ত কনিকা বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
* ভেড়ার মাংস গ্রহণ করলে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
* ভেড়ার মাংসে কার্বহাইড্রেডের উপস্থিতি থাকেনা এবং এর ফলে গ্লাইসেমিক সূচকের (glycemic index) মাত্রা খুব কম থাকে।
* ভেড়ার মাংস প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ৪ আউন্স (১১৪ গ্রাম) ভেড়ার মাংসে ২৭.৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যা প্রোটিনের প্রতিদিনের চাহিদার ৫৫ ভাগ পূরণ করে থাকে।
* ভেড়ার মাংস ওমেগা-৩ ফ্যাট এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ওমেগা-৩ যখন ওমেগা-৬ এ উন্নীত বা পরিবর্তিত হয় তখন সেটা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (cardiovascular disease) এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
* ভেড়ার মাংসে উৎকৃষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ এবং নায়াসিন (niacin) রয়েছে।
ভেড়ার মাংস খাওয়া যে ক্ষেত্রে নিষেধঃ
* যাদের গাউট/গেঁটেবাত (Gout) এবং কিডনিতে পাথর (Kidney stone) আছে তাদের ভেড়ার মাংস এড়িয়ে চলা উচিৎ।
* ভেড়ার মাংসে পিউরিন (purines) নামের এক ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে।
* পিউরিনযুক্ত (purines) খাবার গ্রহণ করলে শরীরে ইউরিক এসিডের (uric acid) পরিমান বেড়ে যায় এবং এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সুরূপ কিডনিতে পাথর ও গেঁটেবাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ভেড়ার রোগব্যাধি ও প্রতিকার (CAJ):
অ্যান্টেরোটক্সিমিয়া(Enterotoxaemia ):
ব্যাকটেরিয়াজনিত এ রোগে ভেড়া হঠাৎ করে মারা যায়। একসঙ্গে অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খেলে পাকস্থলীতে বিদ্যমান ক্লোসট্রিডিয়াম জীবাণুর আধিক্য ঘটে। এতে তীব্র বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে ভেড়া মারা যায়। বাড়ন্ত ভেড়াতে এ রোগ সাধারণত বেশি দেখা যায়।
লক্ষণঃ
রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই ভেড়া মারা যায়। তাপমাত্রা কমে গিয়ে শরীর কাঁপতে থাকে। পেটের ব্যথায় ভেড়া পা ছুড়তে থাকে; মাথা বাঁকা করে। পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
হঠাৎ মারা যায় বলে অ্যান্টেরোটক্সিমিয়া রোগে আক্রান্ত ভেড়ার চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। তবে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে এট্রোফিন সালফেট (৩ মি.লি, ৬ ঘন্টা পর পর) ইনজেকশন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
টিটেনাস---
টিটেনাস একটি মারাত্মক রোগ। ক্লোসট্রিডিয়াম টিট্যানি নামক জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী। কাটা বা ক্ষতস্থান দিয়ে জীবাণু প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে। ঘোড়ার মল এ রোগজীবাণুর অন্যতম উৎস।
লক্ষণঃ
খুব জ্বর হয়। প্রচুর- খিঁচুনিসহ শরীর শক্ত হয়ে যায়।
তৃতীয় অক্ষিপত্র (চোখের পাতার নিচের পাতলা পর্দা) ঝুলে পড়ে। মুখের দুই মাড়ি একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে থাকে, এটা ’লক-জ’ নামে পরিচিত। লালা পড়ে এবং পেট ফেঁপে যায়। খাবার ও পানি গিলতে পারে না।
আক্রান্ত প্রাণী অবশেষে মারা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
প্রোকেইন পেনিসিলিন-জি ইনজেকশন দিনে দু’বার করে ৩-৬ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে (প্রতি কেজি ওজনের জন্য মাত্রা: ২৫,০০০ আই.ইউ হিসেবে); অথবা
ক্লোরোপ্রোমাজিন ইনজেকশন (প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৪ মিলি গ্রাম হিসেবে) শিরায়, দিনে ২ বার, ১০-১২দিন; অথবা
এ.টি.এস ইনজেকশন (মাত্রা: ১,৫০০ আই.ইউ) চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে (দিনে একবার, ৩-৫ দিন)
যত্নঃ
আক্রান্ত প্রাণীকে অন্ধকারে রাখতে হবে। নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিউমোনিয়া---
সাধারণত পাসস্তুরেলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়। তাছাড়া ভাইরাস এবং মাইকোপ্লজমা দ্বারাও এ রোগ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের পীড়ন যেমন- খুব গরম বা ঠান্ডা, তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অল্প জায়গায় অধিক বাচ্চা রাখা, স্থানান্তর ইত্যাদির ফলেও নিউমোনিয়া হতে পারে।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত বাচ্চায় অবসন্নতা, প্রচুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দিকাশি ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। অনেক ক্ষত্রে হঠাৎ ভেড়ার বাচ্চা মারা যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
আক্রান্ত ভেড়াকে সালফারজাতীয় ওষুধ বা উচ্চক্ষমতা সমপন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইনজেকশন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধঃ
খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন এবং অবাধ বায়ু চলাচল নিশ্চিত করলে নিউমোনিয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
ব্রুসেলোসিস:
ব্রুসেলা ওভিস নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ভেড়ার এ রোগ হয়ে থাকে। গর্ভের শেষের দিকে এ রোগের কারণে ভেড়ার গর্ভপাত হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থা ছাড়াও সাধারণ অবস্থাতেও রোগটি হতে পারে।
লক্ষণঃ
গর্ভাবস্থায় এ ব্যাকটেরিয়া ভেড়ার জরায়ু ও গর্ভফুলকে আক্রান্ত করে গর্ভপাত ঘটায়। এ কারণে আক্রান্ত ভেড়া বহুদিন পর্যন্ত গর্ভধারণ করতে পারে না। পুরুষ ভেড়ার ক্ষেত্রে অন্ডকোষ ফুলে যায়; অনেক সময় ভেড়ার যৌনক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করে অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়। তবে আক্রান্ত ভেড়াকে পাল থেকে আলাদা করাই উত্তম।
পি.পি.আর:
ভাইরাসজনিত এই রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে। রোগটি ছাগলের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পি.পি.আর রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেক ছাগল মারা যায়। দেশি জাতের ভেড়াও এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে তা খুব কম।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত ভেড়া বা ছাগল ভেড়া প্রথমে সাধারণত পিঠ বাঁকা করে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল নিঃসৃত হয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়। মলের রং গাঢ় বাদামি, মাঝে মধ্যে আমাশয় দেখা দেয়। মুখের চারদিকে ও দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মারাত্মক নিউমোনিয়া দেখা যায় ও শ্বাসকষ্ট হয়। চিকিৎসা না করলে ৭-৯ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ভেড়া বা ছাগল মারা যেতে পারে। আক্রান্ত গর্ভবতী ভেড়ার গর্ভপাত হয়। মুখে ও পেটের ভিতর ঘা হওয়ায় ভেড়া কোনো কিছু খেতে পারে না।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করে মৃত্যুর হার কমানো যায়। পাশাপাশি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ও স্যালাইন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
জীবাণুর জটিলতা রোধ ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়। স্ট্রেপটোপেন ইনজেকশন ০.৫ গ্রাম ১০-২০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫ গ্রাম অথবা সালফোনেমাইডস ইনজেকশন (যেমন- ডায়াডিন) ৩০ মি.লি. দিনে ১৫ মি.লি. প্রতি ৫০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ৪-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।
অ্যান্টিহিস্টামিন ইনজেকশন (যেমন- হিস্টাভেট, হিস্টাসিনভেট ১০ মি.লি) প্রতি ১৫ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মি.লি হিসেবে ৩-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।
ডায়রিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনামাইড ট্যাবলেট/বোলাস (যেমন- রেনামাইসিন, টেট্রাভেট, স্ট্রিনাসিন ইত্যাদি) প্রতি ৫০ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য একটি ট্যাবলেট/বোলাস ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে।
এক লিটার পানিতে এক চা চামচ স্যালাইন (যেমন-গ্লকোলাইট, রেনালাইট, কেমোলাইট ইত্যাদি) মিশিয়ে দিনে৩-৪ বার খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধঃ
সুস্থ ছাগল ও ভেড়াকে পি.পি.আর রোগের টিকা দিতে হবে। এ রোগে মারা যাওয়া ভেড়া বা ছাগলকে পুড়িয়ে অথবা নিরাপদ গভীরতায় মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
একথাইমা:
একথাইমা রোগটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।ভাইরাসজনিত এ রোগ ছাগলের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেলেও ভেড়াতে কম দেখা যায়।
লক্ষণঃ
ভেড়ার মুখ, পা ও ওলান-এ তিনটি স্থানে রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমে ঠোঁটের কোনায় ঘা আকারে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ঘা ঠোটের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দাঁতের মতো দেখতে শক্ত ঘাগুলো অনেক সময় বাদামের মতো আকার ধারণ করে। পায়ে ঘা হলে ভেড়া দাঁড়াতে পারে না। মুখের ভেতর এবং চোয়ালে ফুলকপির মতো দেখতে ছোট ছোট টিউমার দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
ঘায়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ফিটকিরি দিয়ে ধুয়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
মিথাইলিন ব্লু / ক্রিস্টাল ভায়োলেট (২%) মুখে বা আক্রান্ত জায়গায় প্রতিদিন একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধঃ
টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তিন দিন বয়সে টিকার প্রথম ডোজ এবং ১০-১৪ দিন বয়সে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে।
ক্ষুরারোগ (F.M.D):
ভাইরাস ঘটিত এ রোগে বয়স্ক ভেড়ার চেয়ে বাচ্চা ভেড়া বেশি মারা যেতে পারে।
লক্ষণঃ
আক্রান্ত ভেড়াকে প্রথমে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়; তীব্র জ্বর হয় ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে। মুখে, পায়ে ও দুই ক্ষুরের মাঝে ফোস্কা দেখা যায় এবং ফোস্কা গলে লাল বর্ণের ঘা হয়; পায়ের ক্ষতে মাছি পড়ে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ফিটকিরি বা পটাশের পানি দিয়ে আক্রান্ত ভেড়ার মুখ ও পায়ের ঘা ধুয়ে দিতে হবে। তারপর লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করাতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিসটামিনিক ও ব্যথানাশক ওষুধে আক্রান্ত ভেড়া সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিরোধঃ
আক্রান্ত ভেড়া থেকে সুস্থ ভেড়াকে আলাদা করতে হবে। সুস্থ অবস্থায় ভেড়াকে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে।
বসন্ত---
ভাইরাসজনিত এ রোগে তাৎক্ষণিক ক্ষতি কম হলেও ভেড়ার চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। বয়স্ক ভেড়ার চেয়ে এ রোগে বাচ্চা ভেড়ার মৃত্যুর হার বেশি। এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
লক্ষণঃ
বাচ্চা ভেড়াতে এ রোগ মারাত্মক আকারে দেখা যায়।
আক্রান্ত বাচ্চার ঝিমুনি, নিস্তেজ ভাব, জ্বর ও নাক দিয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। আবার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই বাচ্চা মারা যেতে পারে। বয়স্ক ভেড়ার ক্ষেত্রে পায়ুপথ ও মুখের চারপাশে, মুখ গহবরে, কানে ও দুধের বাঁটে বসন্তের গুটি দেখা যায়।
দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের ছিটা ও আমযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিনিক, ব্যথানাশক ইনজেকশন দিলে আক্রান্ত ভেড়ার মৃত্যুর হার কমানো যায়।
প্রতিরোধঃ
সুস্থ ভেড়াকে আক্রান্ত ভেড়া থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে। নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
ফ্যাসিওলিয়াসিস (কলিজাকৃমি/পাতাকৃমি):
আমাদের দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কলিজা কৃমিতে আক্রান্ত হয়। এ রোগকে ফ্যাসিওলিয়াসিস বলে। ঘাসের মাধ্যমে এ কৃমি পশুর শরীরে ঢোকে।
লক্ষণঃ
তীব্র প্রকৃতির কলিজা কৃমিতে কলিজায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এতে ভেড়া উঠা-বসা বা ছটফট করে এবং হঠাৎ মারা যায়।
দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণঃ
ভেড়া দিন দিন শুকিয়ে যাবে। খাদ্যে অরুচি দেখা যায় ও ভেড়া ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে পাতলা বা শক্ত পায়খানা করতে দেখা যায়। ভেড়ার পেট বড় হয়ে যায়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। চোয়ালের নিচে থলের মতো তরল পদার্থ জমে থাকে; এটা বটল জ’ নামে পরিচিত।
রোগ নির্ণয়:
রোগের ইতিহাস ও লক্ষণ দেখে (বিশেষ করে ডায়রিয়া, বটল জ’ দেখে) প্রাথমিকভাবে এ রোগ হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ফেসিনেক্স/ফেসিনিল /ফ্লুকেনিল, যেকোনো একটি ট্যাবলেট ৭০-৮০ কে.জি ওজনের জন্য খাওয়াতে হবে।
হিমোনকোসিস (গোলকৃমি):
হিমোনকাস কনটরটাস নামক গোলকৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ কৃমি ভেড়ার অন্ত্রে রক্ত ও পুষ্টি শোষণ করে ভেড়াকে দুর্বল করে দেয়। এতে ভেড়া মারাও যেতে পারে।
লক্ষণঃ
এ কৃমি ভেড়ার খাদ্য হজম ও শোষণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। খাদ্যে অরুচি, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা ও শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া। চোয়ালের নিচে পানি জমা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
আক্রান্ত ভেড়াকে এনডেক্স/ রেনাডেক্স ১৫০০ মি.গ্রা (৭০ কে.জির জন্য একটি ট্যাবলেট হিসেবে) খাওয়াতে হবে।
প্রতিরোধঃ
ভেড়াকে বছরে অন্তত দু’বার (বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে) কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং আক্রান্ত ভেড়ার চিকিৎসাকরতে হবে।
উকুন, আটালি ও মাইটের আক্রমণ:
লক্ষণঃ
ভেড়ার লোম উস্কখুস্ক হয়ে যায়; অনেক সময় লোম ঝরে যায়। ভেড়ার দেহে চুলকানি হয় এবং শক্ত বস্ত্তর সঙ্গে শরীর ঘষার ফলে অনেক সময় পশমসহ চামড়া উঠে যায়। আক্রান্ত ভেড়া অস্বস্তি বোধ করে। ভেড়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
ভেড়ার খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
রোগ নির্ণয়ঃ
ভেড়ার ত্বকে ও লোমে উকুন, উকুনের ডিম, আটালি ও মাইট দেখে রোগ নির্নয় করা যায়।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ভারমিক্স ইনজেকশন ৫ মি.লি, ০.৫ মি.লি/২০-২৫ কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে।
পাশাপাশি অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইনকেজশন যেমন- হিস্টাভেট/হিস্টাসিনভেট ১০ মি.লি (১ মি.লি. প্রতি ১৫কে.জি দৈহিক ওজনের জন্য) ৩-৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করলে ভালো কাজ করে।
পেট ফাঁপা:
ভেড়াসহ অন্যান্য জাবর কাটা প্রাণীর (গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি) পাকস্থলীর প্রথম দুই অংশে পচা গ্যাসযুক্ত ফেনা জমে পেট ফেঁপে যায় যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দূর হয় না। অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফাঁপা বা টিম্পানি রোগ সৃষ্টি হয়। ভেড়াকে শুধুমাত্র লেগুমিনাস (শিমজাতীয় উদ্ভিদ) বা সবুজ লতা বা দানাদার খাদ্য অধিক খাওয়ালে এ রোগ হয়।
লক্ষণঃ
ভেড়ার বাম পাশের পেট হঠাৎ করে ফুলে যায়। আক্রান্ত ভেড়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। জাবর কাটা বন্ধ করে মাড়ি আটকে থাকে। শ্বাসকষ্ট হয়। প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ করে দেয়। ভেড়া অবশেষে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।
রোগ নির্ণয়ঃ
খাদ্যের ইতিহাস জেনে। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে।
চিকিৎসাঃ
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
ট্রকার ও ক্যানুলা বা মোটা ইনজেকশনের সুঁই দিয়ে বাম পাশের ত্রিকোনাকার গর্তের ফাঁপা অংশে ছিদ্র করে গ্যাস বের করতে হবে। অ্যান্টিজাইমোটিক মিকচার (যেমন- জাইমোভেট/ডিজিভেট) এক প্যাকেট পানিতে গুলিয়ে সরাসরি পাকস্থলীতে ইনজেকশন দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : বিএলআরআই ।
তথ্য : সংগৃহীত ও সংকলিত ।
#সকল খামারি ভাইদের জন্য শুভ কামনায়---চাষা আলামিন জুয়েল ॥



মন্তব্যসমূহ