সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

CAJ-গাভী পালন পদ্ধতি :

CAJ-গাভী পালন পদ্ধতি :

উতপাদনশীল গাভী নির্বাচন :
বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে বিশেষ উৎপাদনশীল গাভী পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ চট্টগ্রামের লাল গরু বা রেড চিটাগাং , পাবনা জেলার গরু ও ফরিদপুর জেলার গরু। তবে উতপাদনশীল গাভী নির্বাচনে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরী, সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো :

মাথাঃ মাথা হালকা ও ছোট আকারের হবে। কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল হবে। অধিক খাদ্য গ্রহণে আগ্রহী হবে।







দৈহিক আকারঃ দেহের সামনের দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুগঠিত হবে, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুসংগঠিত হবে। দৈহিক আকার আকর্ষণীয় হবে। শরীরের গঠণ ঢিলা হবে।

পাঁজরঃ পাঁজরের হাঁড় সুস্পষ্ট অনুভব করা যাবে। হাঁড়ের গঠন সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

চামড়াঃ চামড়া পাতলা হবে। চামড়ার নীচে চর্বির বাহুল্য থাকবে না। লোম মসৃন ও চকচকে হবে।

ওলানঃ গাভীর ক্ষেত্রে ওলান বড় ও সুগঠিত হবে ও দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পিছনের দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত হবে। বাটগুলি একই আকারের হবে। ৪টি বাট সমান দূরত্বে ও সমান্তরাল হবে।

দুগ্ধশিরাঃ দুগ্ধ শিরা মোটা ও স্পষ্ট হবে। তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।

প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ :
আঁশ জাতীয় খাদ্যঃ- শুষ্ক আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা ১০-১৫ ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমনঃ বিভিন্ন প্রকার খড়। রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা ৭০-৮৫ ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমনঃ কাঁচা ঘাস, লতাগুল্ম, বিভিন্ন গাছের পাতা, মাসকলাই, খেসারী ইত্যাদি।

দানাদার জাতীয় খাদ্যঃ- যেমনঃ বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় শস্যদানা ও শস্যদানার উপজাত। যেমনঃ ডালের ভূষি, গমের ভূষি, খৈল, চালের কুঁড়া ইত্যাদি।

খনিজ উপাদানঃ যেমনঃ- লবন, লাইমস্টোন, মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট, ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ইত্যাদি।

ফিড সাপ্লিমেন্ট/প্রিমিক্সঃ ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স, এমানো এসিড, অর্গানিক এসিড, এনজাইম ইত্যাদি।

গাভীর সুষম খাদ্য:
গাভিকে দৈনিক প্রয়োজনীয় অনুপাতে খড়, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যের মিশ্রন সরবরাহ করতে হবে।

৩০০ কেজি ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক-

উচ্চমান সম্পন্ন কাঁচা (সবুজ) ঘাসঃ ১০-১৫ কেজি।
খড়ঃ ৩-৪ কেজি
১৮%-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের মিশ্রন ২-৩ কেজি সরবরাহ করতে হবে।

দানাদার খাদ্যের আদর্শ নমূনা নিম্নরুপঃ
উপাদান --নমুনা ১----নমুনা ২----নমুনা ৩
গমের ভূষি ৩০ কেজি ৪০ কেজি ২০ কেজি
চালের কুঁড়া ১০ কেজি ১৫ কেজি ২০ কেজি
খেসারী ভূষি ২৬ কেজি ২০ কেজি ২০ কেজি
ভাঙ্গা ছোলা ১০ কেজি ১০ কেজি ১৬ কেজি
খৈল ২০ কেজি ১৬ কেজি ২০ কেজি
ঝিনুকের পাউডার/হড়ের গুড়া ০৩ কেজি ০৩ কেজি ০৩ কেজি
লবণ (অতিরিক্ত) ০১ কেজি ০১ কেজি ০১ কেজি
DB ভিটামিন ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
নিয়মঃ

১০০ কেজি ওজনের গাভীকে প্রতিদিন মিশ্রণের ৩ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
গাভী গর্ভবতী হলে ৫ম মাস থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত ১.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
দুধালো হলে প্রতি ২.৫ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

সাধারণতঃ গরুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ওজনের শতকরা ২ ভাগ আঁশ জাতীয় খাদ্য, শতকরা ১ ভাগ দানাদার জাতীয় খাদ্য ও ৪ ভাগ রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। অর্থাৎ গাভীর প্রাথমিক ওজন ২০০ কেজি হলে উক্ত গাভীর দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার জন্য ৪ কেজি শুষ্ক আঁশ জাতীয়, ২ কেজি দানাদার জাতীয় এবং ৮ কেজি রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।

গাভীর দৈনন্দিন পরিচর্যা:
* প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাদ্য প্রদান করতে হবে।
* পরিমিত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
* নিয়মিত গাভীকে গোসল করাতে হবে।
* গাভীর থাকার স্থান পরিস্কার ও শুস্ক রাখতে হবে।
* গোবর ও মূত্র নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
* গাভীর ঘর সংলগ্ন ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
* খাদ্য সরবরাহের পূর্বে খাদ্যের পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
* খাদ্য সংরক্ষন ঘর পরিস্কার করতে হবে।
* শুস্ক আঁশ জাতীয় খাদ্য সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে অর্থাৎ ছোট আকারে কেটে দিলে ভালো হয়।
* দানাদার খাদ্য সঠিকভাবে ভেঙে দিতে হবে।
* ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে হবে।
* ২-৪ মাস পর পর পশু চিকিৎসকের সহায়তায় গোবর পরীক্ষা করে দেখতে হবে গাভী কৃমি আক্রান্ত কিনা।
* প্রয়োজনে খামারে কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে।
* নিয়মিত রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

গাভীর বাসস্থান ব্যবস্থাপনা:
গাভীর বাসস্থান হতে হবে প্রচুর আলো বাতাসযুক্ত স্থান।
গোয়াল ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বীভাবে তৈরী করতে হবে। গোয়াল ঘর স্থাপনের ধরণ ৩ ধরনের হতে পারে। যথাঃ উন্মুক্ত ঘর, কমিউনিটি ঘর ও আবদ্ধ এবং প্রচলিত ঘর। আবদ্ধ ঘরে গরু এক সারি বা বহু সারিতে পালন করা যায়। দুই সারি বিশিষ্ট ঘর অন্তর্মূখী বা বহির্মূখী পদ্ধতিতে গাভী পালন করা হয়।

* প্রতি গাভীর জন্য গড়ে ৩৫-৪০ বর্গ ফুট (৮’x ৫')
জায়গার প্রয়োজন হবে। ঘরের মেঝে থেকে চালা এর
উচ্চতা কমপক্ষে ১০ ফুট হতে হবে। টিনের চালা
বিশিষ্ট ঘর হলে টিনের চালার নিচে চাটাই
ব্যবহার করতে হবে।
* গোয়াল ঘরে খাদ্য সরবরাহের জন্য ৫ ফুট প্রশস্ত
রাস্তা, খাদ্য পাত্র ও পানির পাত্রের জন্য ২ ফুট
এবং নালার জন্য ১ ফুট জায়গা রাখতে হবে ।
* গোয়াল ঘরের বর্জ নিষ্কাষনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন রাখতে হবে।
* ঘরের মেঝে পাকা হলে মসৃণ প্লাস্টার না করে খসখসে রাখতে হবে যাতে গরু পিছলিয়ে পড়ে না যায়। মেঝে নালার দিকে হালকা ঢালু হবে, কিন্তু তা সর্বোচ্চ ১.৫ ইঞ্চি হতে পারে।
* ঘরের দেয়াল নীচের দিকে সর্বোচ্চ ১.৫ ফুট হতে হবে যাতে শুয়ে থাকা  অবস্থায়ও পশুর শরীরের উপর দিয়ে বাহিরের বাতাস প্রবাহিত হয় এবং বাকী অংশ ১বর্গ ইঞ্চি ফাঁকা ফাঁকা রেখে জিআই তার দিয়ে বেষ্টনী দিতে হবে। ফলে গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারবে। তাতে গাভীর উৎপাদন বাড়বে এবং রোগ ব্যাধী কম হবে।
* গোয়াল ঘর প্রতিদিনই এক বা একাধিক বার ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গোবর, চনা ও খাদ্যের বর্জ্য পরিষ্কার করে তা নির্ধারিত পিট/গর্তে ফেলতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি খামারে বায়োগ্যাস প্লান্ট থাকে এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট এর পিটে বর্জ্য সরাসরি স্থানান্তর করা যায়।
* খামারে প্রতিদিন এন্টিসেপটিক স্প্রে করতে হবে । এতে রোগ সংক্রমণ কমবে, মশা-মাছির উপদ্রব কমবে। সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে গরুর সেড ভালভাবে পরিষ্কার করত হবে।

প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে গাভীকে প্রজনন করানো হয়ে থাকে । কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে
গাভীকে প্রজনন করানোর জন্য বর্তমানে বেশী উৎসাহ
করা হয়ে থাকে। কারণ এটা প্রজননের আধুনিক পদ্ধতি । এ পদ্ধতিতে উন্নত জাতের ষাড় থেকে বীজ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে গাভীতে প্রজনন করা হয় । এতে ষাড় থেকে বিভিন্ন রোগ গাভীতে স্থানান্তরিত হতে পারে না এবং সাথে সাথে গাভীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় । প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এর কেন্দ্রিয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে উন্নত জাতের ষাড়ের সিমেন উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং তা সারাদেশে বিতরণ করা হয় । এছাড়া বিভিন্ন এনজিও উন্নত জাতের বীজ আমদানী করে বা বিশেষ তথ্যাবধানে নিজস্ব খামারে বীজ উতপাদন করে গাভীকে কৃত্তিম প্রজনন এর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ।

কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো:
* আকারে বড় এবং স্বাস্থ্যবতী গাভীতে কৃত্রিম
প্রজনন করা প্রয়োজন।
* গাভী বা বকনা ডাকে আসলে কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠে, অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠতে চায়, যোনীদ্বার দিয়ে আঠালো ঝিল্লি নিঃসৃত হয়, স্থির হয়ে অন্য গরুকে
নিজের উপর লাফিয়ে উঠতে প্ররোচিত করে এবং
অন্য গাভীর যৌনাঙ্গ শুকতে/চাটতে থাকে। এসকল
লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে গাভী/বকনা ডাক
এসেছে।
* গাভীটিকে দক্ষ কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে।
* গাভী ডাকে আসার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করা উত্তম, এতে সফলতার হার বেশী হয়।
* প্রজননে সফলতার হার ৫৫% অর্থাৎ ১০০ গাভীকে
কৃত্রিম প্রজনন করানো হলে ৫৫টি গাভী গর্ভবতী
এবং বাচ্চা উৎপাদন হয়। অতএব যেসকল গাভী
বাচ্চা ধারণ করেনি সেগুলোকে ২০-২১ পর আবার
ডাকে আসলে পুণরায় প্রজনন করাতে হবে।
* কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে সংকরায়ন এর মাধ্যমে গাভীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
* ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত জাতের বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব।
ডেইরী শিল্প বিকাশে এটা বর্তমান সময়ের একটি উন্নত প্রযুক্তি। তবে এর ব্যবহার সীমিত। এ প্রযুক্তিতে ইন-ভিভো ফার্টিলাইজেশন করে গাভীর গর্ভধানীতে স্থানান্তর করে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। অতি সম্প্রতি মাংশল জাতের গরু উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে উন্নত ব্রাহমা জাতের ষাড়ের বীজ ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজনন করে সুফল পাওয়া গেছে । যা অতি শীগ্রই মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে।

গাভীর উন্নত জাতসমূহ :

হলিস্টিন-ফ্রিজিয়ান:
এ জাতের গরুর উৎপত্তিস্থান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে। হল্যান্ডের ভাষায় এদেরকে ফ্রিজিয়ান বলা হয়।এ জাত সাধারণত শীত প্রধান অঞ্চলের জাত।দুধাল গাভীর সকল জাতের মধ্যে এটা বড় আকৃতির জাত।

* ফ্রিজিয়ান গাভীর র্বণ সাধারনত ছোট বড় কাল ছাপযুক্ত এবং কখনো পুরোপুরি সাদা ও কালো হয় ।
* হলিস্টিন-ফ্রিজিয়ান গাভী আকারে সাধারনত বড় ও মাথা লম্বাটে সোজা হয়, কুজ অনুন্নত।
* গাভীর গড় ওজন ৫৫০-৬৫০ কেজি এবং ষাড়ের গড় ওজন ৮০০-৯০০ কেজি হয়ে থাকে।
* প্রথম গর্ভধারণের বয়স ১৮-২৪ মাস।
* পেছনের পা সোজা ।
* সদ্যজাত বাছুরের গড় ওজন ৩০-৩৬ কেজি।
* গাভীর ওলান বড় এবং দৈনিক হলিস্টিন-ফ্রিজিয়ান ২৫-৪০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

জার্সি:
জার্সি জাতের উৎপত্তি ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক ব্রিটিশ দ্বীপ থেকে। এই জাতটি এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশী পরিমানে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ।
* বিদেশী দুধাল গাভীর মধ্যে জার্সির আকার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকার।
* লম্বা দেহ , ভারী নিতম্ব ও খাটো পা ৷ চূড়া হতে কোমড় পযন্ত পিঠ একদম সোজা থাকে ৷
* মুখবন্ধনী কালো ও চকচকে হয় ৷ মাথা ও ঘাড় বেশ মানানসই, শরীর মেদহীন।
* গায়ের রং লাল বা মেহগিনি রং বিশিষ্ট। বিশেষ করে মুখের দিকে একটি ঢালাও রঙের উপর সাদা সাদা দাগ যুক্ত থাকে। সাদা দাগ গুলো খুব কমও হতে পারে আবার খুব বেশীও হতে পারে । খুব বেশী হলে সারা শরীর অনেকটা সাদা রং ধারণ করে ।
* জিহবা ও লেজ কালো।
* শিং পাতলা এবং সামনের দিকে সামান্য বাঁকানো থাকে ৷
* একটি প্রাপ্ত বয়স্ক জার্সি জাতের গাভীর ওজন ৪০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড় ৫৪০ থেকে ৮২০কেজি হয়ে থাকে ।
* জন্মের পর বাছুরের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি পর্যন্ত হয় । গাভী এবং ষাঁড় উভয়েই অন্যান্য জাতের গরু থেকে ছোট আকারের হয়ে থাকে ।
* গড়ে দৈনিক ১২ লিটার দুধ উতপাদন ক্ষমতা ।

শাহীওয়াল:
শাহীওয়াল এই উপমহাদেশের দুধাল গাভী রূপে সুপরিচিত। শাহীওয়াল গাভী দুধ উৎ‌পাদনের জন্য একটি উৎ‌কৃষ্ট জাত। শাহীওয়াল গরুর কিছু বৈশিষ্ঠ্য নিম্নে দেওয়া হলো।

* শাহীওয়াল গরুর উৎপত্তি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী জেলা।
* শাহীওয়াল জাতের গরু ধীর ও শান্ত প্রকৃতির।
* শাহীওয়াল জাতের গরু আকারে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা ভারী দেহ।
* সাধারণত এ জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাসে লাল বা হালকা হলুদ।। তবে কখোনো গাঢ় লাল বা লালের মাধে সাদা ও কালো ছাপযুক্ত হয়।
* গাভীর ওজন ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-১০০০ কেজি।
* জন্মকালে বাছুরের ওজন ২২-২৮ কেজি।
* মাথা প্রশস্ত, পা ছোট, শিং ছোট কিন্তু মোটা।
* গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে।
* শাহীওয়াল জাতের গরুর ত্বক পাতলা ও শিথিল।
* গাভীর ওলান বেশ বড়, চওড়া, নরম, মেদহীন এবং ঝুলন্ত। বাটগুলো লম্বা মোটা ও সমান আকৃতি বিশিষ্ট। * দুগ্ধ শিরা বেশ স্পষ্ট যা দূর থেকেও বোঝা যায়।
* ষাঁড়ের চূড়া অত্যাধিক বড়।
* লেজ বেশ লম্বা, প্রায় মাটি ছুয়ে যায়। লেজের আগায় দর্শনীয় এক গোছা কালো লোম থাকে।
* বলদ বা ষাঁড় ধীর ও অলস।
* বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ২১৫০-৪০০০ লিটার। দৈনিক ১২ লিটার । চর্বির পরিমান ৪.৫%।

সিন্ধি:
লাল সিন্ধি জাতের গরু উৎপত্তি: পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচী, লাসবেলা ও হায়দারাবাদ। উৎ‌পত্তি পাকিস্তানে হলেও বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে এ জাতটির বিস্তার রয়েছে।

সাধারণ বৈশিষ্টঃ
* গায়ের রং লাল বলে নাম লাল সিন্ধি।
* গাভী অপেক্ষা ষাঁড়ের গায়ের রং বেশি গাঢ় হয়।
* মাথা ও মুখমন্ডল ছোট, চওড়া কপাল, কপালের মাঝের অংশ কিছুটা উঁচু।
* ঘাড় খাটো ও মোটা। নাভী বড় ও ঝুলানো, বুক প্রশস্ত।
* ষাঁড়ের চূড়া বেশ উঁচু, গলকম্বল বৃহদাকার ও ভাঁজযুক্ত।
* ওলানের গঠন বেশ সুন্দর।
* গাভীর ওজন ৩৫০ – ৪০০ কেজি ও ষাড়ের ওজন ৪২৫ – ৫০০ কেজি।
* এই জাতের গাভী ৩৫০ দিন দুধ দেয়।
* দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৮-১০লিটার। বাৎসরিক গড় দূগ্ধ উৎপাদন প্রায় ২০০০ লিটার। দুধে চর্বির পরিমান ৫% এর উপরে।
* জন্মকালে বাচ্চার ওজন ২১ – ২৪ কেজি।
* এই জাত আমাদের দেশী আবহাওয়ায় মোটামুটি অভিযোজিত।
* বলদ বা ষাঁড় দ্বারা গাড়ীটানা ও হালচাষ ভাল ভাবে করা যায়।
* ১৬-১৮ মাসে বয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

ব্রাহমা:

উৎপত্তিঃ-
ইংরেজী শব্দ (Brahman) এর বাংলা ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে ব্রাহমা নামে পরিচিত। এ জাতের গরুর আদি আবাস স্থল আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ। মূলতঃ ভারতীয় ৩ ধরণের গরুর উপজাত থেকে ব্রাহমা জাত তৈরি হয়েছে। এ উপজাত গুলো হলো গুজরাট, নেলোর এবং গীর। ব্রাহমা জাতের গরু ৪০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও স্বাভাবিক আচরণও খাদ্য গ্রহন করে থাকে, তেমন কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। উক্ত তাপমাত্রায়ও ব্রাহমা জাতের গরুর প্রজনন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকে। শীতপ্রধান আবহাওয়ায় ব্রাহমা জাতের গরুর গায়ের শক্ত ও লম্বা লোম যুক্ত কম্বলের মত মোটা চামড়া অতিরিক্ত শীত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

দৈহিক আকারঃ-
* মাংসল জাতের গবাদি পশুর মধ্যে ব্রাহমা জাতের গবাদি পশুর শরীরের আকার মাঝারী ধরনের হয়ে থাকে।
* পা তুলনা মূলক ভাবে লম্বাকৃতির হয়।
* জন্মকালীন বাচ্চার ওজন ২৮-৩৫ কেজি। এক বছর বয়সে বাছুরের ওজন ৩৫০-৪০০ কেজি। পূর্ন বয়স্ক গাভীর ওজন ৪৫০-৬৫০ কেজি। পূর্ন বয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০-১০০০ কেজি।
* মাথার গঠন:- মাথা সাধারণত ছোট ও লম্বা আকৃতির হয়।
* শিংঃ- নেই বললেই চলে অথবা খুবই ছোট আকৃতির হতে পারে।
* কুঁজঃ- ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের কুঁজ অনেক বড় আকৃতির হয় এবং গাভীর কুঁজ একটু ছোট হয়।
* চামড়াঃ- ব্রাহমা জাতের গরুর চামড়া সাধারণত নরম ও ঢিলা হয়।
* গলার নীচে দীর্ঘ ও লম্বাকৃতির তুলতুলে গল কম্বল বিদ্যমান।
* এ জাতের গরুর গায়ে ছোট ও মোটা লোমযুক্ত চকচকে চামড়া থাকে।
* এ সকল বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত চামড়া ও লোমের জন্য ব্রাহমা বেশ গরম সহ্য করতে পারে।

গায়ের রংঃ-
* ব্রাহমা জাতের বাছুর জন্মের সময় হালকা ধূসর থেকে লাল রংয়ের হয়। অনেক সময় কালো রঙয়ের হয়ে থাকে। পূর্নবয়স্ক ষাঁড় সাদা ও কালো রঙয়ের হয় এবং এদের ঘাড়, কুঁজ ও পায়ের নীচের দিকের রং বেশ গাঢ় দেখা যায়।

ব্রাহমা জাতের মাংস উৎপাদন দক্ষতাঃ-
ব্রাহমা জাতের গরুর সেলাইভারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত লালা পরিপাক ক্রিয়া তরান্বিত করে এবং খাদ্য উপাদান সমূহ শোষণের পর রক্ত স্রোতের মাধ্যমে খাদ্য উপাদানকে মাংসে রূপান্তর করতে পারে।
সাধারন ব্রাহমা জাতের গরু কম পানি পান করে। ফলে মল মূত্রের মাধ্যমে এ জাতের গবাদি পশুর শরীর থেকে কম পরিমাণ নাইট্রোজেন নিসৃত হয়। ফলশ্রুতি তে রক্তের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকে।
ব্রাহমা জাতের গরুর পাকস্থলীর আকার ছোট এবং উচ্চ মাত্রায় রুমেন মাইক্রোফ্লোরা বিদ্যমান থাকে। ফলে নিম্নমানের খাদ্যকে পরিবর্তিত করে ভাল মানের আমিষে পরিনিত করে শারীরিক বৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ-
ব্রাহমা জাতের গবাদি পশু অন্যান্য জাতের গবাদি পশু থেকে বেশী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
এ জাতের গবাদি পশুর চামড়া চকচকে ও মোটা বিধায় উকন, আটালী ও মাইট সহ বহিঃ পরজীবির বংশ বৃদ্ধির জন্য অনুকুল নয়। সিবেসিয়াস নামক একপ্রকার গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ পরজীবি বিতারন ও দূরীকরণের জন্য বিতারক (Repellent) হিসেবে কাজ করে।

মাংস উৎপাদন ক্ষমতাঃ-
* ব্রাহমা জাতের গরুর রুমেন ছোট হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তাদের শরীর অধিক মাংসল হয়।
* বিক্রয় যোগ্য মাংসের পরিমান (নাড়ি-ভূড়ি ও অতিরিক্ত চর্বি ব্যাতিত) তুলনামূলক বেশী হয়।
* এ জাতের গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বির সমতা বজায় থাকে।
* লক্ষণীয় বিষয় হলো ব্রাহমা গরুর মাংস পেশীর অভ্যন্তরে চর্বির পরিমান (Intramuscular fat) কম থাকে। ফলশ্রুতিতে চর্বিজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভবনা কম থাকে।

থারপারকার:
সাদা বর্ণের থারপারকার গরু মাঝারি আকার, সুগঠিত দেহ, উঁচু কপাল, চোখের পাপড়ি কালো ও চোখ উজ্জ্বল, বড় শিং এর গোড়া মোটা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। গাভীর গড় ওজন ৪০০-৪৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৫০০-৬০০ কেজি পর্যন্ত হয়।
বছরের গড় দুধ উৎপাদন ৪,০০০-৪,৫০০ লিটার পর্যন্ত হয়।
#একটা পরিকল্পিত খামার একটি সম্ভবনা, একটি সফলতা, অনেকগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে । তাই আমাদের খামার হোক আধুনিক ও পরিকল্পিত । ঘুচে যাক বেকারত্ব । দরিদ্রতার কষাঘাত থেকে নিজে মুক্ত হয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারলেই জন্ম হবে যথার্থ ---চাষা আলামিন জুয়েল ॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...