সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
নড়াইলে ব্যক্তি উদ্যোগে কুচিয়া (ELL FISH) চাষঃ----

মো. ফায়েজুর রহমান বুলবুল। পেশায় একজন মৎস্যচাষী। নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবনে তার জুড়ি নেই। নতুন কোনো চাষ কিংবা ফসল দেখলেই তিনি তা করার চেষ্টা করেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী এই লোকটির সাথে ২০১৩ সালের দিকে যশোরে জাপানি এক নারীর পরিচয় হয়, যিনি বাংলাদেশে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতে এসে বাগেরহাটে কাঁকড়ার চাষ করেছিলেন।

কিন্তু নড়াইলের মাটি আর পানি কাঁকড়া চাষে উপযোগী নয়, তাই বুলবুলকে কুচিয়া চাষের পরামর্শ দেন। আশেপাশে কোথাও কুচিয়া চাষের ব্যাপারে কোনো পরামর্শ না পেয়ে তিনি যোগাযোগ করেন ময়মনসিংহ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটে। সেখান থেকেও ভালো কোনো পরামর্শ পেলেন না। এভাবে কেটে যায় আরও একটি বছর। অবশেষে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ক্যাটালিস্ট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের একটি কৃষি উদ্যোক্তা দলের সঙ্গে ভিয়েতনামে ক্রসব্রিডিং মৎস্যচাষসহ নানা গবেষণামূলক কাজ দেখতে যান। ভিয়েতনামের একটি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে কুচিয়া চাষ দেখে নিজে এই চাষ করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন। ওই ইনস্টিটিউট থেকে কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের মৎস্য হ্যাচারির পাশে একটি ছোট কুচে ব্রিডিং পয়েন্ট তৈরি করেন। এরপর কুচিয়া পালনের জন্য ৩ মিটার চওড়া ও ৯ মিটার লম্বা একটি ছোট পালন কেন্দ্র তৈরি করেন যার গভীরতা ৬০ সেন্টিমিটার।
তারপর গ্রামের বিল থেকে ৪০ টি কুচিয়া সংগ্রহ করেন ব্রিডিং এর জন্য। তখনও তিনি পুরুষ কিংবা স্ত্রী প্রজাতি চেনেন না। ৩ মাস পরে লক্ষ করে দেখেন কয়েক জোড়া থেকে ডিম ছাড়া শুরু হয়েছে। এসময় কুচিয়া ব্রিডিং এর খাবারসহ অন্যান্য বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করেন, কখনো ইন্টারনেট ঘেটে কিছু বের করার চেষ্টা করেন। কিছুদিন পরে লক্ষ করেন তার সেই ডিম ফুটে অন্তত ৫০০ টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। ইতোমধ্যে নিজে কুচিয়াদের পরিচর্যা করতে গিয়েই তিনি স্ত্রী আর পুরুষ কুচিয়া চিনে ফেলেছেন। নিয়মিত পরিশ্রমের মাধ্যমে বুলবুল অবশেষে কুচিয়া তৈরি করতে পেরেছেন, বর্তমানে তার খামারে বাচ্চা কুচিয়া গুলো বড় হচ্ছে। মাস খানেক পরেই তিনি নিজে উৎপাদিত কুচিয়া বিক্রি করতে পারবেন।
কুচিয়া বা ELL FIHS-এর বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। অঞ্চল ভেদে কুচে বা কুইচ্চা নামেও যার পরিচয়। একেকটি কুইচ্চা ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।বাংলাদেশের খালে - বিলে কাদামাটির মধ্যে এদের বসবাস। কুইচ্চা গভীর পানিতে বাস করতে পারে না। খাল,ডোবা, অল্পপানির জলাশয়-এ তার আবাসস্থল। দেশে বহুকাল ধরে কুচিয়া অল্প কিছু লোকের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হলেও অধিকাংশ মানুষ মনে করে এটি অখাদ্য, তবে বাইন মাছের প্রজাতির এই কুচিয়া মাছ বাংলাদেশের বাইরে জাপান, চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া সহ অনেক দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদেশে সাধারনত ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের কুচিয়ার চাহিদা বেশি। স্থানীয়ভাবে এক কেজি কুচিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু রপ্তানিকারকরা অনেক অধিক মূল্যে বিদেশে পাঠান । চায়নার Alibaba.com-এ প্রতি কেজি $15-$20 ( ১২০০- ১৬০০ টাকা ) ডলার মুল্যে বিক্রি হতে দেখা যায়।
প্রতি বর্গমিটার জায়গায় ৪০টি কুচিয়া পালন করা সম্ভব। অর্থাৎ এক একর জায়গায় প্রায় ১,৫০,০০০(দেড় লক্ষ) কুচিয়া পালন করা যাবে।  এই কুচিয়া পালনে সে তুলনায় তেমন কোন খরচই হবেনা। এক বছরে একটি কুচে ৩০০ গ্রাম ওজন হবে যা রপ্তানিযোগ্য। ২৫০ টাকা কেজি দর হিসেবে যার বাজার মূল্য( ৯৩,৭৫,০০০ ) প্রায় এক কোটি টাকা।
কুচেদের খাবার সাধারনত উচ্ছিষ্ট মুরগির নাড়িভুড়ি আর কেচো। এছাড়া বাচ্চা অবস্থায় ডিমের কুসুম, মাছের শুটকি এগুলো দিতে হয়। চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ হওয়ায় এবং এদের খাবার স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা যায় বলে, বাড়িতে নারীরাও সহজে অল্প জায়গায় কুচে পালন করে লাভবান হতে পারবেন বলে জানালেন বুলবুল।
বুলবুলের খামারে কুচিয়া চাষ দেখে স্থানীয় মৎস্যচাষীরা উৎসাহিত হয়ে পড়ছেন।
নড়াইলের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিপদ মন্ডল বলেন,  বুলবুল সাহেব অত্যন্ত সৃজনশীল একজন মানুষ। তিনি ভিয়েতনাম থেকে কুচিয়া চাষ পদ্ধতি শিখে এসেছেন। বাংলাদেশের মধ্যে নড়াইলে প্রথমবারের মতো কুচিয়া চাষে নড়াইলের একজন চাষী সফল হতে চলেছেন, আশা করি তিনি সফল হবেন। কুচিয়া চাষ সফল হলে আমাদের দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
সিলেট, বরিশাল, পাবনাসহ প্রায় ১০-১২টি জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে কুচিয়া মাছ বিদেশে রফতানি করা হয়। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কুচিয়া মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রক্তশূন্যতা ও বাতব্যথা দূর করে এ মাছ- এমন বিশ্বাস রয়েছে অনেকের মনে। এ মাছ রফতানিতে ঢাকার উত্তরার ১২নং খালপাড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০/৫০টি কুচা আড়ত কোম্পানি। সিলেটে ও বেশ কয়েকটি কুইচ্চা আড়ৎ রয়েছে। তন্মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুরের পথমুখ রশিদপুরেও একটি কুইচ্চা আড়ৎ রয়েছে। রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় প্রায় ৩০/৪০ টন কুচিয়া মাছ আসে। পরে তা চীন, হংকং, তাইওয়ান, মালোশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় সাত-আটটি দেশে রফতানি করা হয়। বিস্তারিত জানতে বা পোনার জন্যযো গোযোগ করতে পারেন -- রেজাউল,নওগাঁ : ০১৭৪৫৫০৮৪৩১.
তথ্য সুত্রঃ অনলাইন ডেস্ক।

* বিভিন্ন মৎস্য খামারি, মৎস্য হ্যাচারি মালিক ও নতুন উদ্যোগতাগন কুচিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে আমার বিশ্বাস---- চাষা আলামীন জুয়েল *

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...