সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
গ্রিন সুপার রাইস--বিজ্ঞানীদের আর এক স্বপ্নের ধান:

এক সবুজ বিপ্লবের লক্ষ্যে এক দল বিজ্ঞানী শুরু করেছিলেন নতুন এ ধান সৃষ্টির গবেষণা। মূলত এ গবেষণার নেতৃত্ব ছিলেন এক দল চীনা বিজ্ঞানী। আর প্রকল্পের নেতৃত্ব ছিল চাইনিজ একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সাইন্সেন্স নামক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা।

পরে ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ময়মনসিংহে অবস্থিত বিনায় (বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট) এর গবেষণা কাজ শুরু হয়। গবেষণা শেষে ধরা দিয়েছে সফলতা। আর এর মাধ্যমে দেশে কৃষিতে যুক্ত হলো আমনের নতুন জাত গ্রিন সুপার রাইস বা বিনা ধান-১৭ জিএসআর।


এ ধানের উদ্ভাবক বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম অপু। আমন মৌসুমে এ ধানের আবাদ দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

মূলত গ্রীন সুপার রাইস নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয় চীনে। এরপর পাঁচ বছর আগে ইরির (ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট) মাধ্যমে ময়মনসিংহে অবস্থিত বিনায় এর গবেষণা শুরু হয়। গবেষণা শেষে দেশের ১০টি কৃষি অঞ্চলের মাঠে এটি চাষাবাদ করে সফলতা আসে। ২০১৪ সালে মাঠপর্যায়ের মূল্যায়ন সফলভাবে শেষ হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ ধান পাঠানো হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বীজ বোর্ডে। জাতীয় বীজ বোর্ডের কারিগরি সভায় ধানটি ছাড়করণের জন্য সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়।

গ্রিন সুপার রাইসের মূল গবেষক বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম অপু বলেন, গ্রিন মানে পরিবেশবান্ধব। নতুন এ জাতে রাসায়নিক সার কম লাগে। কীটনাশক দিতে হয় না। পানি কম প্রয়োজন পড়ে। পরিবেশবান্ধবের কারণেই এটিকে গ্রিন বলা হয়েছে। আর সুপার বলা হয়েছে এটি সেরা ধান বলে। এর উৎপাদন অন্য ধানের তুলনায় বেশি বলে। সব মিলিয়ে এর নাম হয়েছে বিনা ধান-১৭ জিএসআর। বাংলাদেশে আমন মৌসুমে বিনা ধান-১৭ জিএসআরের ফলন অন্য যেকোনো উচ্চ ফলনশীল ধানের চেয়ে বেশি। অন্য ধান যেখানে প্রতি হেক্টরে গড়ে চার টন থেকে সাড়ে চার টন উৎপাদন হয় সেখানে গ্রিন সুপার রাইস সাত টনের মতো উৎপাদন হয়। বিজ্ঞানীদের তদারকিতে, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনায় এ ধান আবাদ করলে আমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে এর উৎপাদন আট টন পর্যন্ত হতে পারে। অন্য ধান উৎপাদনে যেখানে ১৩০-১৪০ দিন লাগে, সেখানে বিনা ধান-১৭ জিএসআর ১১০-১৫ দিনে উৎপাদন সম্ভব। এ ছাড়া এ জাতটি খরা সহিষ্ণু।

কৃষিতে এ ধান কেমন অবদান রাখবে, এ প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বাংলাদেশে আমন মৌসুমে কৃষি জমির এলাকা বেশি হলেও ফলন কম। কারণ ভালো জাতের অভাব। এ গ্রিন সুপার রাইস আবাদ শুরু হলে উৎপাদনের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যাবে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তাকে আরো দৃঢ় করবে। ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম অপু বলেন, বিনা ধান-১৭ জিএসআর আবিষ্কার দেশের ধান চাষে নতুন মাইলফলক। এ ধান পরিবেশবান্ধব, চাষাবাদে সময় কম লাগে,এর ফলনও বেশি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও খাদ্য উৎপাদনকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এ ধান।

ড. অপু এর আগে খরা, বন্যা ও লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন, যা এনেছে পৃথিবীব্যাপী প্রশংসা। কৃষি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গত বছর ড. মির্জার গবেষণা দল ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে। এছাড়াও কৃষিতে পরমাণুর ব্যবহার বিষয়ক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপনে ওই বছরই তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনসিস্টিউটের বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড।

উল্লেখ্য, সফল বিজ্ঞানী, গবেষক কৃষিবিদ ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম অপু ১৯৬৫ সালের ২০ মে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার আগচারান গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নটরডেম কলেজ হতে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৭ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি বিএসসি এজি (অনার্স) ও ১৯৮৮ সালে জেনেটিকস ও প্লান্ট বিৃডিং বিভাগ হতে এমএসসি (এজি) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার স্ত্রী ড. শামছুন্নাহার বেগম (লুনা) একই প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

CAJতথ্য সূত্র : বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিউট (বিনা )।

#আধুনিক প্রযুক্তির ছায়ায় বদলে যাক বাংলার কৃষি , সমৃদ্ধ হোক প্রতিটি কৃষক , সমৃদ্ধ হোক কৃষি অর্থনীতি, সমৃদ্ধ হোক দেশ, সেই প্রত্যাশায় ---চাষা আলামিন জুয়েল ॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...