মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু ধারনা----
CAJ ভূমিকা--বাংলাদেশে মৎস্য চাষ একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত। দেশের মানুষের সিংহভাগ আমিষের চাহিদা পুরন করে এই খাত। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব দূরীকরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য খাতের যথেষ্ট ভূমিকা ও গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার ও টেকসই পদ্ধতি অনুসরনের মাধ্যমে এই খাতকে আরো বেশী লাভজনক করা এবং একই পরিমান জায়গায় বর্তমানের তুলনায় অধিক উৎপাদন সম্ভব।ইতিমধ্যে অনেক মাছ চাষি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে সফলতা পেয়েছেন। আশার কথা হচ্ছে, এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই যে যার অবস্থান থেকে প্রযুক্তি উন্নয়নে সচেষ্ট। আধুনিক এই যুগে উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহ খুব বেশী কঠিন কাজ নয়। চাষিরা যত তারাতারি উন্নত প্রযুক্তি ও উপকরনে অভ্যাস্ত হবে, তত দ্রুত এই খাত এগিয়ে যাবে। মৎস্য খামারের মোট ব্যায়ের সিংহভাগ ব্যায় হয়ে থাকে খাদ্য সরবরাহে। তাই খাদ্যখরচ কমিয়ে আমারা উৎপাদন খরচ কমাতে পারি। সঠিক পুষ্টিগুণ ও কম এফসিআর সম্পন্ন খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্য খরচ কমিয়ে আনা যাবে। অপচয় রোধ ও ভালো মানের খাদ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মাছ চাষে করনীয়----
আধুনিক পদ্ধতি ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষের জন্য নিন্মে উল্লেখিত বিসয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী---
Ω কিভাবে পুকুর তৈরি করবেন------ ??
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উত্তমরূপে পুকুর প্রস্তুতির উপর মাছের উৎপাদন ও খামারের লাভ-লোকসান অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভালো ভাবে পুকুর প্রস্তুত না হলে মাছ রোগাক্রান্ত হওয়া, মাছ মরে যাওয়া, মাছের বৃদ্ধি কম হওয়া ইত্যদি সমস্য সহ লোকসানের আশংকা বেশী থাকে। তাই পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়-পার ও তলা মজবুত করন, আগাছা অপসারন, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্চিত প্রজাতির প্রাণী দমন। এ সকল কাজ পুকুর সেচ দিয়ে করাই উত্তম। তবে সেচ দেয়া সম্ভব না হলে, ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে অবাঞ্চিত মাছ বা প্রাণী দমন করা যায়। সকল প্রজাতির মাছ চাষের ক্ষেত্রেই পুকুরের তলা সমতল হওয়া ভালো।
Ω পুকুরে কিভাবে চুন প্রয়োগ করবেন-----??
নিয়মানুযায়ী মাটি ও পানির পি,এইচ (ph) বা অম্লত্ব/ক্ষারত্ব মানের উপর চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। পুকুরে পানি ঢোকানোর আগে বা মাছ মজুদের আগেই পুকুর সংস্কার করে চুন প্রয়োগ করতে হয়। পুকুরে পানি ঢোকানোর আগে চাষ দিলে চুনের কার্যকারিতা বেশী হয়। সাধারণত এতেল মাটি, কাঁদা মাটি ও লাল মাটির ক্ষেত্রে চুন একটু বেশী দেয়া দরকার। মাটি ও পানির পি,এইচ ( অম্লত্ব/ক্ষারত্ব ) অনুযায়ী পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা নিন্মরুপঃ
পি,এইচ মান---আয়তন---পাথুরে চুন( caco3)----পোড়া চুন (cao)
৩-৫------------ ১ শতাংশ-- ১২ কেজি-------------- ৬ কেজি
৫-৬-------------ঐ-----------৮ কেজি----------------৪ কেজি
৬-৭-------------ঐ-----------২ কেজি----------------১ কেজি
( CAJ তথ্য সুত্র--- ডিওএফ/dof বাংলাদেশ )
Ω সার প্রয়োগের প্রয়জনিয়তা-----
পুকুরের মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়। জৈব বা অজৈব সার জলাশয়ে প্লাঙ্কটন বৃদ্ধি তথা উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। পানিতে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্লাঙ্কটন বা প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমান দেখে সারের পরিমান নির্ধারণ করতে হয়। তবে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষের ক্ষেত্রে সার প্রয়গে বেশী সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় অধিক প্লাঙ্কটন খতির কারন হয়ে দাড়ায়। নিন্মে একটি সার প্রয়োগের মাত্রা দেখানো হলো----
সারের নাম---------- পুকুর প্রস্তুত কালীন প্রয়োগ---চাষ কালীন প্রয়োগ
জৈব সার----------- ১ শতাংশে ৫-৭ কেজি--------- ১-১.৫ কেজি
ইউরিয়া------------১ শতাংশে ১০০ গ্রাম------------৮০-১০০ গ্রাম
টিএসপি-----------১ শতাংশে ১০০ গ্রাম------------ ৫০-৭০ গ্রাম
( CAJ তথ্য সুত্র-- ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বি,এ,ইউ )
বিদ্রঃ মেঘলা দিন বা বৃষ্টির সময় সার প্রয়োগ না করে রৌদ্রজ্জল আবহাওয়ায় সার প্রয়োগ করা উচিৎ।
Ω কিভাবে পোণা নির্বাচন করবেন-----??
পুকুরে পোণা মজুদের পূর্বে সঠিক পোণা নির্বাচন মাছ চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুস্থ্য-সবল, রোগমুক্ত ও উন্নত জাতের, সঠিক বয়স ও ওজনের ব্রুড হতে উৎপাদিত পোণা সংগ্রহ করতে হবে। সঠিক মাত্রায় ও নির্ধারিত আকারের পোণা মজুদ করতে হবে। মাছ চাষের সফলতা নির্ভর করে আন্তঃপ্রজনন( inbreeding) মুক্ত সুস্থ্য-সবল ও ভালো জাতের পোণার উপর। যেহেতু বেশীর ভাগ চাষিকেই অন্যের হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোণার উপর নির্ভর করতে হয়, সেহেতু যে সকল হ্যাচারির সুনাম রয়েছে- তেমন হ্যাচারি থেকে পোণা সংগ্রহ করা উচিৎ।
Ω কিভাবে পোণা নার্সিং করবেন---- ??
পোণা মজুদ পুকুরে দেয়ার পূর্বে ভালোভাবে নার্সিং করার উপর সফলতা নির্ভরশীল।সঠিক ব্যাবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করতে হলে পোণা নার্সিং এর বিকল্প নেই। সঠিক পরিমানে খাদ্য প্রয়োগের জন্য পুকুরে মাছের সংখ্যা অবশ্যই জানা থাকতে হবে। খাদ্যের পরিমান কম-বেশী হওয়া মাছ চাষে সফলতার অন্তরায়। সঠিক নার্সিং করলে মাছের মৃত্যু হার কমে যায়, মজুদ পুকুরে মাছের পরিমান জানা থাকে এবং একই আকারের পোণা বাছাই করে চাষে দেয়া যায়।
Ω কিভাবে পোণা মজুদ করবেন---??
মাছ চাষে পোণার মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে চাষ পদ্ধতি, পুকুরের আকার ও অবস্থান, মাছের জাত, খাদ্যের প্রকৃতি ইত্যদির উপর। পোণা মজুদ করার সময় পানির স্তর অনুযায়ী মাছের জাত বিন্নস্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সকল পুকুরের ধারন ক্ষমতা সমান নয়। পুকুরের পরিবেশ ও ব্যাবহার কৃত উপকরন অনুযায়ী ধারন ক্ষমতা ভিন্ন হবে। নিন্মে পোণা মজুদের ছক দেয়া হলো----
মাছের প্রজাতি-----মাছের আকার----------একক চাষে-----মিশ্র চাষে
তেলাপিয়া---------১-২ ইঞ্ছি----------২০০- ২২০ টি------ ৭০-৮০ টি
পাঙ্গাস-------------৩-৫ ইঞ্চি ---------১২৫- ১৫০ টি------ ৬০-৭০ টি
কৈ-----------------১-১.৫ইঞ্চি--------৩০০- ৩৫০ টি------ ৭০-৮০ টি
শিং---------------- ২-৩ ইঞ্চি--------- ৪০০-৫০০ টি------ ৭০-৮০ টি
মাগুর------------- ২-৩ ইঞ্চি--------- ২০০-২৫০ টি-------৭০-৮০ টি
Ω মাছ চাষের উপযোগী পানির গুণগত মান------
মাছ চাষে নিন্মে উল্লেখিত পানির ও মাটির গুণগত মান বজায় রাখা জরুরী।
গুনাগুন-------------------------------------- পরিমিত মাত্রা
মাটির পি,এইচ( অম্লত্ব/ ক্ষারত্ব ) ---------- ৬.৫--৭.৫
পানির পি,এইচ( অম্লত্ব/ ক্ষারত্ব) -----------৬.৫< ৮.৫
পানির তাপমাত্রা-------------------- ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
দ্রবিভুত অক্সিজেন------------------ ৫ মিলি গ্রাম/লিটার এর বেশী
দ্রবিভুত কার্বনডাই অক্সাইড------- ৫ মিলি গ্রাম/লিটার এর কম
ক্ষারত্ব------------------------------- ৬০-১০০ মিলি গ্রাম/ লিটার
হাইড্রোজেন সালফাইড------------ ০.০২ মিলি গ্রাম/লিটার এর কম
অ্যামোনিয়া------------------------- ০.০০-০.০৫ মিলি গ্রাম/লিটার
( CAJ তথ্য সুত্র--ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বি,এ,ইউ )
Ω খাদ্য ব্যাবস্থাপনা------
মাছ চাষে সফল হতে হলে ভালো মানের সম্পুরক খাদ্য প্রয়োজন। পোণা মজুদ পরবর্তী ব্যাবস্থাপনার অংশ হিসেবে ভালো মানের সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ মাছ উৎপাদনের প্রধান শর্ত। মাছের দৈহিক ওজন, বয়স, সংখ্যা এবং প্রজাতিভেদে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সুষম খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
#শীতকালীন সময়ে ভাসমান খাদ্যের প্রয়জনিয়তা---
শীতকালে পুকুরের তলার তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সাধারণত মাছের খাবার গ্রহণ প্রবণতা কমে যায়। এ সময় ডুবন্ত খাদ্য প্রয়োগ করলে খাদ্যের অপচয় যেমন বেশী হয়। মাছ খাদ্য কম গ্রহণ করার ফলে খাদ্য পুকুরের তলদেশে জমা হতে থাকে। এবং এক সময় এই খাদ্য পচে গিয়ে গ্যাস তৈরি করে। এতে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মাছে মড়ক দেখা দিতে পারে। পানির তাপমাত্রা সাধারণত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে মাছ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয়। তাই অধিকাংশ মাছ চাষিরা শীত কালে খাবার প্রয়োগ বন্ধ রাখে। খাবার প্রয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলে মাছ অপুষ্টি ও রোগাক্রান্ত হয়ে পরে। মাছের ওজন কমে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে আমাদের দেশে শীত কালে পুকুরের উপর স্তরের পানির তাপমাত্রা তলদেশের চেয়ে বেশী থাকে। সে ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার প্রয়োগ করলে পরিমানে কম হলেও মাছ খাবার গ্রহন করে এবং অপুষ্টি ও ওজন কমে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পায়।
Ω আরো কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়----
প্রতিমাসে অন্তত ১ বার চুন প্রয়োগ( পানির ph মান অনুসারে ) করা উচিৎ। সুস্থ্য-সবল ও রোগমুক্ত পোণা মজুদ করা। মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের সাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষা করা। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যাবস্থ্যা রাখা। নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ে পরিমান মত খাদ্য প্রয়োগ করা। নিয়মিত হররা টেনে পুকুরের তলদেশের ক্ষতিকারক গ্যাস অপসারন করা। সঠিক মানের খাদ্য ব্যাবহার করা। পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য বিবেচনা করে সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ করা। মাছের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
(CAJ তথ্য--- বিভিন্ন সুত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য একত্রিত করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।)
* সকল মাছ চাষি ভাইদের জন্য শুভ কামনায়--- চাষা আলামীন জুয়েল *
CAJ ভূমিকা--বাংলাদেশে মৎস্য চাষ একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত। দেশের মানুষের সিংহভাগ আমিষের চাহিদা পুরন করে এই খাত। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব দূরীকরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য খাতের যথেষ্ট ভূমিকা ও গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার ও টেকসই পদ্ধতি অনুসরনের মাধ্যমে এই খাতকে আরো বেশী লাভজনক করা এবং একই পরিমান জায়গায় বর্তমানের তুলনায় অধিক উৎপাদন সম্ভব।ইতিমধ্যে অনেক মাছ চাষি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে সফলতা পেয়েছেন। আশার কথা হচ্ছে, এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই যে যার অবস্থান থেকে প্রযুক্তি উন্নয়নে সচেষ্ট। আধুনিক এই যুগে উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহ খুব বেশী কঠিন কাজ নয়। চাষিরা যত তারাতারি উন্নত প্রযুক্তি ও উপকরনে অভ্যাস্ত হবে, তত দ্রুত এই খাত এগিয়ে যাবে। মৎস্য খামারের মোট ব্যায়ের সিংহভাগ ব্যায় হয়ে থাকে খাদ্য সরবরাহে। তাই খাদ্যখরচ কমিয়ে আমারা উৎপাদন খরচ কমাতে পারি। সঠিক পুষ্টিগুণ ও কম এফসিআর সম্পন্ন খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্য খরচ কমিয়ে আনা যাবে। অপচয় রোধ ও ভালো মানের খাদ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মাছ চাষে করনীয়----
আধুনিক পদ্ধতি ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষের জন্য নিন্মে উল্লেখিত বিসয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী---
Ω কিভাবে পুকুর তৈরি করবেন------ ??
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উত্তমরূপে পুকুর প্রস্তুতির উপর মাছের উৎপাদন ও খামারের লাভ-লোকসান অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভালো ভাবে পুকুর প্রস্তুত না হলে মাছ রোগাক্রান্ত হওয়া, মাছ মরে যাওয়া, মাছের বৃদ্ধি কম হওয়া ইত্যদি সমস্য সহ লোকসানের আশংকা বেশী থাকে। তাই পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়-পার ও তলা মজবুত করন, আগাছা অপসারন, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্চিত প্রজাতির প্রাণী দমন। এ সকল কাজ পুকুর সেচ দিয়ে করাই উত্তম। তবে সেচ দেয়া সম্ভব না হলে, ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে অবাঞ্চিত মাছ বা প্রাণী দমন করা যায়। সকল প্রজাতির মাছ চাষের ক্ষেত্রেই পুকুরের তলা সমতল হওয়া ভালো।
Ω পুকুরে কিভাবে চুন প্রয়োগ করবেন-----??
নিয়মানুযায়ী মাটি ও পানির পি,এইচ (ph) বা অম্লত্ব/ক্ষারত্ব মানের উপর চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। পুকুরে পানি ঢোকানোর আগে বা মাছ মজুদের আগেই পুকুর সংস্কার করে চুন প্রয়োগ করতে হয়। পুকুরে পানি ঢোকানোর আগে চাষ দিলে চুনের কার্যকারিতা বেশী হয়। সাধারণত এতেল মাটি, কাঁদা মাটি ও লাল মাটির ক্ষেত্রে চুন একটু বেশী দেয়া দরকার। মাটি ও পানির পি,এইচ ( অম্লত্ব/ক্ষারত্ব ) অনুযায়ী পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা নিন্মরুপঃ
পি,এইচ মান---আয়তন---পাথুরে চুন( caco3)----পোড়া চুন (cao)
৩-৫------------ ১ শতাংশ-- ১২ কেজি-------------- ৬ কেজি
৫-৬-------------ঐ-----------৮ কেজি----------------৪ কেজি
৬-৭-------------ঐ-----------২ কেজি----------------১ কেজি
( CAJ তথ্য সুত্র--- ডিওএফ/dof বাংলাদেশ )
Ω সার প্রয়োগের প্রয়জনিয়তা-----
পুকুরের মাটি ও পানির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়। জৈব বা অজৈব সার জলাশয়ে প্লাঙ্কটন বৃদ্ধি তথা উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। পানিতে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্লাঙ্কটন বা প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমান দেখে সারের পরিমান নির্ধারণ করতে হয়। তবে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষের ক্ষেত্রে সার প্রয়গে বেশী সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় অধিক প্লাঙ্কটন খতির কারন হয়ে দাড়ায়। নিন্মে একটি সার প্রয়োগের মাত্রা দেখানো হলো----
সারের নাম---------- পুকুর প্রস্তুত কালীন প্রয়োগ---চাষ কালীন প্রয়োগ
জৈব সার----------- ১ শতাংশে ৫-৭ কেজি--------- ১-১.৫ কেজি
ইউরিয়া------------১ শতাংশে ১০০ গ্রাম------------৮০-১০০ গ্রাম
টিএসপি-----------১ শতাংশে ১০০ গ্রাম------------ ৫০-৭০ গ্রাম
( CAJ তথ্য সুত্র-- ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বি,এ,ইউ )
বিদ্রঃ মেঘলা দিন বা বৃষ্টির সময় সার প্রয়োগ না করে রৌদ্রজ্জল আবহাওয়ায় সার প্রয়োগ করা উচিৎ।
Ω কিভাবে পোণা নির্বাচন করবেন-----??
পুকুরে পোণা মজুদের পূর্বে সঠিক পোণা নির্বাচন মাছ চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুস্থ্য-সবল, রোগমুক্ত ও উন্নত জাতের, সঠিক বয়স ও ওজনের ব্রুড হতে উৎপাদিত পোণা সংগ্রহ করতে হবে। সঠিক মাত্রায় ও নির্ধারিত আকারের পোণা মজুদ করতে হবে। মাছ চাষের সফলতা নির্ভর করে আন্তঃপ্রজনন( inbreeding) মুক্ত সুস্থ্য-সবল ও ভালো জাতের পোণার উপর। যেহেতু বেশীর ভাগ চাষিকেই অন্যের হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোণার উপর নির্ভর করতে হয়, সেহেতু যে সকল হ্যাচারির সুনাম রয়েছে- তেমন হ্যাচারি থেকে পোণা সংগ্রহ করা উচিৎ।
Ω কিভাবে পোণা নার্সিং করবেন---- ??
পোণা মজুদ পুকুরে দেয়ার পূর্বে ভালোভাবে নার্সিং করার উপর সফলতা নির্ভরশীল।সঠিক ব্যাবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করতে হলে পোণা নার্সিং এর বিকল্প নেই। সঠিক পরিমানে খাদ্য প্রয়োগের জন্য পুকুরে মাছের সংখ্যা অবশ্যই জানা থাকতে হবে। খাদ্যের পরিমান কম-বেশী হওয়া মাছ চাষে সফলতার অন্তরায়। সঠিক নার্সিং করলে মাছের মৃত্যু হার কমে যায়, মজুদ পুকুরে মাছের পরিমান জানা থাকে এবং একই আকারের পোণা বাছাই করে চাষে দেয়া যায়।
Ω কিভাবে পোণা মজুদ করবেন---??
মাছ চাষে পোণার মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে চাষ পদ্ধতি, পুকুরের আকার ও অবস্থান, মাছের জাত, খাদ্যের প্রকৃতি ইত্যদির উপর। পোণা মজুদ করার সময় পানির স্তর অনুযায়ী মাছের জাত বিন্নস্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সকল পুকুরের ধারন ক্ষমতা সমান নয়। পুকুরের পরিবেশ ও ব্যাবহার কৃত উপকরন অনুযায়ী ধারন ক্ষমতা ভিন্ন হবে। নিন্মে পোণা মজুদের ছক দেয়া হলো----
মাছের প্রজাতি-----মাছের আকার----------একক চাষে-----মিশ্র চাষে
তেলাপিয়া---------১-২ ইঞ্ছি----------২০০- ২২০ টি------ ৭০-৮০ টি
পাঙ্গাস-------------৩-৫ ইঞ্চি ---------১২৫- ১৫০ টি------ ৬০-৭০ টি
কৈ-----------------১-১.৫ইঞ্চি--------৩০০- ৩৫০ টি------ ৭০-৮০ টি
শিং---------------- ২-৩ ইঞ্চি--------- ৪০০-৫০০ টি------ ৭০-৮০ টি
মাগুর------------- ২-৩ ইঞ্চি--------- ২০০-২৫০ টি-------৭০-৮০ টি
Ω মাছ চাষের উপযোগী পানির গুণগত মান------
মাছ চাষে নিন্মে উল্লেখিত পানির ও মাটির গুণগত মান বজায় রাখা জরুরী।
গুনাগুন-------------------------------------- পরিমিত মাত্রা
মাটির পি,এইচ( অম্লত্ব/ ক্ষারত্ব ) ---------- ৬.৫--৭.৫
পানির পি,এইচ( অম্লত্ব/ ক্ষারত্ব) -----------৬.৫< ৮.৫
পানির তাপমাত্রা-------------------- ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
দ্রবিভুত অক্সিজেন------------------ ৫ মিলি গ্রাম/লিটার এর বেশী
দ্রবিভুত কার্বনডাই অক্সাইড------- ৫ মিলি গ্রাম/লিটার এর কম
ক্ষারত্ব------------------------------- ৬০-১০০ মিলি গ্রাম/ লিটার
হাইড্রোজেন সালফাইড------------ ০.০২ মিলি গ্রাম/লিটার এর কম
অ্যামোনিয়া------------------------- ০.০০-০.০৫ মিলি গ্রাম/লিটার
( CAJ তথ্য সুত্র--ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বি,এ,ইউ )
Ω খাদ্য ব্যাবস্থাপনা------
মাছ চাষে সফল হতে হলে ভালো মানের সম্পুরক খাদ্য প্রয়োজন। পোণা মজুদ পরবর্তী ব্যাবস্থাপনার অংশ হিসেবে ভালো মানের সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ মাছ উৎপাদনের প্রধান শর্ত। মাছের দৈহিক ওজন, বয়স, সংখ্যা এবং প্রজাতিভেদে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সুষম খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
#শীতকালীন সময়ে ভাসমান খাদ্যের প্রয়জনিয়তা---
শীতকালে পুকুরের তলার তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সাধারণত মাছের খাবার গ্রহণ প্রবণতা কমে যায়। এ সময় ডুবন্ত খাদ্য প্রয়োগ করলে খাদ্যের অপচয় যেমন বেশী হয়। মাছ খাদ্য কম গ্রহণ করার ফলে খাদ্য পুকুরের তলদেশে জমা হতে থাকে। এবং এক সময় এই খাদ্য পচে গিয়ে গ্যাস তৈরি করে। এতে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মাছে মড়ক দেখা দিতে পারে। পানির তাপমাত্রা সাধারণত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে মাছ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয়। তাই অধিকাংশ মাছ চাষিরা শীত কালে খাবার প্রয়োগ বন্ধ রাখে। খাবার প্রয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলে মাছ অপুষ্টি ও রোগাক্রান্ত হয়ে পরে। মাছের ওজন কমে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে আমাদের দেশে শীত কালে পুকুরের উপর স্তরের পানির তাপমাত্রা তলদেশের চেয়ে বেশী থাকে। সে ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার প্রয়োগ করলে পরিমানে কম হলেও মাছ খাবার গ্রহন করে এবং অপুষ্টি ও ওজন কমে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পায়।
Ω আরো কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়----
প্রতিমাসে অন্তত ১ বার চুন প্রয়োগ( পানির ph মান অনুসারে ) করা উচিৎ। সুস্থ্য-সবল ও রোগমুক্ত পোণা মজুদ করা। মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের সাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষা করা। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যাবস্থ্যা রাখা। নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ে পরিমান মত খাদ্য প্রয়োগ করা। নিয়মিত হররা টেনে পুকুরের তলদেশের ক্ষতিকারক গ্যাস অপসারন করা। সঠিক মানের খাদ্য ব্যাবহার করা। পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য বিবেচনা করে সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ করা। মাছের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
(CAJ তথ্য--- বিভিন্ন সুত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য একত্রিত করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।)
* সকল মাছ চাষি ভাইদের জন্য শুভ কামনায়--- চাষা আলামীন জুয়েল *

মন্তব্যসমূহ