সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
ফলের চারা-কলম রোপণের নিয়ম---

CAJ--- ফল খেতে আমারা প্রায় সকলেই পছন্দ করি, আর তাই দেশের প্রায় সকল বাড়ীতেই কোন না কোন ফলগাছ রয়েছে । কিন্ত ভালো ও বেশি ফল পেতে হলে প্রথমেই দরকার সুস্থ্য -সবল,ভালো জাতের চারা। তারপর সেগুলো সঠিকভাবে লাগানো। যেনতেনভাবে ফলের চারা-কলম লাগালে সে সকল গাছ থেকে কখনো ভালো ফলন আশা করা যায় না। মানসম্পন্ন ফলন পেতে হলে প্রথমেই সঠিক এবং উন্নত জাতের চারা বা কলম সংগ্রহ করতে হবে। আর সেজন্য চাই বিশ্বস্ত এবং অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান, যাদের কাছ থেকে ভালো মানের,ভালো জাতের সুস্থ্য -সবল চারা সংগ্রহ করা যেতে পারে. কারন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকায় বেশির ভাগ নার্সারিতেই এখন মানসম্পন্ন চারাকলম তৈরি হচ্ছে না, তৈরি হলেও সেসব কলমের খাসি করা ঠিকভাবে হচ্ছে না। ফলে অল্প শিকড় নিয়ে গাছ বড় হওয়ায় সহজে ঝড়-বাতাসে গাছ পড়ে যাচ্ছে। ফলগাছ রোপণের সময় যেসব কাজ করা হয় তার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ গাছের বৃদ্ধি। গর্ত খনন থেকে শুরু করে চারাকলম রোপণ পর্যন্ত সকল কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এসব নিয়ম ঠিকমতো মানা না হলে গাছের বৃদ্ধিই শুধু নয়, ফলনের ওপরও প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়ার দরকার আছে।

গর্ত তৈরি:
আমগাছের কলম লাগানোর জন্য যত বড় গর্ত করতে হবে পেয়ারার জন্য তা নয়, কাগজী লেবুর জন্য গর্ত হবে তার চেয়েও ছোট। বড় গাছ যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, ডেওয়া ইত্যাদির জন্যও গর্তের মাপ হবে সব দিকে ৯০ সেন্টিমিটার, মানে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও গভীরতা ৯০x ৯০x ৯০ সেমি। একই ভাবে মাঝারি গাছ যেমন- পেয়ারা, বাতাবিলেবু, কমলা, তৈকর, জামরুল ইত্যাদির জন্য গর্তের মাপ হবে সব দিকে ৭৫ সেন্টিমিটার। ছোট গাছ যেমন- কাগজী লেবু, করমচা, লুকলুকি, কলা, পেঁপে ইত্যাদির জন্য গর্তের মাপ হবে সব দিকে ৪৫ সেন্টিমিটার। ওপরের মাপে গর্ত খননের সময় ওপরের মাটি গর্তের এক পাশে এবং নিচের মাটি গর্তের আরেক পাশে রেখে প্রথমে জৈব সার মেশাতে হবে। এভাবে রেখে দেয়ার ৪ থেকে ৫ দিন পর গাছ রোপণের ৩ থেকে ৪ দিন আগে রাসায়নিক সার মেশাতে হবে। এ সময়ে মাঝে মাঝে এই সার মিশ্রিত মাটি ওলট-পালট করে দিতে হবে।

রোপণের সময়:
বর্ষার আগে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) বা বর্ষার শুরুতে (আষাঢ়) এবং বর্ষার শেষে (ভাদ্র-আশ্বিন) ফলগাছের চারাকলম রোপণ করার উত্তম সময়। তবে জমি সুনিষ্কাশিত ও বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির হলে বর্ষায়ও (আষাঢ়-শ্রাবণ) বৃষ্টির দিন ছাড়া রোপণ করা যায়। শীতকালে চারা-কলমের নতুন শিকড় গজায় না বা শিকড়ের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় না বলে শীতের সময় রোপণ না করা ভালো। বিকেল বেলা চারা বা কলম রোপণের উপযুক্ত সময়।

রোপণ পদ্ধতি:
চারা-কলম লাগানোর জন্য বেশ কিছু নিয়ম আছে যেমন- মাটির মধ্যে কতটুকু পুঁতবেন, লাগানোর সময় কোনো ডাল-পাতা ছেঁটে দেবেন কি না অথবা নার্সারি থেকে কিনে এনেই চারাটি লাগাবেন কি না ইত্যাদি। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চারা-কলম লাগালে ওগুলো ভালো থাকে। যেমন-
Θ কলম করে সাথে সাথেই বাগানে রোপণ করা চলবে না। তা করলে গাছ রোপণজনিত আঘাতে মরে যেতে পারে এবং কলমের জোড়া খুলে যেতে পারে। সে জন্য কলম করার অন্তত কয়েক মাস পরে তা রোপণ করা ভালো।
Θ রোপণ করার আগে চাষ ও মই দিয়ে বাগানের মাটি সমতল করে নেয়া উচিত।
Θ রোপণের আগে অবশ্যই দূরত্ব ঠিক করে নকশা করে নেয়া উচিত। গ্রীষ্মেই এ কাজ করে ফেলতে হবে।
Θ রোপণের অন্তত ১৫ দিন আগে গর্ত তৈরি করে সার মাটি ভরে রাখতে হবে। গর্ত প্রতি ৫-১০ কেজি গোবর সার, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০-২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫-১৫০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
Θ রোপণের কয়েক দিন আগে চারা বা কলম সংগ্রহ করে হার্ডেনিং করতে হবে। এ জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় কয়েক দিন চারা-কলম শুইয়ে রেখে পাতা ঝরাতে হবে। মাঝে মাঝে গোড়ার মাটির বলে ও গাছে হালকা পানির ছিটা দিতে হবে। এতে গাছের রোপণোত্তর মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।
Θ লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চারাকলমের গোড়ার মাটির বলটি ভেঙে না যায়।
Θ মাটির টবে বা পলিব্যাগে চারা-কলম থাকলে কিছুটা পানি দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হবে। এরপর টব মাটিতে কাত করে গড়িয়ে এবং পলিব্যাগ গড়িয়ে বা দুই হাতের তালু দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেপে নরম করে নিতে হয়। টব বা পলিব্যাগের চারাকলমের গোড়ায় হাত দিয়ে চেপে ধরে সম্পূর্ণ চারা বা কলমটি উল্টো করে ধরে টব বা পলিব্যাগ ওপরের দিকে টান দিলে বা টবটির কিনারা শক্ত কোনো জায়গায় ধীরে ধীরে টোকা দিলে মাটির বলটি বেরিয়ে আসে এবং সেটি গর্তে স্খাপন করতে হয়। অবশ্য পলিব্যাগের চারাকলমের ক্ষেত্রে চাকু বা ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগের এক দিক কেটে অথবা মাটির টবটির চার দিক আস্তে আস্তে ভেঙে দিয়ে মাটির সম্পূর্ণ বলটি বের করে এনেও গর্তে বসানো যায়।
Θ গর্তে বসানোর সময় চারা-কলমের গোড়া টবে বা পলিব্যাগে যে পর্যন্ত গোড়ায় মাটি ছিল বা বাইরে ছিল সে পর্যন্তই বাইরে রাখতে হয়। এর বেশি পুঁতে দেয়া বা ওপরে রাখা কোনোটাই ঠিক নয়।
Θ রোপণের সময় অতিরিক্ত পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। তবে এটি সতর্কতার সাথে করতে হয়, যেন চারা-কলমের গাছটি আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। চারা বা কলম রোপণের পর গোড়ার মাটি কিছুটা চেপে দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে হয়।
Θ চারা-কলম যদি বড় হয় তবে এটিকে সোজা ও শক্ত রাখার জন্য গাছ থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে একটি খুঁটি পুঁতে একটু কাত করে সুতলী দিয়ে হালকাভাবে বেঁধে দিতে হয়। শক্ত করে বাঁধলে অনেক সময় চারা-কলমের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ঝড়ো বাতাসে উপড়ে যাওয়া থেকে চারা-কলমকে এই খুঁটি রক্ষা করে।
Θ চারা-কলমের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে বেড়া বা খাঁচার ব্যবস্খা করতে হয়।
Θ নতুন কুঁড়ি বা পাতা না আসা পর্যন্ত গাছে উপরি সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সময়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচের ব্যবস্খা করতে হয়।
(তথ্য সংগৃহীত ও সংকলিত )

#সকলের জন্য শুভ কামনায় ---চাষা আলামীন জুয়েল.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...