টার্কি ( GenusMeleagris ) পালন বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে নতুন সম্ভবনা ---- (#CAJপূর্ণাঙ্গ পোস্ট)
----------------------------------------------------------------------
টার্কি ( GenusMeleagris ) নামকরণের কারণ ---
রোমান্স ভাষায় প্রকাশিত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক "মারিও পেই" এর একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় ---
ইউরোপীয়রা বন্য পাখী খেতে খুব পছন্দ করতো. পশ্চিম আফ্রিকার তিতির বা গিনি ফাউল তাদের বেশী পছন্দ ছিলো. তুর্কি বণিকদের মাধ্যমে প্রথম এই বড় জাতের পাখিটি ইউরোপে আমদানি হয় এবং লন্ডনে খাওয়া হয়. একটি অপরিচিত নতুন পাখী তুর্কি বণিকদের মাধ্যমে আসে , তাই তখন থেকেই এটার ডাকনাম তুর্কি মোরগ বা টার্কি মোরগ হিসেবে পরিচিতি পায়.
টার্কি( GenusMeleagris ) পরিচিতি:
টার্কি একটি বড় প্রজাতীর সুন্দর- শান্ত প্রকৃতির পাখী .পুরুষ পাখীর দৈহিক গঠন স্ত্রী পাখীর থেকে বেশী বড়, বেশী দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে. পুরুষ পাখীর একটি সতন্ত্র কঞ্চি বা পিণ্ড রয়েছে, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ঠোটের উপর থাকে.এই পাখী এক সময়ের বন্য পাখী হলেও এখন একটি গৃহে পালিত হয়। এটি গৃহে পালন শুরু হয় উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোতে। কিন্ত বর্তমানে ইউরোপ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম – বেশী পালন করা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস খুবই জনপ্রিয় । পাখীর মাংসের মধ্যে হাস, মুরগী, কোয়েল, তিতির এর পর টার্কির অবস্থান । টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশী , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে বেশী পুষ্টিকর। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয় । তাই সবচেয়ে বেশী টার্কি পালন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি,নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশে । তবে বাংলাদেশেও গত ২০১৪ ইং সাল থেকে ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে, এবং বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাধিক ছোট -বড় খামার রয়েছে। যেটা আমাদের জন্য সুখবর । বেকার যুবকদের মাঝেও টার্কি পালনে আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করা যায়, আগামী কয়েক বসরে এটা ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করবে ।
টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ ---
১। মাংস উদপাদন ক্ষমতা ব্যাপক ।
২। এটা ঝামেলাহীন ভাবে দেশী মুরগীর মত পালন করা যায় ।
৩। টার্কি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে আনুপাতিক হারে দ্রুত বাড়ে ।
৪। টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারন এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস,লতাপাতা,পোকা -মাকড় খেতে পছন্দ করে ।
৫। টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির সোভা বর্ধন করে ।
৬। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হতে পারে ।
৭। টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী । এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।
৮। টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
৯। টার্কির মাংসে ভিটামিন -ই অধিক পরিমাণে থাকে ।
টার্কি পালনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট ----
১। ডিম দেয়া শুরুর বয়স = ৩০ সপ্তাহ ।
২। পরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত = ১ :৫।
৩। বসরে গড় ডিম = ৮০ – ১০০ টি ।
৪। ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হয় = ২৮ দিনে ।
৫। ২০ সপ্তাহে গড় ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৪ – ৫ কেজি ।
৬। বাজারজাত করনের সঠিক সময় পুরুষ = ১৪ – ১৫ সপ্তাহ ।
স্ত্রী পাখী = ১৭ – ১৮ সপ্তাহ ।
৭। উপযুক্ত ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৫ – ৬ কেজি ।
ডিম উৎপাদন –
সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে । প্রয়োজনীয় আলো বাতাস, পরিষ্কার পানি এবং খাবার সরবরাহ করা হলে বসরে ৮০ – ১২০ ডিম দিয়ে থাকে । ৬০ – ৭০ শতাংশ টার্কি মুরগী বিকেল বেলায় ডিম দেয় ।
মাংস উৎপাদন –
টার্কি দ্রুত মাংস উৎপাদনশীল একটি পাখী । দেশী হাস – মুরগীর মত সাধারন নিয়মে পালন করলেও ২৮ -৩০ সপ্তাহে প্রতিটি গড়ে ৫-৬ কেজি ওজন হয় ।
টার্কি পালন পদ্ধতি –
মুক্ত অবস্থায় ও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায় ।
একটি টার্কির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তালিকা নিচে দেয়া হলো –
বয়স ---------জায়গা (ব.ফু) --খাদ্যের পাত্র ( সে.মি) -- পানির পাত্র (সে.মি)
০-৪ সপ্তাহ –-- ১.২৫ – ব.ফু ২.৫- সে.মি ------------১.৫ সে.মি
৫-১৬ সপ্তাহ ২.৫ - ব.ফু----- ৫.০- সে.মি -----------২.৫ সে.মি
১৬-১৯ সপ্তাহ ৪.০ - ব.ফু ---৬.৫ – সে.মি---------- ২.৫ সে.মি
প্রজনন ক্ষম ৫.০ – ব.ফু -----৭.৫ – সে.মি---------- ২.৫ সে.মি
লিটার ব্যাবস্থাপনা ঃ
এই পদ্ধতিতে টার্কির জন্য সহজলভ্য দ্রব্য ব্যাবহার করা যায় । যেমন নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুরা, তুষ, বালি । প্রথমে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় । পরে আস্তে আস্তে আরো উপাদান যোগ করে ৩ - ৪ ইঞ্চি করলে ভালো হয় । লিটারে সব সময় শুকনো দ্রব্য ব্যাবহার করতে হবে । ভিজা লিটার তুলে সেখানে আবার শুকনো লিটার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ।
* খাবার –
টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য দুইটি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায় । যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং ।
একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো –
ধান --------------- ২০%
গম ---------------- ২০%
ভুট্টা --------------- ২৫%
সয়াবিন মিল ------- ১০%
ঘাসের বীজ -------- ৮%
সূর্যমুখী বীজ ------- ১০%
ঝিনুক গুড়া -------- ৭%
মোট = ১০০%
* সতর্কতা –
অন্যান্য পাখির তুলনায় টার্কির জন্য বেশী ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ, মিনারেলস দিতে হয় । কোন ভাবেই মাটিতে খাবার সরবরাহ করা যাবে না । সব সময় পরিষ্কার পানি দিতে হবে ।
* সবুজ খাবার –
সব সময় মোট খাবারের সঙ্গে ৩৫- ৪০% সবুজ ঘাস খেতে দেয়া ভালো । সে ক্ষেত্রে নরম জাতীয় যে কোন ঘাস দেয়া যেতে পারে । যেমন – কলমি, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা ইত্যাদি । একটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কির দিনে ১৪০ – ১৫০ গ্রাম খাবার দরকার হয় । যেখানে ৪৪০০ – ৪৫০০ ক্যালোরি নিশ্চিত করতে হবে ।
* প্রজনন ব্যাবস্থা –
একটি টার্কি মুরগীর জন্য ৪ – ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে । ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে ৩ বা ৪ টি মুরগী রাখা যেতে পারে । ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদান কালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ খাবার এবং বেশী পানি দিতে হবে ।
* বাচ্চা ফুটানো –
টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায় । তাছাড়া বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কিও ডিম উৎপাদন বেশী করে ।
* রোগ বালাই –
পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , মাইটস ও এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা বেশী দেখা যায় । পরিবেশ ও খামার অব্যাবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে.
টিকা প্রদান কর্মসূচি---
বয়স ----- রোগের নাম --------ভ্যাকসিনের নাম ------টিকা প্রদানের পদ্ধতি
২ দিন ----গামবোরো রোগ --গামবোরো ভ্যাকসিন (লাইভ)---চোখে ফোঁটা (প্যারেন্টস টার্কির টিকা প্রদান করা না থাকলে)
৩-৫ দিন--রানীক্ষেত রোগ ----বি, সি, আর, ডি, ভি ---দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্টস টার্কির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে)
৭ দিন --- ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি, ------------ চোখে ফোঁটা
১০-১৪ দিন--গামবোরো রোগ ---গামবোরো ভ্যাকসিন --এক চোখে ফোঁটা
২১-২৪ দিন--রানীক্ষেত রোগ ----বি, সি, আর, ডি, ভি --দুই চোখে ফোঁটা
২৪-২৮ দিন-গামবোরো রোগ --গামবোরো ভ্যাকসিন ---এক চোখে ফোঁটা
৩০ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি, ------------ চোখে ফোঁটা
৩৫ দিন--মুরগি বসন্ত -------ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ----- চামড়ার নীচে সুঁই ফুঁটিয়ে
৫০ দিন -----কৃমি -----------------কৃমির ঔষধ -----খাদ্য অথবা পানির সাথে
৬০ দিন --রানীক্ষেত রোগ --আর, ডি, ভি ---চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৭০ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি ---চোখে ফোঁটা বা পানির সাথে
৮০-৮৫ দিন--কলেরা -ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন --চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৯০-৯৫ দিন--ইনফেকসাস করাইজা --আই, করাইজা ভ্যাকসিন -- চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১১০-১১৫ দিন--কলেরা-ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন-চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১৩০-১৩৫ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রানীক্ষেত, এগড্রপসিনড্রম,সমন্বিত টিকা
----- চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১৩০-১৩৫ দিন---কৃমি -------কৃমির ঔষধ --------খাদ্য অথবা পানির সাথে
তবে খেয়াল রাখতে হবে: প্রয়োজনবোধে খাদ্যের সাথে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য ককসিডিওস্ট্যাট ব্যবহার করতে হবে। ৫০ দিন বয়সে কৃমির ঔষধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৩০ থেকে ১৩৫ দিন বয়সে ঐ ঔষধ পুনরায় খাওয়াতে হবে।
তবে এই তালিকা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রোগের প্রার্দুভাবের ইতিহাস, টিকার প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নিজ নিজ খামারের জন্য নিজস্ব তালিকা প্রস্তত করতে হবে। টিকা সবসময় প্রস্ততকারীর নির্দেশমত ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সতর্কতাঃ-- কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না। টিকা প্রয়োগ করার পূর্বে টিকার গায়ে দেয়া তারিখ দেখে নিবেন। মেয়াদ উরতিন্ন টিকা প্রয়োগ করবেন না ।
এছাড়া নিয়ম মাফিক, পরিচ্ছন্ন খাদ্য ও খামার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক রোগ – বালাই এড়িয়ে চলা সম্ভব ।
* বাজার সম্ভবনা –
• টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে । পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে । যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু / খাসীর মাংস খায়না , টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প । তাছাড়া বিয়ে, বৌ –ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার । এবং গরু / খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম ।
• বানিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪/১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫/৬ কেজি । ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মুল্য দাঁড়াবে ২০০০/২৫০০ টাকা । ১৪/১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্বচ্চ খরচ পরবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা । তাহলে কম পক্ষে একটি টার্কি থেকে ৫০০ টাকা লাভ করা সম্ভব ।
• তবে মাংস হিসেবে বানিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কারন তাতে বড় বিনিয়োগের বেশী বেশী খামার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন । কিন্তু বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ৩/৪ বসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে । এবং সে ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাচ্ছে । ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা – বেচা চলছে ।
প্রশ্ন : এতো দামে টার্কি কিনে বা খামার করে লাভ করবো কিভাবে ? বেশী খামার গড়ে উঠলে এর মাংস বিক্রয় করবো কোথায় ?? এত দামে টার্কির মাংস মানুষ কিনবে ??
#CAJউত্তর : কেন কিনবে না ? অবশ্যই কিনবে, সঙ্গত কারণেই কিনবে. দেশী মুরগী যদি আমরা ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারি , তাহলে টার্কি কেন কিনবে না !! কারো যদি ৬ কেজি দেশী মুরগী প্রয়োজন হয়, তবে তাকে অন্তত ৫ টি মুরগী কিনতে হবে. আর এই ৫ টি মুরগীর ২০০ গ্রাম করে বর্জ্য বাদ দিলে মাংস পাবে ৫ কেজি.আর একই দামে একটি ৬ কেজি ওজনের টার্কি কিনলে তিনি মাংস পাবেন ৫ কেজি ৬০০ গ্রাম. তাহলে সমমূল্যে একটা টার্কি কিনলে মাংস অনায়াসে ৬০০ গ্রাম বেশী পাওয়া যাবে . স্বাদের কথা যদি বলি, দেশী মুরগীর তুলনায় এর মাংস অনেক বেশী উপাদেয়.
এরকম বেশ কিছূ সুবিধা রয়েছে টার্কির ক্ষেত্রে.
কিন্ত অধিকতর লাভ পেতে বেশী জরুরী জরুরী একে পরিচিত করে তোলা . প্রচার -প্রচারণা বৃদ্ধি , আর ২০১৪ সাল থেকে এই কাজটি করে চলেছি . এখন অনেকেই টার্কি চেনে , এর মাংসের স্বাদ জানে. অনেক খামার ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে. ইনশাল্লাহ্ ২০২০ সালের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পে টার্কি থাকবে শক্ত অবস্থানে .
আপনি কেন টার্কির খামার করবেন ??
• যারা বেকার বসে আছেন * যারা নতুন কিছু শুরু করতে চান * পোল্ট্রি ব্যবসা করে যারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন এবং আপনার স্থাপনা এখন কোন কাজে আসছে না * যারা কম ঝামেলা পূর্ণ কাজ পছন্দ করেন এবং ভালো আয়ের উৎস খুজছেন * যারা অল্প পুঁজি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা খুজছেন, টার্কির খামার তাদের জন্য আদর্শের । কারন হিসেবে #CAJঅভিমত – ১। একটি আদর্শ টার্কি খামার করতে খুব বেশী পুঁজির প্রয়োজন হয় না ।
২। অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় এর রোগ বালাই কম. কিছু নিয়ম মেনে চললে এই খামারে ঝুঁকি অনেক কম ।
৩। যেহেতু ৩৫-৪০% পর্যন্ত ঘাস খায় বা দেয়া যায়, তাই যেকোন পোল্ট্রির খাবারের তুলনায় খরচ কম ।
৪। খামারি পর্যায়ে পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে বাজার চাহিদা প্রচুর ।
৫। ডিম, বাচ্চা বা প্রাপ্ত বয়সের টার্কির উচ্চ মুল্য থাকায়, খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশী ।
* CAJ শেষ কথা -----
বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে অনেক জায়গা অনাবাদী/ পতিত অবস্থায় পরে থাকে । যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে রয়েছে বিভিন্ন ঘাস – লতা । এরকম উন্মুক্ত জায়গা টার্কি পালনের জন্য বেশী উপযোগী । কারণ এ জায়গা টার্কির চারণ ভুমি হিসেবে ব্যবহার করা যায় . অন্য দিকে আমাদের রয়েছে এক বৃহত্তর বেকার জনগোষ্ঠী । তাই একদিকে অব্যবহৃত জমিকে ব্যবহার এবং অন্যদিকে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান, এই দুই এর মাঝে সেতু বন্ধন হতে পারে ছোট একটি টার্কি খামার । ( লেখাটি লিখতে গিয়ে গুগল থেকে কিছু তথ্য নিয়েছি,বাকিটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা )
বি :দ্র : খামার করতে আগ্রহী হলে বাজার থেকে বা আমদানী করা বড় বা বাচ্চা পাখী ক্রয় করবেন না । অবশ্যই প্রকৃত খামারিদের কাছ থেকে পাখী সংগ্রহ করবেন । মনে রাখবেন, খামার করতে গেলে সুস্থ্য, রোগ মুক্ত পাখী সংগ্রহ করতে পারলে আপনার সফলতার হার বেড়ে যাবে .
#সকলের জন্য শুভ কামনায় ---চাষা আলামীন জুয়েল.
** টার্কির বাচ্চা বিক্রয়ের জন্য বুকিং নেয়া হচ্ছে ------
বাচ্চা ৪০ পিস,আজ ২০-০৩-২০১৭ ইং তারিখে বয়স ১৪ দিন , বাচ্চা ৭০ পিস.আজকে ২০-০৩-২০১৭ ইং তারিখে বয়স ৪দিন .
৭৫ দিন বা আড়াই মাস বয়স হলে ডেলিভারী দেয়া হবে . ডেলিভারী নেয়ার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই উপস্থিত হয়ে বাচ্চা বুঝে নিতে হবে. এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল টিকা সম্পন্ন করা হবে .৭৫ দিন বা আড়াই মাস বয়সের বাচ্চার নির্ধারিত মূল্য --২১৫০ টাকা প্রতি পিস .
*বুকিং: ৭৫% টাকা বুকিংয়ের সময় পরিশোধ করতে হবে.
মূল খামার ও হ্যাচারী - উল্লাপাড়া , সিরাজগঞ্জ.
#ডেলিভারীর স্থান -- গ্রাম + পোস্ট -লবণসারা, উপজেলা- বানারীপাড়া, জেলা - বরিশাল.
বিস্তারিত জানতে যোগোযোগ -- চাষা আলামীন জুয়েল.
মোবা: ০১৭১৬২২২৪৯১.
----------------------------------------------------------------------
টার্কি ( GenusMeleagris ) নামকরণের কারণ ---
রোমান্স ভাষায় প্রকাশিত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক "মারিও পেই" এর একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় ---
ইউরোপীয়রা বন্য পাখী খেতে খুব পছন্দ করতো. পশ্চিম আফ্রিকার তিতির বা গিনি ফাউল তাদের বেশী পছন্দ ছিলো. তুর্কি বণিকদের মাধ্যমে প্রথম এই বড় জাতের পাখিটি ইউরোপে আমদানি হয় এবং লন্ডনে খাওয়া হয়. একটি অপরিচিত নতুন পাখী তুর্কি বণিকদের মাধ্যমে আসে , তাই তখন থেকেই এটার ডাকনাম তুর্কি মোরগ বা টার্কি মোরগ হিসেবে পরিচিতি পায়.
টার্কি( GenusMeleagris ) পরিচিতি:
টার্কি একটি বড় প্রজাতীর সুন্দর- শান্ত প্রকৃতির পাখী .পুরুষ পাখীর দৈহিক গঠন স্ত্রী পাখীর থেকে বেশী বড়, বেশী দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে. পুরুষ পাখীর একটি সতন্ত্র কঞ্চি বা পিণ্ড রয়েছে, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ঠোটের উপর থাকে.এই পাখী এক সময়ের বন্য পাখী হলেও এখন একটি গৃহে পালিত হয়। এটি গৃহে পালন শুরু হয় উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোতে। কিন্ত বর্তমানে ইউরোপ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম – বেশী পালন করা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস খুবই জনপ্রিয় । পাখীর মাংসের মধ্যে হাস, মুরগী, কোয়েল, তিতির এর পর টার্কির অবস্থান । টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশী , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে বেশী পুষ্টিকর। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয় । তাই সবচেয়ে বেশী টার্কি পালন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি,নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশে । তবে বাংলাদেশেও গত ২০১৪ ইং সাল থেকে ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে, এবং বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাধিক ছোট -বড় খামার রয়েছে। যেটা আমাদের জন্য সুখবর । বেকার যুবকদের মাঝেও টার্কি পালনে আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করা যায়, আগামী কয়েক বসরে এটা ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করবে ।
টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ ---
১। মাংস উদপাদন ক্ষমতা ব্যাপক ।
২। এটা ঝামেলাহীন ভাবে দেশী মুরগীর মত পালন করা যায় ।
৩। টার্কি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে আনুপাতিক হারে দ্রুত বাড়ে ।
৪। টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারন এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস,লতাপাতা,পোকা -মাকড় খেতে পছন্দ করে ।
৫। টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির সোভা বর্ধন করে ।
৬। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হতে পারে ।
৭। টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী । এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।
৮। টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
৯। টার্কির মাংসে ভিটামিন -ই অধিক পরিমাণে থাকে ।
টার্কি পালনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট ----
১। ডিম দেয়া শুরুর বয়স = ৩০ সপ্তাহ ।
২। পরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত = ১ :৫।
৩। বসরে গড় ডিম = ৮০ – ১০০ টি ।
৪। ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হয় = ২৮ দিনে ।
৫। ২০ সপ্তাহে গড় ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৪ – ৫ কেজি ।
৬। বাজারজাত করনের সঠিক সময় পুরুষ = ১৪ – ১৫ সপ্তাহ ।
স্ত্রী পাখী = ১৭ – ১৮ সপ্তাহ ।
৭। উপযুক্ত ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।
স্ত্রী পাখী = ৫ – ৬ কেজি ।
ডিম উৎপাদন –
সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে । প্রয়োজনীয় আলো বাতাস, পরিষ্কার পানি এবং খাবার সরবরাহ করা হলে বসরে ৮০ – ১২০ ডিম দিয়ে থাকে । ৬০ – ৭০ শতাংশ টার্কি মুরগী বিকেল বেলায় ডিম দেয় ।
মাংস উৎপাদন –
টার্কি দ্রুত মাংস উৎপাদনশীল একটি পাখী । দেশী হাস – মুরগীর মত সাধারন নিয়মে পালন করলেও ২৮ -৩০ সপ্তাহে প্রতিটি গড়ে ৫-৬ কেজি ওজন হয় ।
টার্কি পালন পদ্ধতি –
মুক্ত অবস্থায় ও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায় ।
একটি টার্কির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তালিকা নিচে দেয়া হলো –
বয়স ---------জায়গা (ব.ফু) --খাদ্যের পাত্র ( সে.মি) -- পানির পাত্র (সে.মি)
০-৪ সপ্তাহ –-- ১.২৫ – ব.ফু ২.৫- সে.মি ------------১.৫ সে.মি
৫-১৬ সপ্তাহ ২.৫ - ব.ফু----- ৫.০- সে.মি -----------২.৫ সে.মি
১৬-১৯ সপ্তাহ ৪.০ - ব.ফু ---৬.৫ – সে.মি---------- ২.৫ সে.মি
প্রজনন ক্ষম ৫.০ – ব.ফু -----৭.৫ – সে.মি---------- ২.৫ সে.মি
লিটার ব্যাবস্থাপনা ঃ
এই পদ্ধতিতে টার্কির জন্য সহজলভ্য দ্রব্য ব্যাবহার করা যায় । যেমন নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুরা, তুষ, বালি । প্রথমে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় । পরে আস্তে আস্তে আরো উপাদান যোগ করে ৩ - ৪ ইঞ্চি করলে ভালো হয় । লিটারে সব সময় শুকনো দ্রব্য ব্যাবহার করতে হবে । ভিজা লিটার তুলে সেখানে আবার শুকনো লিটার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ।
* খাবার –
টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য দুইটি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায় । যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং ।
একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো –
ধান --------------- ২০%
গম ---------------- ২০%
ভুট্টা --------------- ২৫%
সয়াবিন মিল ------- ১০%
ঘাসের বীজ -------- ৮%
সূর্যমুখী বীজ ------- ১০%
ঝিনুক গুড়া -------- ৭%
মোট = ১০০%
* সতর্কতা –
অন্যান্য পাখির তুলনায় টার্কির জন্য বেশী ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ, মিনারেলস দিতে হয় । কোন ভাবেই মাটিতে খাবার সরবরাহ করা যাবে না । সব সময় পরিষ্কার পানি দিতে হবে ।
* সবুজ খাবার –
সব সময় মোট খাবারের সঙ্গে ৩৫- ৪০% সবুজ ঘাস খেতে দেয়া ভালো । সে ক্ষেত্রে নরম জাতীয় যে কোন ঘাস দেয়া যেতে পারে । যেমন – কলমি, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা ইত্যাদি । একটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কির দিনে ১৪০ – ১৫০ গ্রাম খাবার দরকার হয় । যেখানে ৪৪০০ – ৪৫০০ ক্যালোরি নিশ্চিত করতে হবে ।
* প্রজনন ব্যাবস্থা –
একটি টার্কি মুরগীর জন্য ৪ – ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে । ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে ৩ বা ৪ টি মুরগী রাখা যেতে পারে । ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদান কালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ খাবার এবং বেশী পানি দিতে হবে ।
* বাচ্চা ফুটানো –
টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায় । তাছাড়া বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কিও ডিম উৎপাদন বেশী করে ।
* রোগ বালাই –
পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , মাইটস ও এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা বেশী দেখা যায় । পরিবেশ ও খামার অব্যাবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে.
টিকা প্রদান কর্মসূচি---
বয়স ----- রোগের নাম --------ভ্যাকসিনের নাম ------টিকা প্রদানের পদ্ধতি
২ দিন ----গামবোরো রোগ --গামবোরো ভ্যাকসিন (লাইভ)---চোখে ফোঁটা (প্যারেন্টস টার্কির টিকা প্রদান করা না থাকলে)
৩-৫ দিন--রানীক্ষেত রোগ ----বি, সি, আর, ডি, ভি ---দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্টস টার্কির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে)
৭ দিন --- ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি, ------------ চোখে ফোঁটা
১০-১৪ দিন--গামবোরো রোগ ---গামবোরো ভ্যাকসিন --এক চোখে ফোঁটা
২১-২৪ দিন--রানীক্ষেত রোগ ----বি, সি, আর, ডি, ভি --দুই চোখে ফোঁটা
২৪-২৮ দিন-গামবোরো রোগ --গামবোরো ভ্যাকসিন ---এক চোখে ফোঁটা
৩০ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি, ------------ চোখে ফোঁটা
৩৫ দিন--মুরগি বসন্ত -------ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ----- চামড়ার নীচে সুঁই ফুঁটিয়ে
৫০ দিন -----কৃমি -----------------কৃমির ঔষধ -----খাদ্য অথবা পানির সাথে
৬০ দিন --রানীক্ষেত রোগ --আর, ডি, ভি ---চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৭০ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস ---আই, বি ---চোখে ফোঁটা বা পানির সাথে
৮০-৮৫ দিন--কলেরা -ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন --চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৯০-৯৫ দিন--ইনফেকসাস করাইজা --আই, করাইজা ভ্যাকসিন -- চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১১০-১১৫ দিন--কলেরা-ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন-চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১৩০-১৩৫ দিন--ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রানীক্ষেত, এগড্রপসিনড্রম,সমন্বিত টিকা
----- চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
১৩০-১৩৫ দিন---কৃমি -------কৃমির ঔষধ --------খাদ্য অথবা পানির সাথে
তবে খেয়াল রাখতে হবে: প্রয়োজনবোধে খাদ্যের সাথে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য ককসিডিওস্ট্যাট ব্যবহার করতে হবে। ৫০ দিন বয়সে কৃমির ঔষধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৩০ থেকে ১৩৫ দিন বয়সে ঐ ঔষধ পুনরায় খাওয়াতে হবে।
তবে এই তালিকা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রোগের প্রার্দুভাবের ইতিহাস, টিকার প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নিজ নিজ খামারের জন্য নিজস্ব তালিকা প্রস্তত করতে হবে। টিকা সবসময় প্রস্ততকারীর নির্দেশমত ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সতর্কতাঃ-- কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না। টিকা প্রয়োগ করার পূর্বে টিকার গায়ে দেয়া তারিখ দেখে নিবেন। মেয়াদ উরতিন্ন টিকা প্রয়োগ করবেন না ।
এছাড়া নিয়ম মাফিক, পরিচ্ছন্ন খাদ্য ও খামার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক রোগ – বালাই এড়িয়ে চলা সম্ভব ।
* বাজার সম্ভবনা –
• টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে । পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে । যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু / খাসীর মাংস খায়না , টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প । তাছাড়া বিয়ে, বৌ –ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার । এবং গরু / খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম ।
• বানিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪/১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫/৬ কেজি । ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মুল্য দাঁড়াবে ২০০০/২৫০০ টাকা । ১৪/১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্বচ্চ খরচ পরবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা । তাহলে কম পক্ষে একটি টার্কি থেকে ৫০০ টাকা লাভ করা সম্ভব ।
• তবে মাংস হিসেবে বানিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কারন তাতে বড় বিনিয়োগের বেশী বেশী খামার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন । কিন্তু বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ৩/৪ বসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে । এবং সে ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাচ্ছে । ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা – বেচা চলছে ।
প্রশ্ন : এতো দামে টার্কি কিনে বা খামার করে লাভ করবো কিভাবে ? বেশী খামার গড়ে উঠলে এর মাংস বিক্রয় করবো কোথায় ?? এত দামে টার্কির মাংস মানুষ কিনবে ??
#CAJউত্তর : কেন কিনবে না ? অবশ্যই কিনবে, সঙ্গত কারণেই কিনবে. দেশী মুরগী যদি আমরা ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারি , তাহলে টার্কি কেন কিনবে না !! কারো যদি ৬ কেজি দেশী মুরগী প্রয়োজন হয়, তবে তাকে অন্তত ৫ টি মুরগী কিনতে হবে. আর এই ৫ টি মুরগীর ২০০ গ্রাম করে বর্জ্য বাদ দিলে মাংস পাবে ৫ কেজি.আর একই দামে একটি ৬ কেজি ওজনের টার্কি কিনলে তিনি মাংস পাবেন ৫ কেজি ৬০০ গ্রাম. তাহলে সমমূল্যে একটা টার্কি কিনলে মাংস অনায়াসে ৬০০ গ্রাম বেশী পাওয়া যাবে . স্বাদের কথা যদি বলি, দেশী মুরগীর তুলনায় এর মাংস অনেক বেশী উপাদেয়.
এরকম বেশ কিছূ সুবিধা রয়েছে টার্কির ক্ষেত্রে.
কিন্ত অধিকতর লাভ পেতে বেশী জরুরী জরুরী একে পরিচিত করে তোলা . প্রচার -প্রচারণা বৃদ্ধি , আর ২০১৪ সাল থেকে এই কাজটি করে চলেছি . এখন অনেকেই টার্কি চেনে , এর মাংসের স্বাদ জানে. অনেক খামার ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে. ইনশাল্লাহ্ ২০২০ সালের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পে টার্কি থাকবে শক্ত অবস্থানে .
আপনি কেন টার্কির খামার করবেন ??
• যারা বেকার বসে আছেন * যারা নতুন কিছু শুরু করতে চান * পোল্ট্রি ব্যবসা করে যারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন এবং আপনার স্থাপনা এখন কোন কাজে আসছে না * যারা কম ঝামেলা পূর্ণ কাজ পছন্দ করেন এবং ভালো আয়ের উৎস খুজছেন * যারা অল্প পুঁজি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা খুজছেন, টার্কির খামার তাদের জন্য আদর্শের । কারন হিসেবে #CAJঅভিমত – ১। একটি আদর্শ টার্কি খামার করতে খুব বেশী পুঁজির প্রয়োজন হয় না ।
২। অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় এর রোগ বালাই কম. কিছু নিয়ম মেনে চললে এই খামারে ঝুঁকি অনেক কম ।
৩। যেহেতু ৩৫-৪০% পর্যন্ত ঘাস খায় বা দেয়া যায়, তাই যেকোন পোল্ট্রির খাবারের তুলনায় খরচ কম ।
৪। খামারি পর্যায়ে পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে বাজার চাহিদা প্রচুর ।
৫। ডিম, বাচ্চা বা প্রাপ্ত বয়সের টার্কির উচ্চ মুল্য থাকায়, খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশী ।
* CAJ শেষ কথা -----
বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে অনেক জায়গা অনাবাদী/ পতিত অবস্থায় পরে থাকে । যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে রয়েছে বিভিন্ন ঘাস – লতা । এরকম উন্মুক্ত জায়গা টার্কি পালনের জন্য বেশী উপযোগী । কারণ এ জায়গা টার্কির চারণ ভুমি হিসেবে ব্যবহার করা যায় . অন্য দিকে আমাদের রয়েছে এক বৃহত্তর বেকার জনগোষ্ঠী । তাই একদিকে অব্যবহৃত জমিকে ব্যবহার এবং অন্যদিকে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান, এই দুই এর মাঝে সেতু বন্ধন হতে পারে ছোট একটি টার্কি খামার । ( লেখাটি লিখতে গিয়ে গুগল থেকে কিছু তথ্য নিয়েছি,বাকিটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা )
বি :দ্র : খামার করতে আগ্রহী হলে বাজার থেকে বা আমদানী করা বড় বা বাচ্চা পাখী ক্রয় করবেন না । অবশ্যই প্রকৃত খামারিদের কাছ থেকে পাখী সংগ্রহ করবেন । মনে রাখবেন, খামার করতে গেলে সুস্থ্য, রোগ মুক্ত পাখী সংগ্রহ করতে পারলে আপনার সফলতার হার বেড়ে যাবে .
#সকলের জন্য শুভ কামনায় ---চাষা আলামীন জুয়েল.
** টার্কির বাচ্চা বিক্রয়ের জন্য বুকিং নেয়া হচ্ছে ------
বাচ্চা ৪০ পিস,আজ ২০-০৩-২০১৭ ইং তারিখে বয়স ১৪ দিন , বাচ্চা ৭০ পিস.আজকে ২০-০৩-২০১৭ ইং তারিখে বয়স ৪দিন .
৭৫ দিন বা আড়াই মাস বয়স হলে ডেলিভারী দেয়া হবে . ডেলিভারী নেয়ার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই উপস্থিত হয়ে বাচ্চা বুঝে নিতে হবে. এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল টিকা সম্পন্ন করা হবে .৭৫ দিন বা আড়াই মাস বয়সের বাচ্চার নির্ধারিত মূল্য --২১৫০ টাকা প্রতি পিস .
*বুকিং: ৭৫% টাকা বুকিংয়ের সময় পরিশোধ করতে হবে.
মূল খামার ও হ্যাচারী - উল্লাপাড়া , সিরাজগঞ্জ.
#ডেলিভারীর স্থান -- গ্রাম + পোস্ট -লবণসারা, উপজেলা- বানারীপাড়া, জেলা - বরিশাল.
বিস্তারিত জানতে যোগোযোগ -- চাষা আলামীন জুয়েল.
মোবা: ০১৭১৬২২২৪৯১.

মন্তব্যসমূহ