চাল কুমড়া চাষের পদ্ধতি---
গ্রাম বাংলায় ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে মাচা পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন বেশি হয়। কচি কুমড়া (ঝালি) তরকারী হিসেবে এবং পরিপক্ক কুমড়া মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টিগুণ--- চাল কুমড়া পুষ্টিকর সবজি। চাল কুমড়ায় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
ঔষুধি গুণ-- চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে থাকেএবং এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ ভাল হয়।
জাতঃ
হাইব্রীড চালকুমড়া – হীরা – ৪৫১
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১-১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া সারা বছর বপন করা যায়। ফসল ৫০-৫৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাত, দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। প্রতি একরে ৩০-৩৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
উফ্শী চালকুমড়া – সবুজঃ
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ২-২.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া মাঘ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বপন করা যায়। ফসল ৬০-৬৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি চালকুমড়া ১০-১২ ইঞ্চি। এ জাতটি ভাইরাস, ডাউনি মিলডিউ এবং পাউডারিমিলডিউ সহনশীল। প্রতি একরে ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া ভৈরবীঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া শীত ব্যতীত প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২০-২৫ সেমিঃ লম্বা। প্রতি একরে ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া ওয়ান্ডারফুলঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫-২.০ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া চৈত্র হতে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২৫-৩০ সেমিঃ লম্বা। প্রতি গাছে ৮-১০ টি এবং প্রতি একরে ১৩-১৮ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া সুমাইয়াঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন, হাইব্রীড, পাকা চালকুমড়া সংরক্ষন উপযোগী এবং দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। চালকুমড়া লম্বাটে গোলাকার এবং সবুজ রং এর। ৪ x ৪ দূরত্বে বীজ রোপন করতে হয়। রোপনের ৫০ দিন পর কচি জালি সংগ্রহ করা যায়। প্রতি একরে ১২ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া জুপিটার এফ১:
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং গাঢ় সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ১৮-২০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।
চালকুমড়া পোলস্টার এফ১:
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং হালকা সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।
চালকুমড়া দূরন্তঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-৩০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন।
চালকুমড়া দূর্বারঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১-১.৫ কেজি। শীতকাল ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৪৫-৫০ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন ।
মাটিঃ বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
জমি / মাদা তৈরি:
ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে পরে মাদা তৈরি করতে হয়।
গর্ত তৈরিঃ ৭৫ সেঃ মিঃ (২.৫ ফুট) চওড়া ও ৬০ সেঃ মিঃ (২ ফুট) গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে।
রোপণের দূরত্বঃ ২-২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।
বীজ বপনঃ প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়। প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে ।
পরিচর্যাঃ প্রথমদিকে খরার সময় মাঝে মধ্যে সেচ দিলে ভাল হয়। বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বাওয়ার জন্য বাউনি মাচা দিতে হবে। মাঝে মাঝে কুপিয়ে মাটি আলগা করে গোড়ায় কিছু আলগা মাটি দিতে হয়। এতে আগাছাও দমন হয়।
কৃত্রিম পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধিঃ
চাল কুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায়।
কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে।
যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে। পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।
চাল কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। আথবা চাষি নিজে হাত পরাগায়ন করে দিলে ভালো ফলন আশা করা যায়।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র, সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ (শতাংশ হিসেবে)
ইউরিয়া ১০-১২ কেজি, টিএসপি ৮-১০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ ৩-৫ কেজি, জিপসাম ৩ কেজি, জিংক অক্সাইড ১০০-১৫০ গ্রাম,জৈব সার যত দেওয়া যায় তত ভাল।
সার ব্যবহারের নিয়মঃ ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগ বালাই :
কুমড়া চাষের প্রধান শত্রু "মাছি" পোকা। আবাদকৃত কুমড়ার ফুলে ও ফলে এই পোকা বসলে কুমড়া লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কুমড়া ঝড়ে পড়ে। এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা নিধন করা, পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা, পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং বিষটোপ ব্যবহার করা।
ফসল সংগ্রহঃ
চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।
তথ্য --সংগৃহীত ও সংকলিত .
#সকল কৃষক বন্ধুদের জন্য শুভকামনা----চাষা আলামীন জুয়েল.
গ্রাম বাংলায় ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে মাচা পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন বেশি হয়। কচি কুমড়া (ঝালি) তরকারী হিসেবে এবং পরিপক্ক কুমড়া মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টিগুণ--- চাল কুমড়া পুষ্টিকর সবজি। চাল কুমড়ায় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
ঔষুধি গুণ-- চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে থাকেএবং এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ ভাল হয়।
জাতঃ
হাইব্রীড চালকুমড়া – হীরা – ৪৫১
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১-১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া সারা বছর বপন করা যায়। ফসল ৫০-৫৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাত, দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। প্রতি একরে ৩০-৩৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
উফ্শী চালকুমড়া – সবুজঃ
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ২-২.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া মাঘ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বপন করা যায়। ফসল ৬০-৬৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি চালকুমড়া ১০-১২ ইঞ্চি। এ জাতটি ভাইরাস, ডাউনি মিলডিউ এবং পাউডারিমিলডিউ সহনশীল। প্রতি একরে ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া ভৈরবীঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া শীত ব্যতীত প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২০-২৫ সেমিঃ লম্বা। প্রতি একরে ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া ওয়ান্ডারফুলঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫-২.০ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া চৈত্র হতে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২৫-৩০ সেমিঃ লম্বা। প্রতি গাছে ৮-১০ টি এবং প্রতি একরে ১৩-১৮ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া সুমাইয়াঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন, হাইব্রীড, পাকা চালকুমড়া সংরক্ষন উপযোগী এবং দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। চালকুমড়া লম্বাটে গোলাকার এবং সবুজ রং এর। ৪ x ৪ দূরত্বে বীজ রোপন করতে হয়। রোপনের ৫০ দিন পর কচি জালি সংগ্রহ করা যায়। প্রতি একরে ১২ টন ফলন পাওয়া যায়।
চালকুমড়া জুপিটার এফ১:
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং গাঢ় সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ১৮-২০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।
চালকুমড়া পোলস্টার এফ১:
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং হালকা সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।
চালকুমড়া দূরন্তঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-৩০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি – আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন।
চালকুমড়া দূর্বারঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১-১.৫ কেজি। শীতকাল ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৪৫-৫০ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন ।
মাটিঃ বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
জমি / মাদা তৈরি:
ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে পরে মাদা তৈরি করতে হয়।
গর্ত তৈরিঃ ৭৫ সেঃ মিঃ (২.৫ ফুট) চওড়া ও ৬০ সেঃ মিঃ (২ ফুট) গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে।
রোপণের দূরত্বঃ ২-২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।
বীজ বপনঃ প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়। প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে ।
পরিচর্যাঃ প্রথমদিকে খরার সময় মাঝে মধ্যে সেচ দিলে ভাল হয়। বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বাওয়ার জন্য বাউনি মাচা দিতে হবে। মাঝে মাঝে কুপিয়ে মাটি আলগা করে গোড়ায় কিছু আলগা মাটি দিতে হয়। এতে আগাছাও দমন হয়।
কৃত্রিম পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধিঃ
চাল কুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায়।
কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে।
যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে। পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।
চাল কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। আথবা চাষি নিজে হাত পরাগায়ন করে দিলে ভালো ফলন আশা করা যায়।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র, সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ (শতাংশ হিসেবে)
ইউরিয়া ১০-১২ কেজি, টিএসপি ৮-১০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ ৩-৫ কেজি, জিপসাম ৩ কেজি, জিংক অক্সাইড ১০০-১৫০ গ্রাম,জৈব সার যত দেওয়া যায় তত ভাল।
সার ব্যবহারের নিয়মঃ ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগ বালাই :
কুমড়া চাষের প্রধান শত্রু "মাছি" পোকা। আবাদকৃত কুমড়ার ফুলে ও ফলে এই পোকা বসলে কুমড়া লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কুমড়া ঝড়ে পড়ে। এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা নিধন করা, পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা, পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং বিষটোপ ব্যবহার করা।
ফসল সংগ্রহঃ
চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।
তথ্য --সংগৃহীত ও সংকলিত .
#সকল কৃষক বন্ধুদের জন্য শুভকামনা----চাষা আলামীন জুয়েল.

মন্তব্যসমূহ