সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় "মাটি পরীক্ষার" গুরুত্ব--------

মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় "মাটি পরীক্ষার" গুরুত্ব--------

মাটির স্বাস্থ্য বলতে কি বোঝায়?
কথায় আছে-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। মানুষকে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করতে হলে শারীরিক ভাবে সুস্থ্য অর্থাৎ নিরোগ থাকতে হয়। তেমনিভাবে গাছ ও যেহেতু প্রধানত মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে, তাই মাটির স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে মাটির স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় মাটির বুনট, পানি ধারণ ক্ষমতা, জৈব পদার্থের পরিমান, মাটির উর্বরতা অর্থাৎ মাটিতে পুষ্টি উপাদান কেমন আছে ইত্যাদি বিষয়গুলো।



মাটি পরীক্ষা কেন করতে হয়?
মানুষের শরীরের বৃদ্ধির জন্য যেমন ভিটামিন ও খাবারের প্রয়োজন, তেমনি গাছের বৃদ্ধির জন্যও খাদ্যের দরকার। গাছের খাদ্য হচ্ছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সালফার, বোরন, জিংক ইত্যাদি । গাছ তার খাদ্য মাটি থেকে শিকড়ের সাহায্যে গ্রহণ করে বা খায়। মাটিতে যদি পুষ্টি উপাদান কম থাকে তাহলে গাছের বৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটে ও ফলন কম হয়। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মাটিতে আছে কিনা তা জানতে হলে আগে জানতে হবে মাটিতে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাটিতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ জানা যায়।

কৃষক ভাইয়েরা সাধারণত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে জমিতে সার দিয়ে থাকেন৷ ফলে কোন সার বেশী, কোন সার কম দিয়ে থাকেন। যেমন আমরা সার বলতে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সারকেই বুঝে থাকি ও ফসল চাষের ক্ষেত্রে এই তিনটি সারই বেশী ব্যবহার করে থাকি। ক্রমাগত রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ফলে জমির উবর্রতা ও ফসল উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কিন্তু মাটি পরীক্ষার পর সঠিক নির্দেশনা মতো সার প্রয়োগ করলে সারের অপচয় কম হয় ও ফলন বৃদ্ধি পায়। সারের অপচয় কমে যায় বিধায় ব্যয় কম হয় এবং পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগের ফলে রোগ - পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যায় ।ফলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত সার ব্যবহার বা প্রয়োগ করলে তা পানির সাথে মিশে পুকুর, ডোবা, নালায় পরে ও কিছু বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে মাটির সাথে মিশে যায়। যা থেকে মাটি ও পানি দূষীত হয়। মাটি পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগের ফলে একদিকে যেমন মাটি-পানি দূষন মুক্ত থাকে, অন্যদিকে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, মাটি উর্বর হয়, মাটির পরিবেশ ফসল আবাদের উপযোগী থাকে।

মাটির নমুনা সংগ্রহের নিয়ম কি?
মাটির নমুনা বলতে বোঝায় কোন জমি থেকে সংগৃহীত কিছু মাটি, যা পরীক্ষা করলে ঐ জমির সমস্ত মাটির গুণাগুণ কেমন আছে তা বোঝা যায়। মাটির নমুনা সংগ্রহের কিছু নিয়ম আছে সেগুলো হলো-
১. মাটির নমুনা সংগ্রহের জন্য অগার যন্ত্র বা নিড়ানী বা কোদাল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. জমির আইল হতে ২-২.৫ মিটার ভিতরের অংশের জমি হতে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে ৷ নির্বাচিত অংশের ১০-১২টি স্থান হতে এক কোদাল করে মোট ১০-১২ টি উপ-নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
৩. খামার জাত ফসলের জমির ০-১৫ সেন্টিমিটার (০-৬ ইঞ্চি) গভীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। আঁখ, ফলজ বৃক্ষ ও বনজ বৃক্ষের জমির জন্য ০-৩০ সেন্টিমিটার (০-১২ ইঞ্চি) গভীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
৪. কোদালের সাহায্যে লাঙ্গল স্তর হতে "ঠ" আকারের মাটির টুকরো সংগ্রহ করতে হবে। মাটির টুকরোর উপরিতল ৭-৮ সেন্টিমিটার পুরু হতে হবে।
৫. জমি হতে সংগ্রহীত উপ-নমুনাগুলো একত্রে মিশাতে এবং গুড়া করতে হবে। নমুনা সংগ্রহের পর তা থেকে আগাছা, গাছের শিকড় ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।
৬. মিশ্রিত মাটি পলিথিন সীটে রেখে সমান চার ভাগে ভাগ করতে হবে। এই চার ভাগ হতে যেকোন দুই কোনার দুইভাগ নিয়ে আবার মিশাতে হবে। বাকি দুইভাগ মাটি ফেলে দিতে হবে। মিশ্রিত মাটি আবারো সমান চার ভাগে ভাগ করতে হবে ৷ এভাবে একই নিয়মে ততক্ষণ ভাগ করতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ৪০০-৫০০ গ্রাম মাটি পাওয়া যায়।
৭. এর পর নমুনাগুলো পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্থানে পলিথিন বা খবরের কাগজের উপর সুন্দরভাবে ছড়িয়ে বাতসে শুকাতে হবে। আগুনে বা রোদে মাটি শুকানো ঠিক না। শুকানোর পর সংগ্রহীত নমুনা মাটি পলিথিন সীটে রেখে মুগুর বা কাঠের হাতুরি দ্বারা মাটির ঢেলা ভেঙ্গে গুড়া করতে হবে।
৮.এভাবে প্রস্তুতকৃত ৫০০ গ্রাম মাটি পলি ব্যাগে রেখে শক্ত করে ব্যাগের মুখ বেধে দিতে হবে। এরপর মাটি পরীক্ষার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস বা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এ নিয়ে যেতে হবে।

মাটি পরীক্ষার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে?
মাটি পরীক্ষার জন্য কাছের উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সেখানে বিনামূল্যে মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর বিভিন্ন গবেষণাগারেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ভ্রাম্যমান মাটি পরীক্ষার গাড়ি বিভিন্ন উপজেলাতে অবস্থান করে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সময়সূচী আগে থেকে জেনে নিয়ে সেখানে নামমাত্র মূল্যে মাটির বিস্তারিত গুনাগুণ পরীক্ষা করা যায়। আরেকটি কথা গুরুত্বপূর্ণ । তাহলো প্রতিটি পরীক্ষার পরই কিন্তু সার সুপারিশপত্র বা সারের প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়। যা মেনে চললে কৃষক ভাইয়েরা নিশ্চিতভাবে লাভবান হতে পারেন।

তথ্য: ( সংগৃহীত ও সংকলিত )
#সকল চাষি ভাই-বোনদের জন্য শুভ কামনায়----- চাষা আলামীন জুয়েল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা:,

সবজি ও ফল চাষের বারো মাসের পঞ্জিকা- - আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু বা মৌসুম ছ’টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি- খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মত প্রতিদিনের কাজ গুলোকে সাজিয়ে নিবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।  ক্লিক করুন: বেগুন চাষ পদ্ধতি : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/caj.html পশু পাখি ও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় : https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post.html https://smartfarmeralaminjuel.blogspot.com/2020/01/blog-post_22.html বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে): লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপন এর উত্তম সময় . সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করতে হবে । মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে . কুমড়া জাতীয় সব...

পরিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায় :

পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ--- আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি------- #উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, অভুতপূর্ব সারা ...

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

পোল্ট্রি খামারি বন্ধুদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর : #মুরগীর রানীক্ষেত ঠেকাতে কি করবো ---? CAJউত্তর : প্রতিষেধক : বাচ্চাদের ৫-৭ দিন বয়সে বিসিআরডিবি টিকা চোখে ফোঁটা আকারে দিতে হবে। ২১ দিন বয়সে এবং ৬ মাসের বড় মোরগ-মুরগির জন্য আরডিভি ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ১০০ মুরগির জন্য ১ টি ভায়াল যথেষ্ট। চিকিতসা : অক্সি টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ যেমন : রেনামাইসিন, বেক্টিট্যাব, টেট্রাভেট, টেকনোমাইসিন ডিএস যেকোনো একটি ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ টি মুরগিকে ৩ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে। #মুরগির ই করাইজা (ঠান্ডা রোগ) হলে কী করবো--? CAJউত্তর : ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাতে ভাব দূর করতে হবে, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, লিটার সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে। আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ডক্সিসাইক্সিন : ১ গ্রাম ২ থেকে ৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং Ciprotrojin পাউডার: ১ লিটারে পানিতে ১ গ্রাম পরিমাণে ৫ দিন ধরে দিতে হবে। #মুরগির কলেরা হয়েছে (জ্বর থাকে,  প্রথম দিকে সবুজ ও সাদা পাতলা পায়খানা করে), কী করতে হবে--? CAJউত্তর: প্রথমত আক্রান্ত মুরগিকে দ্রুত আলাদা করে ...